Advertisement
Advertisement

Breaking News

Uluberia

অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ভ্যান টানছে কিশোরী! উলুবেড়িয়ার ঝিলিকের পাশে দাঁড়ালেন বিডিও

স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের মাধ্যমে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিডিও।

11 years old girl is pulling trolley van with her sick father in Uluberia, BDO helps the poor family | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:December 11, 2021 10:01 pm
  • Updated:December 11, 2021 10:06 pm

মনিরুল ইসলাম, উলুবেড়িয়া: দু’টি হাতের দশটি আঙুল গিয়েছে বেঁকে, পা দুটি সরু লিকলিকে।বসে থাকারই ক্ষমতা নেই। ট্রলি ভ্যানের উপর কম্বল জড়িয়ে শুয়ে বছর তেতাল্লিশের সুশান্ত মণ্ডল। আর কচি হাতে ট্রলি ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরে টানছে সুশান্তর বছর এগারোর মেয়ে ঝিলিক। আর পিছন থেকে ভ্যান ঠেলছেন তাঁর স্ত্রী শ্যামলীদেবী। পেটের খিদে মেটাতে অসুস্থ সুশান্তকে ট্রলি ভ্যানে শুইয়ে  ঘর ছেড়ে পথে নেমেছে গোটা পরিবার। বাবাকে ভ্যানের উপর শুইয়ে মাইলের পর মাইল পথ হাঁটছে তারা। উলুবেড়িয়া (Uluberia) শহরের অলিগলি রাস্তায়  কচি হাতে ভ্যান টেনে চলেছে ঝিলিক। হাত পাতছে পথ চলতি মানুষের কাছে -“বাবু গো সাহায্য করুন”। তবে এই কষ্টের জীবন আর বেশিদিনের নয়। উলুবেড়িয়ার ঝিলিকের দুর্দশা ঘোচাতে পাশে দাঁড়ালেন বিডিও (BDO) নীলাদ্রিশেখর দে। তিনিই সমস্ত আর্থিক সাহায্য দিয়ে এই পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেন।

শনিবার সকালে অসুস্থ স্বামীকে ভ্যানে শুইয়ে রামচন্দ্রপুর থেকে প্রায় বারো কিলোমিটার দূরে উলুবেড়িয়ার কালসাবা এলাকায় চলে আসেন শ্যামলী। পড়ন্ত বেলায় বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিল ঝিলিক। রাস্তায় তাকে এভাবে ভ্যান টানতে দেখে দাঁড়িয়ে পড়েন অনেকেই। সবাই সাধ্যমতো সাহায্য তুলে দেন ঝিলিকের হাতে। তবে তাতে কি আর দৈনন্দিন জীবনের লড়াইয়ের অবসান ঘটে?

Advertisement

[আরও পড়ুন: ফাঁকা গাড়িতে একা শুয়ে লাস্যময়ী যুবতী, তল্লাশি করতেই মিলল লক্ষ-লক্ষ টাকার জালনোট]

উলুবেড়িয়া এক নং ব্লকের হীরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ছোট রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা সুশান্ত মণ্ডল। পেশায় দিন মজুর সুশান্তের জীবনে সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল আর পাঁচটা দিন আনি দিন খাই পরিবারের মতো। ১৯ বছর আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সুশান্ত। আক্রান্ত হন আর্থারাইটিসে। ক্রমশ খারাপ হতে থাকে সুশান্তের শরীর। এক সময় হাতের সমস্ত আঙ্গুল বেঁকে যায়। পা দুটিও ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে পড়ে। চলা ফেরার শক্তি হারিয়ে ফেলে সুশান্ত।

Advertisement
Uluberia
ঝিলিকের বাড়িতে বিডিও।

শনিবার বিকেলে ফুলেশ্বর স্টেশনের পাশে ট্রলিতে শুয়ে সুশান্ত বলেন,  ”দিনমজুরি করে কোনো রকমে চলছিল সংসার। আমার অসুস্থতার পর আর সংসার চলছে না। লকডাউনের পর থেকে অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। কোনো কোনো দিন আধপেটা খেয়ে দিন কাটে পরিবারের সবার‌।” স্বামীকে সারাদিন নিয়ে ঘুরে ভিক্ষা শেষে কালসাবা বাজারের কাছে মুড়ি খেতে খেতে শ্যামলী বলছেন, ”স্থানীয় একটা স্কুলে মাঝে মধ্যে মিড ডে মিলের রান্নার কাজে সহায়তা করার জন্য ডাক পেতাম। কিন্তু লক ডাউনের জন্য স্কুল বন্ধ, তাই আর ডাক আসে না।”

কথার ফাঁকে জানা গেল যে ট্রলি ভ্যানে সুশান্ত কে শুইয়ে নিয়ে ভিক্ষা করতে বের হন শ্যামলী, সেটি গ্রামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়া করা। ভাড়া হিসেবে তাকে ৩০ টাকা করে দিতে হয়। এক সময় ট্রলি ভ্যানে স্বামীকে শুইয়ে নিজেই ট্রলি ভ্যান চালাতনে শ্যামলী। হাঁপিয়ে উঠতেন। তাই মায়ের কষ্ট দেখে শেষ পর্যন্ত ট্রলি ভ্যান চালানো শিখে নেয় বাঁইখালী হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ঝিলিক মণ্ডল। এখন অসুস্হ বাবাকে নিয়েই পথে বের হয় ঝিলিক। শুধু কি ভিক্ষা করেই চলে সংসার? সে প্রশ্নের উত্তরে কা়ঁদো কাঁদো সুরে সুশান্ত জানান, তাঁর বৃদ্ধা মা কালীতারা মণ্ডল উলুবেড়িয়ায় লোকের বাড়িতে কাজ করেন। তাঁর যৎসামান্য রোজগারেই কোনওক্রমে চলছে। 

[আরও পড়ুন: পেটখারাপ-বমিতে মৃত্যু বালিকার, হাসপাতালে ভরতি বহু, ডায়রিয়া আতঙ্ক জিয়াগঞ্জে]

তবে এদিন ঝিলিকের ভ্য়ান টানার দৃশ্য নজর কেড়েছে সকলের। স্থানীয়দের মাধ্যমেই সেই খবর পৌঁছয় বিডিও নীলাদ্রিশেখর দে’র কাছে। তিনি এদিন সন্ধ্য়ায় ঝিলিকদের বাড়ি গিয়ে পাশে দাঁড়ান। ঝিলিকের পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি সুশান্তবাবুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। শ্যামলীদেবীর নামে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে। সেই কার্ডের মাধ্যমে চিকিৎসার বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ