টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: মাথায় ঋণের বোঝা নিয়েই তৃতীয় ইন্টারন্যাশনাল থাই মার্শাল আর্টস গেমস অ্যান্ড ফেস্টিভ্যালে সোনা ও রুপো জিতল বাঁকুড়ার মালিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা দুই ভাই-বোন। জাতীয় স্তরে সোনা ও ব্রোঞ্জ জিতে আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার ছাড়পত্র পায় মনীষা ও মৈনাক কুণ্ডু।
পরিবারের আর্থিক অনটনের বাধা হেলায় উড়িয়ে বিশ্বের আঙিনায় নিজেদের কৃতিত্বের প্রমাণ দিয়েছে দুই ভাই-বোন। মার্শাল আর্টের কৌশল রপ্ত করে বিদেশের আঙিনায় চোখ ধাঁধানো পারফরম্যান্স একের পর এক প্রতিপক্ষকে পর্যুদস্ত করে এই প্রতিযোগিতায় সোনা জিতে বিশ্বজয়ীর খেতাব পেয়েছে মনীষা। খুদে মৈনাকও কম যায় না অবশ্য। দিদির পথ অনুসরণ করে রুপো জিতেছে সে। বাংলা তথা দেশকে গর্বিত করে এই দুই উজ্বল বঙ্গসন্তান গত শুক্রবারই বাড়ি ফিরেছে থাইল্যান্ড থেকে। বাড়ি ফেরার পর থেকেই কৃতী দুই সন্তানকে নিয়ে উৎসাহের খামতি নেই বাঁকুড়ার বাসিন্দাদের। বিমানবন্দরে নামার পর থেকেই সংবর্ধনার বন্যায় ভেসে গিয়েছেন দু’জনেই। জয়ী দু’জনের গলায় কিন্তু খানিকটা আক্ষেপের সুর। মনীষার কথায়, ‘এই প্রতিযোগিতায় যাওয়ার সময় টাকার অভাবে অংশগ্রহণ করা নিয়েই সংশয়ে ছিলাম আমরা। বাধ্য হয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয় বাবাকে।’ তাছাড়া গ্রামগঞ্জে তাদের মতো আর্থিক দিক থেকে দুর্বল পরিবারের একাধিক প্রতিভাবানদের হারিয়ে যাওয়ার যন্ত্রণাও যে এই বিশ্বজয়ী দুই খেলোয়াড়কে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে, সে কথাও তারা লুকিয়ে রাখেনি।
মনীষার কথায়, খেলাধুলোর প্রতি এই অবহেলাই বিশ্বের মানচিত্রে এ দেশকে পিছনের সারিতে ঠেলে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয় ব্যঙ্ককের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। বিদেশের আঙিনায় বাঁকুড়ার মালিয়াড়ার এই দুই মেঠো বাঙালির সোনা জয়ের খবর চাউর হতেই বলিউডে আমির খানের সিনেমা ‘দঙ্গল’-এর সঙ্গে তুলনা শুরু হয়ে গিয়েছে। দুই খুদে সন্তানের এহেন কৃতিত্বে আনন্দে আত্মহারা বাবা মৃণালকান্তি কুণ্ডুও। তিনি বলেন, ‘এই গ্রামে হাজারো প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্বেও আমার দুই সন্তানের এই কৃতিত্বে আমি গর্বিত।’ মৃণালবাবুর আবেদন, ‘রাজ্য সরকার যেন আমার দুই সন্তানকে তাদের প্রতিভার বিকাশে সাহায্য করে। ওদের জন্য চাই পর্যাপ্ত পরিকাঠামো।’ বিশ্বজয়ী দুই খুদে প্রতিভাবানকে সংবর্ধনা দেন বড়জোড়া ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অলোক মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘আর্থিক অনটনের কারণে এই দুই উজ্বল নক্ষত্র ব্যঙ্ককের স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেনি। অথচ তারাই আজ অন্যদের পিছনে ঠেলে সোনা, রুপো ছিনিয়ে নিয়েছে। এই অদম্য মনোবলই আমাদের সম্পদ।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.