সৌরভ মাজি, বর্ধমান: রূপশ্রী প্রকল্পে লক্ষ লক্ষ টাকা দুর্নীতিতে বরখাস্ত গলসি-১ নম্বর ব্লকের এক কর্মী। তদন্তের পর এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসক বিজয় ভারতী বলেন, “তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর ওই ডেটা এন্ট্রি অপারেটারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।” তিনি জানান, তদন্তে প্রমাণ মিলেছে ওই কর্মীই সই নকল করে দুর্নীতি করেছে। এই ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না তাও খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হবে ব্যবস্থা।
গলসি-১ ব্লকের ওই কর্মীর নাম ইন্দ্রজিৎ গড়াই। ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চুক্তিভিক্তিক কর্মী তিনি। গত কয়েক বছর ধরে ওই পদে কর্মরত। আগস্টে এই ব্লকের একজন বাসিন্দা তথ্য জানার অধিকার আইনে জানতে পারেন কারা ওই পঞ্চায়েত এলাকায় রূপশ্রী প্রকল্পে ২৫ হাজার টাকা করে সরকারি সহায়তা পেয়েছেন। নির্দিষ্ট বয়সের পর মেয়েদের বিয়ের জন্য রাজ্য সরকার এই সহায়তা দিয়ে থাকেন। তথ্য জানার অধিকার আইনে সুবিধা প্রাপকদের নামের তালিকা দেখে চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যায় উচ্চগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের। ওই তালিকা অনুযায়ী যাঁদের বিয়ে বহু বছর আগেই হয়ে গিয়েছে তাঁরাও প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। এমনকী মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে তেমন মহিলাও বিয়ে করছেন বলে প্রকল্পের সুবিধা নিয়েছেন। ওই পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা রাঘবেন্দ্র ঘোষ, সন্তু দত্ত, শেখ নাজিম-সহ প্রায় ৫০ জন বাসিন্দা সেই সব মহিলাদের নাম, ঠিকানা, বয়স এবং কবে বিয়ে হয়েছে সেই সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে প্রশসনের কাছে নালিশ জানান। তাঁদের হিসেবে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই কমপক্ষে ২০ লক্ষ টাকার দুর্নীতি হয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রসাসনের তরফে গলসি-১ নম্বর ব্লকের বিডিও বিনয়কুমার মণ্ডলকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিডিও তদন্ত করে রিপোর্টও জমা দেন। সেই তদন্ত রিপোর্টে ইন্দ্রজিৎই দুর্নীতি করেছে বলে জানানো হয়। সেখানে ব্লকের অফিসারদের সইও নকল করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ার পর থেকে অবশ্য বিডিও কার্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন ওই কর্মী। শুক্রবার তাঁর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি। শুধুমাত্র একজন চুক্তিভিত্তিক কর্মীর পক্ষে এত বড় দুর্নীতি করা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন অনেকেই।
[আরও পড়ুন: শীতের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে গুটিসুটি বাংলা, তাপমাত্রার নিরিখে পাঁচ বছরের রেকর্ড ভাঙল ২১ ডিসেম্বর]
গলসি-১ নম্বর ব্লক যুব তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি তথা গলসি-১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ পার্থ মণ্ডল বলেন, “শুধুমাত্র একজন ঠিকাকর্মী একাজে জড়িত নয়। একটা বড় চক্রও রয়েছে। তাই একজনকে শাস্তি দিলে হবে না। চক্রের বাকিদেরও চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। আর তদন্ত শুধুমাত্র একটিমাত্র গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় হয়েছে। পুরো ব্লকে এই প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন। কোটি টাকার উপর দুর্নীতি হয়েছে।” জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।