বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: এদিকে ১৪ দিন। ওদিকে ১৪ দিন। দুয়ে মিলে ২৮ দিনের করোনা বিধিতে ফেঁসেছেন কয়েক লক্ষ রাজ্যবাসী। কেউ তিনমাস। কেউ চার বা তারও বেশি। যেমন সল্টলেকের দেবাশিস দত্ত। কাজ করেন ধানবাদের একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে। শেষবার বাড়ি এসেছিলেন মার্চ মাসের গোড়ায়। লকডাউন ও কোয়ারেন্টাইনের গেরোয় এখন আটকে কর্মস্থলেই। একই হাল দমদমের তথাগত বসুঠাকুরের। মুম্বইয়ে একটি সফটওয়্যার কোম্পানির এক্সিকিউটিভ। শেষবার বাড়ি এসেছিলেন ফেব্রুয়ারি মাসে। কিংবা ডানকুনির পাপিয়া সেনগুপ্ত। বেঙ্গালুরুর একটি কোম্পানির অ্যাড এজেন্সিতে চাকরি করেন। পাপিয়াদেবীর শেষবার বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল মার্চের ১৩ তারিখ। সেই যে গিয়েছেন কর্মস্থলে, সেখানেই আটকে রয়েছেন তিনমাস। আর ফিরতে পারেননি। এরাজ্য থেকে ভিনরাজ্যে চাকরি করতে গিয়ে আটকে পড়া এমন মানুষের সংখ্যা বেশ কয়েক লক্ষ। আনলক-১ ঘোষণার পরও ফেরা হয়নি। ছুটি পাওনা থাকলেও। ভিলেন, ওই ‘২৮ দিনের গেরো’।
২৮ দিনের গেরো বস্তুটা কী? কেন, ওই করোনা-বিধি! ভিন রাজ্য থেকে কেউ ঘরে ফিরলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইন। আবার কর্মস্থলে ফেরার পর ফের ১৪ দিন। দুইয়ে মিলে ২৮ দিনের এই বন্দিদশার গেরোতেই আটকে গিয়েছেন দেবাশিস দত্ত-পাপিয়া সেনগুপ্তরা। দেবাশিসবাবু বলেন, “আচমকা লকডাউন ঘোষণা হওয়ায় বাড়ি ফিরতে পারিনি। ধানবাদে যে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকি সেখান থেকেই অফিসের কাজ করছিলাম। যাকে বলে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। জুনের প্রথমে আনলক হতেই অফিস যাচ্ছি। কিন্তু বাড়ি যাওয়ার উপায় নেই।” একই বক্তব্য তথাগতবাবুর। বলছেন, “এতদিন ভাড়াবাড়ি থেকে অফিসের কাজ সারছিলাম। এখন অফিস যেতে হচ্ছে। সব স্বাভাবিক হলেও একবারের জন্য দমদমের বাড়িমুখো হতে পারছি না। গেলেই ২৮ দিনের গেরোয় ফেঁসে যাব।”
[আরও পড়ুন: দুর্ঘটনায় জখম করোনা রোগী পড়ে রইলেন রাস্তায়, সংক্রমণের আশঙ্কায় ছুঁলেন না কেউ]
জানা যাচ্ছে, সমস্যাটা ‘১৪ দিন’-এর। সময়সীমা নিয়ে নয়। সমস্যাটা বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিয়ম নিয়ে। বিধি অনুযায়ী, এই সময়টা বাড়ি থেকে বেরনোর উপায় নেই। বাইরে জরুরি কাজ থাকলেও বেরনো যাবে না। অর্থাৎ দু’দফায় মোট আঠাশ দিন নিষ্কর্মা হয়ে ঘরে বসে থাকতে হবে। রাস্তায় বেরনো বা আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। আবার ছুটি পাওনা হলেও টানা এতদিন ছুটি মঞ্জুর করছে চাইছে না কর্তৃপক্ষ বলে অভিযোগ দেবাশিসবাবুর। তাঁর কথায়, “যদি ম্যানেজমেন্ট ২৮ দিন ছুটি মঞ্জুর করে, তাতেও তো কাজের কাজ তো কিছুই হবে না। দমদম ফিরে বাড়ি থেকেই তো বেরোতেই পারব না। আবার এখানে ফিরেও আটকে থাকতে হবে।” একই বক্তব্য বাকিদেরও।
তাহলে উপায়? বেঙ্গালুরুতে ফ্ল্যাটবন্দি পাপিয়াদেবীর কথায়, “নো উপায়!” তাঁর কথায়, “সবকিছু স্বাভাবিক না হওয়া অবধি এভাবেই প্রবাসে বন্দিজীবন কাটাতে হবে। করোনা আতঙ্ক কেটে গেলে কোয়ারান্টাইনের বিধিও উঠে যাবে। তারপর বাড়ি ফেরা।” সমস্যার কথা জানেন রাজ্যের নোডাল অফিসার পিবি সেলিম। তিনি জানান, “কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের গাইডলাইন মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভিন রাজ্য বা দেশ থেকে ফিরলেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ১৪ দিন বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। আর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করোনার লক্ষণ থাকলেই তাকে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অন্য রাজ্যেও একই নিয়ম। তাই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।”
ভিন রাজ্যে আটকে থাকা মানুষজন এখন সার্বিক করোনা মুক্তির প্রতীক্ষায় তাকিয়ে আছেন। তারপরই বাড়ি ফেরা। আপনজনদের সঙ্গে দেখা। গল্প-আড্ডা। হাসি-ঠাট্টা। ঠিক আগের মতো।