ছবি: জয়ন্ত দাস।
ধীমান রায়, কাটোয়া: তাঁরা দু’জন রোজ স্কুলে আসেন। ঝাঁটপাট দেন। তারপর স্কুলের অফিসরুমে বসে কিছুক্ষণ বসে গল্পগুজব করেন। চা টিফিন খান। তারপর যথাসময়ে আবার স্কুলের গেটে তালা দিয়ে বাড়ি চলে যান। পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের গঙ্গাটিকুরি জুনিয়র হাইস্কুলের দুই শিক্ষকের রোজনামচা হল এটাই। এই স্কুলে শোনা যায় না ঘন্টার শব্দ। হয় না ক্লাস। নেই কোনও পরীক্ষার পর্ব। স্কুলে নেই পড়ুয়াদের কোলাহল। কারণ, দুই শিক্ষকের স্কুলে নেই কোনও পড়ুয়া।
পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম ২ ব্লকের গঙ্গাটিকুরি গ্রামে জুনিয়র হাইস্কুলটি ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। জনবহুল এলাকা। তাই এলাকায় শিক্ষার প্রসারে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের জন্য এই স্কুলের অনুমোদন দিয়েছিল রাজ্য সরকার। তিন কাঠা জমির ওপর স্কুলের ভবন নির্মাণ করা হয়। রয়েছে তিনটি শ্রেণিকক্ষ, একটি অফিসরুম এবং মিড ডে মিলের জন্য আলাদা ঘর। স্কুলে রয়েছেন দুজন শিক্ষক। রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল ও নুরুল আমিন নামে ওই দুজনেই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তারা স্কুলে অতিথি শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত রয়েছেন। রবীন্দ্রনাথবাবুর বাড়ি কাটোয়া। নুরুল আমিনের বাড়ি কেতুগ্রামের কুমোরপুর।
এবছর দেখা যায় গঙ্গাটিকুরি জুনিয়র হাইস্কুলে নেই কোনও পড়ুয়া। পুরো স্কুল খাঁ খাঁ করছে। দুই শিক্ষক অবশ্য নিয়ম মেনে স্কুলে আসছেন। তারা দুজন বসে গল্প করে সময় কাটান। তারপর বাড়ি চলে যান। অফিসের কিছু কাজকর্ম করলে সারেন। স্কুলের টিচার ইনচার্জ রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন,” গতবছর আমাদের স্কুলে ৭ জন পড়ুয়া ছিল।২০২১ সালে ছিল ১৭ জন। এবছর পড়ুয়ারা টি সি নিয়ে চলে যায়। আর কেউ ভর্তি হয়নি। এখন কোনও পড়ুয়া নেই। আমরা দু চারজন অভিভাবকদের অনুরোধ করেছিলাম যাতে তারা আমাদের স্কুল থেকে বাচ্চাদের না নিয়ে যান। কিন্তু তারা শোনেননি।”
কিন্তু অভিভাবকরা কেন এই জুনিয়র হাইস্কুলে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াতে রাজি নন? স্থানীয় গ্রামবাসী গায়ত্রী মণ্ডল, উৎপল বৈরাগ্যরা বলেন,” জুনিয়র হাইস্কুলে দু’জন গেষ্ট টিচার রয়েছেন। স্থায়ী শিক্ষক কেউ নেই। মাত্র দু’জন শিক্ষক যে স্কুলে রয়েছে সেখানে খুব ভালো পঠনপাঠন হবে মনে হয় না। তাই আমরা ছেলেমেয়েদের হাইস্কুলে ভরতি করে দিয়েছি।”
স্কুলে ক্লাসরুম যেন খাঁ খাঁ করছে। ব্ল্যাকবোর্ডে এখনও চকে লেখা ক্লাস রুটিন। ধুলো জমেছে বেঞ্চে। স্কুলজুড়ে নিস্তব্ধ পরিবেশ। জানা গিয়েছে গঙ্গাটিকুরি জুনিয়র হাইস্কুল শুরুর দিকে শতাধিক পড়ুয়া ছিল। তারপর থেকে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে কমতে থাকে। এবছর পড়ুয়া শূন্য স্কুল। কেতুগ্রাম ২ বিডিও অমিত সাউ বলেন,” বিষয়টি শুনেছি। গতবছর কিছু ছাত্রছাত্রী ছিল। এবছর কেউ ভর্তি হয়নি। কারণ অভিভাবকরা তাদের ছেলেমেয়েদের ভরতি করতে চাইছেন না। এনিয়ে স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। স্থানীয় অভিভাবকদের সঙ্গেও কথা বলব।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.