রাজা দাস, বালুরঘাট: বাবার সঙ্গে হাটে হাটে জিলিপি বিক্রয় করেও উচ্চ মাধ্যমিকে সাফল্য অর্জন করল বিউটি প্রামানিক৷ কলা বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৪৫ নম্বর প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেও উচ্চশিক্ষায় মেয়েটির প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ৷ উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে সাফল্য এলেও আগামিদিনে শিক্ষিকা হওয়ার ইচ্ছাপূরণ কীভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তায় বিউটির পরিবার৷
বংশীহারি থানার শেরপুর এলাকায় বাসিন্দা বলয় প্রামাণিক৷ পেশায় জিলিপি বিক্রেতা। স্ত্রী ময়না প্রামাণিক ও দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার বলয়বাবুর। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে অনেকদিন আগেই। বলয়বাবুর ছোট মেয়ে বিউটি প্রামাণিক। বিউটি বংশীহারি গার্লস হাই স্কুল থেকে এবারে কলা বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছে৷ তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৪৫৷ প্রায় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। তিন জনের সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী৷
তবুও, অব্যাহত লড়াই৷ বাবাকে সহযোগিতা করতে মেলায় মেলায় জিলিপি বিক্রি করে বিউটি৷ অনেক ছোট থেকেই এ কাজে বাবার কাজে সাহায্য করে চলেছে বিউটি৷ জিলিপি তৈরি থেকে বিক্রয়, খদ্দের সামলানো এখন বিউটির ‘ডান হাতের খেল’৷ বাকি ফাঁকা সময়ে মনোনিবেশ করতো পড়ায়। তার এই সাফল্যের পেছনে স্কুলের শিক্ষিকা থেকে পরিবার ও বন্ধুরা সবকেই সাহায্য করেছে৷ আগামিদিনে সে শিক্ষিকা হতে চায়৷ কিন্তু এবার উচ্চশিক্ষায় ভরতি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা তার। দোকানের সামান্য আয়ে সেই শিক্ষায় বাধা তার।
বিউটির বাবা বলয় প্রামাণিক জানান, মেয়ে এমন ভাল ফলাফল করবে স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি। রোজ রাত ১১-১২টা পর্যন্ত দোকানেই থাকত মেয়ে। তারপর পড়াশোনা করত। প্রথমে যখন ফোনে মেয়ে তাকে জানায় ভাল রেজাল্ট করেছে, তখন কিছুই বুঝতে পারেননি তিনি ও তার পরিবার৷ কেননা সব সামলে এইভাবে ভাল রেজাল্ট সম্ভব হয় না৷ একটা সময় ভেবেছিলেন মেয়ে হয়তো পাশও করতে পারবে না৷ তাদের ভাবনাকে পালটে দিয়েছে মেয়ে৷ খুব খুশি তারা৷ বিউটি প্রামাণিক জানায়, বাবার দোকানে থাকত সে। খদ্দের সামলানোর ফাঁকে ফাঁকে পড়াশুনা করতো৷ তার এই সাফল্যের পিছনে স্কুলের শিক্ষিকা থেকে সকলে খুব সহযোগিতা করেছেন। সবার প্রতি সে কৃতজ্ঞ। উচ্চশিক্ষায় সকলের সাহায্যর আরজি তার৷
ছবি- রতন দে
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.