তরুণকান্তি দাস: রেশনে চাল, চিনি, গম তো ছিলই৷ এবার বিভিন্ন নামী কোম্পানির ব্র্যান্ডেড পণ্যও সাধারণ মানুষের হাতে সস্তায় তুলে দেবে সরকার৷ বহুজাতিক একাধিক সংস্থার সঙ্গে এ নিয়ে চুক্তি হয়েছে ঠিক ভোটের আগেই৷ মোট ১২৭টি দোকান খোলা হবে রাজ্যজুড়ে৷ প্রথমে পুর এলাকায় পরিষেবা চালু হচ্ছে৷ খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, প্রথমে ঠিক হয়েছিল রেশনের মাধ্যমে এই পরিষেবা চালু করা হবে৷ কিন্তু লভ্যাংশ নিয়ে জটিলতা ও নানা কারণে তা বাস্তবায়িত করা যায়নি৷ তবে এখন নিজেরাই পুর এলাকায় একটি করে স্টল দিতে চলেছে৷ এজন্য ঘর চেয়ে পুরসভাগুলিকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে৷ কয়েকটি পুরসভা এতে সম্মতিও জানিয়েছে৷ খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, “পরীক্ষামূলকভাবে এই উদ্যোগ যদি সফল হয় তবে গ্রামীণ এলাকাতেও তা চালু হবে৷ এতে মানুষ সস্তায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পাবেন, আবার কর্মসংস্থানও হবে৷ প্রতিটি স্টলে চারজন করে কাজ পাবেন৷ আমরা চেষ্টা করছি মহিলাদের স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলিকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে৷”
বেশ কিছুদিন আগে খাদ্য দফতর একবার এ নিয়ে উদ্যোগী হয়েছিল৷ তখন সরাসরি রেশন ডিলারদের মাধ্যমে এই পরিষেবা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল৷ বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার প্রতিনিধি, খাদ্য দফতরের আধিকারিক, রেশন ডিলারদের সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা বৈঠকও করেন৷ দু’দিন বৈঠকের পর সংস্থাগুলির কাছ থেকে প্রস্তাবও চাওয়া হয়৷ ডিলারদের কমিশন কী হবে তা নিয়ে অবশ্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি৷ তা ছাড়া, আরও কিছু জটিলতায় বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়৷ তবে খাদ্য দফতর বসে থাকেনি৷ কলকাতায় খাদ্যভবনের লাগোয়া ‘রৌদ্র-বৃষ্টি’ স্টলের মতো করে রাজ্যে কাউন্টার খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়৷ ভোটের আগে এ নিয়ে চুক্তিও হয়ে যায় বেশ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে৷ এখন পরবর্তী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার পালা৷ স্বাভাবিকভাবেই ফের ক্ষমতায় আসার পর এ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে৷ তবে রাজ্যের রেশন ডিলারদের সংগঠনের কর্তা খাইরুল আলম বলেছেন, “এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে গেলে বড় পরিকাঠামো চাই৷ অর্থ চাই৷ আমাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেও বিষয়টি এগোয়নি৷ এখন যদি সরকার নিজেরাই প্রকল্প রূপায়িত করতে পারে তো ভাল৷” এদিকে রেশন ডিলারদের একাংশ আবার বলেছেন, এই উদ্যোগ সাধারণ মানুষের বিশেষ কাজে আসবে না৷ দোকানে যা পাওয়া যায়, তাই মানুষ যদি তুলনামূলকভাবে অনেক কম দামে না পান, তাহলে কেন সরকারি স্টলে যাবেন?
নয়া উদ্যোগে কী কী থাকবে দোকানে? জানা গিয়েছে, একটি বহুজাতিক সংস্থার সাবান, ডিটারজেন্ট থেকে নানাবিধ পণ্য, দক্ষিণ ভারতের নামী ব্র্যান্ডের সাবান, বেশ কিছু মশলা মিলবে৷ পাশাপাশি রাখা হবে তুলাইপাঞ্জি চাল, ধূপ-সহ বেশ কিছু জিনিস৷ এতে লাভ দ্বিমুখী৷ প্রথমত, রাজ্যের বিভিন্ন উৎপাদনের বিক্রি বাড়বে৷ চাষিরা উৎসাহ পাবেন৷ অন্যদিকে ব্র্যান্ডের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য মিলবে প্রায় ১০ শতাংশ কম দামে৷ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগম এর দায়িত্ব নিচ্ছে৷ প্রতিটি পুরসভা এলাকায় একটি করে দোকান হবে৷ চারজন কর্মী থাকবেন দোকানে৷ অর্থাৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে৷ তবে প্রতিটি পুর এলাকায় ঘর পাওয়া যে সহজে সম্ভব হবে না তা স্পষ্ট৷ খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, বেশ কয়েকটি পুরসভা অবশ্য এই উদ্যোগ নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নয়৷ ঘরের সমস্যাই প্রধান কারণ৷ খাদ্যমন্ত্রী জানান, “লাভের কথা ভেবে এই উদ্যোগ নয়৷ যা সামান্য আয় হবে তা দিয়ে পরিকাঠামোর খরচ ও বেতনের সংস্থান করা হবে৷ উৎপাদকদের থেকে সরাসরি ক্রেতাদের হাতে পণ্য পৌঁছে যাবে৷ মাঝখানে কেউ নেই৷ ফলে সস্তায় সব কিছু মিলবে৷ লাভবান হবেন মানুষ৷”