সুকুমার সরকার, ঢাকা: গত মে মাসে কেরলে গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন এক বাংলাদেশি তরুণী। টিকটক স্টার বানানোর লোভ দেখিয়ে তাঁকে ভারতে পাচার করে দেওয়া হয়েছিল। তবে এই ঘটনা হিমশৈলের চূড়ামাত্র। তদন্তে জানা গিয়েছে, পাচারচক্রের ফাঁদে পড়েছে বাংলাদেশের বহু শিশু ও মহিলা। এহেন পরিস্থিতিতে কিছুটা আশা জাগিয়ে এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে গত দশ বছরে দেশে ফিরেছেন ভারতে পাচার হওয়া ২ হাজার মহিলা।
ভারতে পাচার হওয়া মহিলাদের ফিরিয়ে আনার কাজ করছে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি ও রাইটস যশোর নামের দুই বেসরকারি সংস্থা। তাঁরা জানিয়েছে, ভারতে পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর সেখানকার সরকারি ও বেসরকারি সেফহোমে এখনও ৫০ জনের বেশি বাংলাদেশি মহিলা রয়েছেন। নয়াদিল্লি ও ঢাকার যৌথ উদ্যোগে তাঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। বিগত ১০ বছরে ভারতে পাচার হওয়া ২ হাজার মহিলাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে পাচারকারীদের শিকার হওয়া মহিলা ও শিশুর প্রকৃত সংখ্যা কত, দেশটিতে কতজন নারী এখনও চক্রের হাতে আটকে রয়েছেন, সে তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ থেকে কত মানুষ পাচারের শিকার, কত মামলা-এসব তথ্য এখন আর পুলিশ সদর দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় না। তবে একটি পরিসংখ্যান পাওয়া যায় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির কাছ থেকে। তারা পুলিশ সদর দপ্তরের বরাত দিয়ে জানায়, ২০০৮ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পাচারের ঘটনায় দেশে ও দেশের বাইরে ৬ হাজার ৭৩৫টি মামলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে কেরলে এক বাংলাদেশি তরুণীর নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। তারপর একাধিক অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে স্থানীয় পুলিশ। তদন্তে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় লালন শাহ মাজারে আয়োজিত টিকটিক হ্যাংআউটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ওই তরুণীকে চক্রের অন্যদের সহায়তায় সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করে দেয় হৃদয়। ওই তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, ভারতে পাচারের পর তাঁকে বেঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায় পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বাড়িতে রাখা হয়। এ সময় ভারতে এই চক্রের দ্বারা পাচার হওয়া আরও কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণীকে সেখানে দেখতে পান নির্যাতিতা। তাদের সুপার মার্কেট, সুপার শপ বা বিউটি পার্লারে ভাল বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়। অবশেষে, আইনি পথে নির্যাতিতকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.