Advertisement
Advertisement

জ্ঞানেশ্বরীর ধাক্কায় কাটা পড়ল হস্তিশাবক-সহ দুই দাঁতাল

আচমকা ঝাকুনিতে ফিরল আট বছর আগের দুঃসহ স্মৃতি।

3 elephant killed on rail accident
Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:August 7, 2018 4:47 pm
  • Updated:August 7, 2018 4:47 pm

সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: তখন অনেক রাত। সেই ঝাড়গ্রাম। সেই জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। হঠাৎ বড় ঝাঁকুনি দিয়ে থেমে গিয়ে যা ফেরাল ২০১০-র নাশকতার আতঙ্ক। যাত্রীদের মেরুদণ্ড দিয়ে বয়ে গেল হিমেল স্রোত। বিনিদ্র রজনী কাটালেন যাত্রীরা।

[কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মহিলাকে মারধর, অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর]

মুম্বইগামী ট্রেনটির চালক দেখলেন ইঞ্জিনে রক্তের দাগ। তার সামনে পড়ে আছে ক্ষতবিক্ষত নিথর দেহটি। প্রায় সিকি কিলোমিটার রেললাইন, ও পাথরকুচিতে ঘসটে আসা সেই দেহের শুঁড়ের কিছুটা ছিড়ে পড়েছে। পায়ের চামড়া ও লেজের একটা অংশ যেখানে ছিটকে ছড়িয়ে সেখানে লাইনের দু’দিকে আরও দুটি দেহ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ হাতির। ওয়াকি-টকিতে গার্ডকে বার্তা পাঠালেন তিনি। রাত দেড়টা থেকে ভোর পাঁচটা, জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রসের চালক-গার্ড, অন্যান্য কর্মী থেকে যাত্রীরা, সকলেই কাটালেন আতঙ্কিত বিনিদ্র রজনী। তিন সঙ্গীর মৃত্যুর বদলা নিতে এই বুঝি দলের অন্য সদস্যরা হামলা চালায়। তাহলে অসহায় অবস্থায় আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কিছুই করার নেই। হস্তিযুথে ধাক্কা মেরে যে বিকল হয়েছে রেলের ইঞ্জিন। তাই সব কামরার দরজা, জানলা বন্ধ করে ভোরের আলোর অপেক্ষায় যাত্রীরা। ভোর সওয়া পাঁচটা নাগাদ অতিরিক্ত একটি ইঞ্জিন আনা হলে তাঁরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। বিকল ইঞ্জিনটি সরিয়ে সেটি জুড়ে দেওয়া হল। আতঙ্কের প্রহর কাটিয়ে ঝাড়গ্রামের জামবনি ব্লকের ডুমুরিয়া থেকে ফের রওনা হল আপ জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। পিছনে ফেলে গেল তিনটি দেহ। দলমা থেকে এসে যারা গতকালও দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল এই জঙ্গল। যেহেতু রেসিডেন্সিয়াল হাতির দল নয়, তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা ফিরে যাবে ফের দলমা রেঞ্জে। শুধু কমে যাবে সংখ্যাটা। শাবক-সহ যে তিনটি হাতির মৃত্যু হয়েছে, তাদের ঘিরে সকাল থেকেই শুরু হয়েছে পুজা। কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করেছেন সেখানে। আদিবাসীর সংখ্যা বেশি। জঙ্গলমহলের মানুষের কাছে গজরাজ তো সাক্ষাৎ দেবতা। কেউ ফুল ছুড়ছেন। কেউ বাড়ি থেকে গঙ্গাজল এনে স্নান করাচ্ছেন। কেউ নতুন কাপড়ে মুড়ে দিয়েছেন মাথা। অনেকে সিঁদুর মাখিয়ে দিচ্ছেন বহু মূল্যবান দাঁতে। কারও চোখে জল।

Advertisement

[চালকের অশালীন আচরণ, চলন্ত অটো থেকে ঝাঁপ ছাত্রীর]

ছুটছে জ্ঞানেশ্বরী। তখন অনেক রাত। ২০১০-র মে মাসের শেষ সপ্তাহ। অধিকাংশ যাত্রী ঘুমিয়ে কাদা। হঠাৎ বিপত্তি। ছিটকে গেল একের পর এক কোচ। একটা আর একটার ঘাড়ে কিম্বা ছিটকে বাইরে গিয়ে পড়ল।  কোনওটা দুমড়ে, মুচড়ে গেল। ট্রেনের কামরা তো নয় যেন টিনের বাক্স। তার মধ্যে শুধু রক্ত আর রক্ত। মুম্বইগামী সেই জ্ঞানেশ্বরী তো দুর্ঘটনায় পড়ছিল এই তল্লাটে। ঘড়ির কাঁটা বলছে রাত দেড়টা। আট বছরের পুরনো স্মৃতি ফেরাতে ঘড়ি যেন আরও সক্রিয়। যাত্রীরা সোমবার দেখলেন, ঘণ্টার কাঁটা একটা ছেড়ে দুয়ের ঘরে যেতে মাঝপথে। তবে কি হল?   যাত্রীরা যখন উদ্বিগ্ন তখন বোঝা গেল নাশকতা নয়, বড় কোনও দুর্ঘটনা নয়। যাত্রীদের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। হাতির দল লাইন পেরিয়ে যেতে গিয়ে বিপত্তি ঘটেছে। তবে হাতির ধাক্কায় বিকল হয়েছে ইঞ্জিন। তাই ভাগ্যের হাতে নিজেদের সঁপে দিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। তা-ই করলেন সবাই। ডুমুরিয়া গ্রামের রেলগেট হাতির করিডর নয়। তাই রেলের কাছে আগাম কোনও সতর্কতা ছিল না। ডিভিশনাল ফরেস্ট অফিসার বাসবরাজ হলেচ্ছি বলেন, “এটি হাতিদের নিয়মিত ব্যবহৃত করিডর নয়। প্রথম এই ঘটনা ঘটল। দলমা থেকে দলটি এসেছে। এবার থেকে এখানে ট্রেনের গতি সীমিত রাখার প্রস্তাব পাঠানো হবে।”

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ