ধীমান রায়, কাটোয়া: চোর সন্দেহে গণপিটুনি। পাড়াপড়শির অসম্মান হজম হয়নি। অপমানিত ও আহত যুবক গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। তাকে ভরতি করা হয়েছিল বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই যুবক মারা গেলেন। মৃত ব্যক্তির নাম শেখ আকবর(৪০) ওরফে বাপি। বর্ধমানের ভাতারের রাধানগর গ্রামের এই ঘটনায় মৃতের স্ত্রী রসুলা সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
[জমি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ, দুধের শিশুর যৌনাঙ্গে ব্লেড চালাল বাবা]
রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা শেখ আকবরের বাড়িতে রয়েছেন বিধবা মা, স্ত্রী ও তিন নাবালক সন্তান। জনমজুরের কাজ করতেন আকবর। তাঁকে মারধরের ঘটনাটি ঘটে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। মৃতের মা গুলবাহার বিবি জানিয়েছেন ওই পাড়াতেই রাজা শেখ নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে ৪ হাজার টাকা চুরি যায়। তার জেরে ওইদিন সকালে রাজা শেখ সহ বেশ কয়েকজন বাড়ি থেকে তার ছেলে আকবরকে তুলে নিয়ে যায়। মৃতের স্ত্রী রসুলা বিবি বলেন, টাকা চুরি করেছে এই সন্দেহে আমার স্বামীকে নিয়ে গিয়ে মসজিদের সামনে একটি পোলে ওরা বেঁধে রাখে। তারপর ৭–৮ জন মিলে বেধড়ক পেটাতে থাকে। শেষে কয়েকজনের মধ্যস্থতায় ছাড়া পায়। ওদিনই আমার স্বামীকে বর্ধমান হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। পরের দিন থানায় অভিযোগ জানাই। বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালে স্বামী মারা যান।
[স্কুলে কারগিল শহিদের মূর্তি ভেঙে চুরমার, তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ]
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে রাধানগর গ্রামে মসজিদের পিছনেই বাড়ি রাজা শেখের। তাঁর বাড়ি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ৪ হাজার টাকা চুরি যায়। ওইদিন গভীর রাতে রাজা শেখ খোঁজ করতে আসে আকবরের বাড়িতে। না পেয়ে ফের পরেরদিন সকালে রাজা ও তার কয়েকজন আত্মীয় আসে। আকবরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর মসজিদের সামনে একটি পোলে বেঁধে রেখে ব্যাপক মারধর করা হয় আকবরকে। ওইদিন আকবরের মা ও স্ত্রী বাড়ি থেকে ৪ হাজার টাকা নিয়ে গেলে তবে আকবরকে ছাড়া হয়েছিল। মৃতের আত্মীয় মেহবুব শেখ বলেন, ওদিন স্রেফ সন্দেহের বশে মারা হয়েছিল আকবরকে। পাশাপাশি চাপ দিয়ে ৪ হাজার টাকা আদায়ও করা হয়। তাই অপমান সইতে না পেরে আকবর বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। বাড়িতে চোখে পড়ে যাওয়ায় দড়ি কেটে নামানো হয়েছিল। সেই থেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিলেন আকবর।
[প্রেমিক বিবাহিত জানতে পেরে আত্মঘাতী তরুণী, একই পরিণতি তরুণেরও]
মৃতের পরিবার ও প্রতিবেশীদের দাবি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। অন্যদিকে অভিযুক্ত রাজা শেখের দাবি আকবরই তাঁর টাকা চুরি করেছিল। পুলিশ এই ঘটনায় মারধর ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছে বলে জানা গিয়েছে। ভতার থানার ওসি পুলক মণ্ডল জানান অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। গ্রামে উত্তেজনা থাকায় পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
ছবি: জয়ন্ত দাস