সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: ফেসবুক লাইভ করতে করতে বাইক চালাচ্ছিলেন। ভেবেছিলেন, লাইক-শেয়ারের বন্যা বয়ে যাবে। কিন্তু পরিণাম যা হল, তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। বাইক থেকে পড়ে মৃত্যু হল দুর্গাপুরের অন্ডালের বছর পঁচিশের যুবক চঞ্চল ধীবরের। দুর্ঘটনা ঘিরে শোকের ছায়া পরিবার এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্ডাল থানার উখড়ার ধীবর পাড়ার বাসিন্দা চঞ্চল। শনিবার বিকালে স্থানীয় দক্ষিণখণ্ড কালীবাড়ি থেকে বাইক নিয়ে উখড়ার বাড়িতে ফিরছিলেন পঁচিশ বছরের এই যুবক। চলন্ত বাইকে বসেই তাঁর ফেসবুকে লাইভ করার ইচ্ছে হয়। পকেট থেকে মোবাইল বের করে সেখান থেকে ফেসবুক লাইভ শুরু করেন চঞ্চল। লাইভে থাকায় ফোনেই নজর ছিল তাঁর। ফলে বাইকের সামনের রাস্তা দেখতে পাননি। ঠিক এই ফাঁক গলেই চঞ্চলের জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
[আরও পড়ুন: পুলিশের পোশাক পরে মন্ত্রীর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম, বিতর্কে রামপুরহাট থানার ASI]
বাইকের সামনে পড়ে ছিল একটি বড় পাথর। লাইভে বেশি মন দেওয়ার তা চঞ্চলের নজরে আসেনি। ওই পাথরে ধাক্কা লেগেই বাইক উলটে পড়ে যান চাঞ্চল। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে খাঁদরা-উখড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলে, তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় দুর্গাপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই চঞ্চলের মৃত্যু হয়।
খবর পৌঁছয় চঞ্চলের ধীবর পাড়ার বাড়িতে। আচমকা ছেলের মৃত্যু সংবাদে শোকের ছায়া নেমে আসে পরিবার এবং প্রতিবেশী মহলে। মৃতের ভাই নির্মল ধীবর জানান, “দাদা বাইক চালাতে চালাতেই ফেসবুকে লাইভ করছিল। সেই সময় এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। এইভাবে বাইক চালাতে চালাতে মোবাইল ব্যবহার করার জন্যেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।” ছেলের শখ যে তাঁর জীবনেই এভাবে ইতি টেনে আনবে, তা কিছুতেই মানতে পারছেন না মা-বাবা। বারবারই আক্ষেপ করছেন, কেন ছেলেকে বাইক নিয়ে ছাড়লেন।
[আরও পড়ুন: পেটের দায়ে অসহায় মা, মাত্র ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে দুধের সন্তানকে বিক্রি]
পথ নিরাপত্তায় রাজ্য সরকারের ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই যথেষ্ট কার্যকরী হয়েছে। হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো কিংবা বেপরোয়া গতি অথবা গাড়ির চালকের আসনে বসে মোবাইল ব্যবহারের মতো গুরুতর ঘটনায় কড়া শাস্তির নিদান থাকায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তাছাড়া রাজ্য জুড়ে এনিয়ে ব্যাপক প্রচার ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু তারপরও যে সচেতনতা খুব বেশি জাগ্রত হয়নি, চঞ্চলের ঘটনাই তার প্রমাণ।