সুকুমার সরকার, ঢাকা: ঢাকার বঙ্গবাজারের পর এবার আগুনের লেলিহান শিখায় সর্বশান্ত বাংলাদেশের উত্তরের জনপদ জেলা গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর হাটের ব্যবসায়ীরা। ২৬টি দোকানের পাশাপাশি অন্তত চারটি বাড়ির বাসিন্দারাও পথে বসেছেন। শুক্রবার সকালে দমকলের ছ’টি ইঞ্জিন প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে হতাহতের কোনও খবর নেই। দমকল কর্মীদের প্রাথমিক ধারণা, বাড়ির উনুন থেকেই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত।
এদিকে ইদের আগে করুণ অবস্থা বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীদের। মহানগরী কমপ্লেক্সে পাঁচটি ও আদর্শ মার্কেটে একটি দোকান ছিল শাহেদুল ইসলামের। এক্সপোর্টের প্যান্ট, থ্রি-কোয়ার্টার, টু-কোয়ার্টার বিক্রি করে ভালই চলছিল তাঁর দিন। অভাব অনটন ছিল না সংসারে। কিন্তু হঠাৎ লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে তাঁর জীবন। বঙ্গবাজারে লাগা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে শাহেদুলের ছ’টি দোকান। শেষ সম্বল বলতে আছে শুধু বরিশাল প্লাজার গোডাউনে থাকা কিছু প্যান্ট। পেট চালাতে তাই সেসব প্যান্টই বিক্রি করতে রাস্তার ধারে বসেছেন তিনি। শুধু শাহেদুল নয়, তাঁর মতো আরও অনেক নিঃস্ব ব্যবসায়ী তাঁদের শেষ সম্বল নিয়ে রাস্তার পাশে বসেছেন। উদ্দেশ্য, ইদের আগে যতটুকু সম্ভব, সংসারটা টানা।
শুক্রবার দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার মার্কেটের মাঝে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে রাস্তার উপর প্লাস্টিক বিছিয়ে বিভিন্ন ধরনের পোশাক নিয়ে বসেছেন অন্তত ১২-১৫ জন ব্যবসায়ী। কেউ বিক্রি করছেন প্যান্ট, কেউ শার্ট, কেউবা পাঞ্জাবি। কেউ পোশাক এনেছেন বেঁচে যাওয়া গোডাউন থেকে, কেউবা নতুন করে কিনেছেন। একেকজন একেকভাবে বসলেও তাঁদের সকলেরই দোকান পুড়েছে আগুনে।
বঙ্গবাজারের প্রত্যেক দোকানেই ছিল বিপুল পরিমাণ রেডিমেড কাপড়। রাস্তার পাশে শিশুদের শার্ট বিক্রি করতে বসেছেন মহম্মদ সোহেল। দৈনিক ২০০ টাকা ভাড়ায় একটি ভ্যান নিয়ে সেসব শার্ট বিক্রি করছেন তিনি। তাঁর বাড়ি নোয়াখালি জেলার কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায়। ইউনিক কালেকশন নামের বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে একটি দোকানের কর্মচারী ছিলেন। আগুনে সেই দোকান না পুড়লেও জলে নষ্ট হয়ে গিয়েছে জিনিসপত্র। তিনি বলেন, ওই দোকানে তাঁরা ছ’জন কর্মচারী ছিলেন। আগুনে ও জলে তাঁদের দোকানের অনেক টাকার পণ্যের ক্ষতি হয়েছে। আরেক ব্যবসায়ী মহম্মদ সাদ্দাম হোসেন বলেন, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের গুলিস্তান ইউনিটে ১৩৭৮-৭৯ নম্বর দোকান ছিল। আগুনে সব পুড়ে শেষ। এখন পেটের দায়ে পরিচিত কারখানা থেকে পাঞ্জাবি এনে এখানে রাস্তার ধারে বসে বিক্রি করছেন। আগে যেখানে প্রতিদিন ৪-৫ লক্ষ টাকার পাঞ্জাবি বিক্রি করতেন, সেখানে ৫০ হাজারও করতে পারবেন কি না সন্দেহ। সব মিলিয়ে ইদের আগে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.