সুকুমার সরকার, ঢাকা: বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত তরুণী শামিমার মতো শিশুসন্তান নিয়ে সিরিয়ার ক্যাম্পে আটকে থাকা আরও দুজন জেহাদি বধূর নাগরিকত্ব বাতিল করেছে ইংল্যান্ড। সিরিয়ার ক্যাম্পে আটকে থাকা শামিমা বেগমের শিশুসন্তানের মৃত্যুর ঘটনার পরই এই তথ্য জানা গেল, যারা তথাকথিত ইসলামিক স্টেটে যোগ দিয়েছিল এবং যুক্তরাজ্য তাদের নাগরিকত্ব বাতিল করেছে।
আইনি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে সানডে টাইমস বলছে, ওই মহিলাদের নাম রিমা ইকবাল এবং তার বোন জারা। দুজনেই পূর্ব লন্ডনের বাসিন্দা ছিল। ইংল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, তারা আলাদা করে কোন ঘটনার ওপর মন্তব্য করে না। সেখানে আরও বলা হয়েছে, কারওর নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত তথ্যপ্রমাণের ওপর ভিত্তি করেই নেওয়া হয়ে থাকে, যা হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। এই ক্ষমতার ব্যবহার সম্প্রতি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। অভিবাসন বিষয়ক ওয়েবসাইট ফ্রি মুভমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র দপ্তরের হিসেবে ২০১৭ সালে ১০৪ জনের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়। যা আগের এক দশকে ছিল মাত্র ৫০টি। এর মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা এবং আল-কায়দার মতো গোষ্ঠীকে সমর্থন করার মতো অভিযোগ যেমন রয়েছে, তেমনি রোচডেল গ্রুমিং গ্যাংয়ের মতো অপরাধী চক্রে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে।
[অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে মৃত্যু জেহাদি বধূ শামিমার অন্তিম সন্তানের ]
সানডে টাইমস বলছে, বর্তমানে ৩০ বছরের রিমা আর ২৮ বছরের জারা সিরিয়ায় পৃথক দুইটি শরণার্থী ক্যাম্পে বাস করছে। যেখানে জেহাদিদের নিয়ন্ত্রিত সাবেক এলাকাগুলো থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার শরণার্থী রয়েছে। এই দুই বোনের পাঁচটি সন্তান রয়েছে, যাদের সবার বয়স আট বছরের নিচে। এই বোনদের পিতামাতা পাকিস্তান থেকে যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন। তবে তাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
[অভিনব উদ্যোগ, সংসারে শান্তি বজায় রাখতে শাশুড়ি-বউমা সমাবেশ]
সানডে টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, এই বোনরা ২০১৩ সালে সিরিয়ার উদ্দেশে যুক্তরাজ্য ছাড়েন এবং তার আগেই আইএসের এমন যোদ্ধাদের বিয়ে করেন, যাদের বিরুদ্ধে পশ্চিমা জিম্মি হত্যা এবং ভিডিও করার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য রয়েছে। যুক্তরাজ্যে থাকার সময় জারার একটি সন্তান হয়। সিরিয়ায় যাবার সময়ও গর্ভবতী ছিল জারা। সিরিয়ায় গিয়ে সে তৃতীয় সন্তানের মা হয়। রিমার একটি সন্তানের জন্ম হয় যুক্তরাজ্যে, অপর জনের সিরিয়ায়। অনেকটা একই ধরনের ঘটনায় তথাকথিত ইসলামিক স্টেটের জেহাদি বধূ শামিমা বেগমের বিষয়টি নিয়ে এখন সমালোচনার মুখে পড়েছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে শামিমা বেগমের শিশুর মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরেই এই সমালোচনা শুরু হয়েছে। মেডিক্যাল সার্টিফিকেট অনুযায়ী, নিউমোনিয়ায় মারা গিয়েছে শামিমা বেগমের তিন সপ্তাহ বয়সী শিশুসন্তান। ইসলামিক স্টেট বাহিনীতে যোগ দিতে শামিমা বেগম ১৫ বছর বয়সে লন্ডন ছেড়ে সিরিয়ায় যায়। তারপর এই টিনএজার যখন ফিরে আসার ইচ্ছার কথা প্রকাশ করে তখন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাভিদ তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা জানান।