সুকুমার সরকার, ঢাকা: দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন ভারতের বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। দু’দেশের মধ্যে করোনা ভ্যাকসিন ও কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও পোক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গিয়েছে। করোনা মহামারী মোকাবিলায় সহযোগিতা এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সার্বিক বিষয় নিয়ে আগামীকাল বুধবার বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশ ও ভারতের বিদেশ সচিব। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশের বিদেশ সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা সফরে এসেছেন ভারতের বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। তবে এদিন বিদেশমন্ত্রকের কারও সঙ্গেই তিনি সাক্ষাৎ করেননি। বুধবার দুপুরে ঢাকায় বিদেশমন্ত্রকে বিদেশ সচিবের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ভারতের বিদেশ সচিবের সফর ও বৈঠক সম্পর্কে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক বহুমুখী। সহযোগিতার সম্পর্কের ভেতরে অনেক বিষয় থাকে। এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের সফর হতে পারে এবং অতীতেও হয়েছে। এ জন্য ভারতের সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সফরকে আকস্মিক বলা যাবে না। এটা নিয়মিত সফরের অংশ।” কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি না হলে এবং স্বাভাবিক অবস্থা থাকলে ভারতে একাধিকবার তাঁর সফর হত বলেও জানান বাংলাদেশ বিদেশ সচিব। তিনি বলেন, “ভারতের বিদেশ সচিব প্রায় ছয় মাস আগে ঢাকায় এসেছেন এবং এরমধ্যে স্বাভাবিকভাবেই তার দ্বিতীয়বার আসার সময় হয়ে গিয়েছিল। করোনার কারণে কিন্তু ইস্যুগুলো থেমে থাকছে না। এ ছাড়া কোভিড-১৯ একটি বড় ইস্যু এবং এখানে সহযোগিতার বিষয় আছে।”
আগামীকাল বুধবারের বৈঠকে আলোচনায় কি বিষয় স্থান পাবে জানতে চাইলে বিদেশ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, “দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার সার্বিক বিষয়গুলোই বৈঠকে আলোচিত হবে। তবে এ সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় আলোচনায় আসবে। যেমন ভারতীয় ওষুধ কোম্পানি করোনার প্রতিষেধক টিকা উৎপাদন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে এবং এ বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব। এমনও হতে পারে বাংলাদেশেও এই টিকা বানানো যেতে পারে। এ বিষয়টির জন্য ভারত থেকে প্রচুর টেকনিশিয়ান ও বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশে আসছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকেও অনেক মানুষের ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন আছে। বিশেষ করে চিকিৎসার কারণে অনেক মানুষ ভারতে যায় এবং কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে তারা এখন যেতে পারছেন না। বৈঠকে এ বিষয়টি তুলে ধরা হবে। যেন বাংলাদেশ যেমন প্রয়োজন অনুযায়ী ভারতের নাগরিকদের আসতে দিচ্ছে, তেমনি বাংলাদেশের নাগরিকদেরও যেন ধীরে ধীরে ভারতে যেতে দেওয়া হয়।” এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এই সফরে ভারতের জাতীয় নিবন্ধনের মত বিষয়গুলি মনে হয় না আলোচনায় আসবে। ভারতের পক্ষ থেকে কোনও বিষয় উত্থাপন করা হলে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে, তবে সিদ্ধান্ত বা কোনও বিষয় মীমাসিংত হওয়ার মত কিছু থাকবে না। বাংলাদেশ বিদেশ সচিব আরও বলেন, সম্প্রতি নন-ইস্যুগুলো অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের দেখা করার বিষয় নিয়ে যেসব খবর ছাপা হয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই। আসলে করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী কারও সঙ্গে দেখা করছেন না। বিদেশিদের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। এ ব্যাপারে গত সোমবার একটি নির্দেশনা পাওয়া গেছে, সেপ্টেম্বর থেকে রাষ্ট্রদূতদের দেখা করার বিষয়টি স্বাভাবিক করার জন্য। যেসব দেশের রাষ্ট্রদূতদের দেখা করার অনুরোধ জমে রয়েছে তাদের সবার সঙ্গে পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রী দেখা করবেন।
এদিকে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি-সহ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ৮৪৫ কোটি ৫৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বারৈয়ারহাট-হোঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলানগর এনইসি সভাকক্ষে একনেক চেয়ারপার্সন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন। সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।৮৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ভারতীয় ক্রেডিট লাইনের ঋণের অংশ হিসেবে ৫৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ ও ভারতের ত্রিপুরার মধ্যে সংযোগ সড়ক তৈরি হবে এবং দুইদেশের সড়ক উন্নয়ন করা হবে। রামগড় সীমান্তে একটি সীমান্ত হাট বসানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.