Advertisement
Advertisement

Breaking News

উরস থেকে ফেরার পথে গেদে স্টেশনে মিশল দুই বাংলার মন

প্রতিবছর উরস উপলক্ষ্যে ভারতে আসেন বাংলাদেশের প্রচুর মানুষ।

Bangladeshis return home after Urs
Published by: Soumya Mukherjee
  • Posted:February 20, 2019 3:20 pm
  • Updated:February 20, 2019 3:20 pm

বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: কেউ জানতে চাইলেন, ‘কী চাচা, কেমন আছ তোমরা? জবাবে চাচা, ‘আমরা তো আছি ভালই। তোমরা কেমন আছো ? ভাল তো?’ না, এটা এ পাড়ার ও পাড়ার মানুষের কথা নয়। এটা এ বাংলা আর ও বাংলার মানুষের কথোপকথনের একটা টুকরো মাত্র। যার মধ্যে রয়েছে একরাশ মনের টান, একবুক আপনভাব। যা শুধুই ফুটিয়ে তোলে স্নেহ, ভালবাসা, শ্রদ্ধা আর একান্তই আন্তরিকতা। যার মধ্যে লুকিয়ে আছে নিজের মানুষকে কাছে পাওয়ার আকুলতা। গতকাল এভাবেই উরস থেকে ফেরার পথে গেদে স্টেশনে মিশল দুই বাংলার মন। 

পুলওয়ামায় সিআরপিএফ জওয়ানদের ওপর নারকীয় জঙ্গিহানার পর যখন ভারতের এক সীমান্তের আকাশে বাতাসে বারুদের গন্ধ, ঠিক তখনই আর এক সীমান্তে এমনই সৌহার্দের পরিবেশ। মাত্র চার ঘণ্টা সময়ের জন্য যে পরিবেশে দুই বাংলা যেন মিলেমিশে একাকার। যেখানে নেই কোনও লোভ, নেই কোনও স্বার্থপরতা, নেই হিংসার পরিবেশ। মঙ্গলবার এমন ছবিরই দেখা মিলল নদিয়ার গেদে স্টেশনে। এদিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ গেদে স্টেশনে এসে পৌঁছায় বাংলাদেশগামী উরস যাত্রীদের ট্রেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রাজবাড়ি স্টেশন থেকে ছেড়ে যাত্রীবাহী ট্রেনটি গেদে স্টেশন হয়ে গিয়েছিল মেদিনীপুরে।

Advertisement

Gede rail station

Advertisement

গেদে স্টেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন ২ হাজার ২৬ জন। আর রাজবাড়ি থেকেই তিনটি লাক্সারি বাসে মেদিনীপুরে উরস উৎসবে যোগ দিতে গিয়েছিলেন আরও প্রায় তিনশ যাত্রী। উরস উৎসব কাটিয়ে পুণ্যার্থীদের ট্রেনটি বাংলাদেশে ফেরার জন্য মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ গেদে স্টেশনে এসে পৌঁছায়। গেদে চেকপোস্টের নিয়মানুযায়ী, চেকিংয়ের জন্য প্রতি বছরই ট্রেনটি গেদে স্টেশনে প্রায় চারঘণ্টা দাঁড়ায়। আর এই চার ঘণ্টাতেই ঘটে দুদেশের মানুষের মেলবন্ধন। প্রতিবছরের মতো মঙ্গলবারও গেদে স্টেশন চত্বর ও আশপাশের জায়গায় বিভিন্ন রকমের পসরা নিয়ে বসেছিলেন এদেশের দোকানিরা। তাতে ছিল আঙুর, আপেল-সহ বিভিন্ন রকমের ফল, হাড়ি, কড়াই-সহ বিভিন্ন বাসনপত্র ও জিরে এবং হলুদ-সহ হরেকরকম মশলা। এছাড়া চাদর ও কম্বল-সহ বিভিন্ন শীতবস্ত্র এবং আরও বিভিন্ন রকমের জিনিস। সব মিলিয়ে যেন একটা বিরাট মেলা।

Bangladeshis meet Indians
উরস উৎসব সেরে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির সবার জন্য কিছু কেনাকাটা করতে কে না চায়! তারপর বিদেশযাত্রা বলে কথা। আর এই কেনাকাটা ও বিকিকিনির মধ্যেই চলে ভাব ও মনের আদান-প্রদান। চাচা-ভাতিজা, বন্ধু-বন্ধু নিলেন একে অপরের দেশের খোঁজখবর। পাশাপাশি সাজিয়ে রাখা পণ্যের দাম কিছুটা কম হওয়ায় উরস উৎসব ফেরত যাত্রীরা বাড়ির সবার জন্য কিনলেন কিছু না কিছু। আর তারই মধ্যে হাসি-ঠাট্টা, গল্প-গুজবে মিলে মিশে হলেন একাকার। কেউ কেউ করলেন ঠিকানার আদান-প্রদান। বললেন, “সময় পাইলেই চইল্যা আসুন গো একবার। দেইখ্যা যান আমাদের দ্যাশটাকে।” উত্তরে প্রবীর সাহা নামে ভারতীয় এক নাগরিক বললেন, “কী যে কহেন দাদা, ইচ্ছে কী আর করে না নিজের পূর্বপুরুষের দেশটায় একবার ঘুরে আসতে। যাব, একবার অবশ্যই যাব। তখন আপনাদের বাড়িতেও যাব।”

[ফিরে এলে ‘ধানসিড়ি’ নদীটি খুঁজেই পেতেন না জীবনানন্দ]

বাড়ি ফেরার সময় অনেক কেনাকাটা করে নিয়ে গিয়েছেন গৃহবধূ চম্পা। তিনি বললেন, “আমি এই দেশে দুবার এলাম। বাড়ি যাওয়ার আগে সবার জন্যই কিছু নিলাম। আমার তো খুব ভাল লাগে। মনেই হয় না, অন্য দেশে এসেছি।” ফরিদপুরের কওসর মিঞাঁ বললেন, “প্রথমবার এসেই ভারতকে ভালোবেসে ফেললাম। সবার সঙ্গে কথা হল। মনের ভাবের বিনিময় হল। এ যেন আমার দেশের মতোই।”

নিজাম বিশ্বাসের তো খুবই ভাল লেগেছে এই দেশের মানুষকে। হাসিমুখে জানালেন, খুব ভাল লাগল। দুটো দেশের মানুষের মধ্যে মনের ভাবের আদান-প্রদান হল। বছরে মাত্র দুটি দিন। উরস উৎসবের ট্রেন আসা আর যাওয়ার সময় চার-চার আট ঘণ্টা। গেদে আর আশপাশের মানুষরাও মুখিয়ে থাকেন এইদিনটির জন্য। কারণ, দু’পয়সা আয়ের পাশাপাশি অল্প কিছু সময়ের জন্য হলেও মিশে যায় এপার-ওপারের মন।

ছবি: সঞ্জিত ঘোষ

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ