দয়াময় বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঁকুড়া: তেরো পার্বণের বাঙালি। এই পার্বণের মধ্যে বাঁকুড়ার বিভিন্ন জায়গায় বছরের বেশ কিছু মাসে ষষ্ঠী ঠাকুরের পুজোয় মাতেন মহিলারা। নানা নামে পূজিতা হন এই লোকদেবতা। জামাইষষ্ঠী, চাপড়াষষ্ঠী-সহ একাধিক নামে রয়েছে এই গ্রামীণ দেবতার। সরস্বতী পুজোর রাতে যে ষষ্ঠী ঠাকুরের পুজো হয় তার নাম ‘শিল ষষ্ঠী’। এই অনুষ্ঠানে শিল-নোড়াকে ষষ্ঠী ঠাকুর রূপে পুজো করা হয়।
[রাজ্য জুড়ে বাণী বন্দনা, কেমন কাটছে তারকাদের সরস্বতী পুজো?]
বাঁকুড়ার এটি একটি লৌকিক আচার। যে অনুষ্ঠানে ষষ্ঠী ঠাকুরের ৬০ জন ছেলে-মেয়ের ছবি এঁকে শিল-নোড়ার সঙ্গে একই সময় পুজো করা হয়। মশিয়াড়ি গ্রামের বাসিন্দা অলকা চট্টোপাধ্যায় বলেন, বরাবর এভাবেই পুজো করে আসছি। সন্তান ও পরিবারের মঙ্গল কামনায় এই পুজোর আয়োজন। পুজোর বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। সরস্বতী পুজোর দিনই আরাধনা হয়। এদিন রাতে শিল-নোড়াকে ভাল করে ধুয়ে ঘরের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা হয়। তার গায়ে হলুদ কাপড় বা গামছা জড়িয়ে দেওয়া হয়। মাথার উপর খড়িমাটি দিয়ে আঁকা হয় ষষ্ঠীর ৬০ জন ছেলে ও মেয়ের ছবি। গ্রামের বধূরাই এই ছবি আঁকেন। কখনও কখনও অপটু হাতে আঁকা এই ছবি লোকচিত্রের আকারে জায়গা করে নেয়। এই পুজোর উপাচারও অদ্ভুত ধরনের। অন্যান্য পুজোর মতো সিঁদুরের পাশাপাশি শামুক, দল, মেথি, হলুদও দিতে হয়। এছাড়া সেদিন রান্না করে পরের দিন পান্তা করে খাবার নিয়ম রয়েছে।
[সরস্বতী প্রতিমা গড়ে পড়াশোনার খরচ চালাতে ব্যস্ত এই কিশোর]
এইভাবে চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী এখানকার গ্রামগুলিতে চলে আসছে শিল ষষ্ঠীর পুজো। অনুষ্ঠানের পরের দিন গ্রামের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় বসে ষষ্ঠী ঠাকুরের কথা শোনার আসর। গ্রামের মহিলারা এখনও সেই জায়গায় এক হয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ব্রতকথা শোনেন। গ্রামের এক মহিলাই থাকেন গল্পের কথক। এভাবেই পুজোকে কেন্দ্র করে অন্যরকম উৎসবে মাতে বাঁকুড়ার বিভিন্ন জনপদ। বাঁকুড়ার লোকসংস্কৃতি গবেষক সৌমেন রক্ষিত বলেন, শিল ষষ্ঠী পুজো বাঁকুড়ার একটি বিশেষ পুজো। রাঢ়বঙ্গের এর সঙ্গে রয়েছে মানুষের আবেগ। ষষ্ঠী ঠাকুরের মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে এখনও মহিলাদের দেখা যায়। আর এভাবেই টিকে রয়েছে গ্রাম বাংলার নিজস্ব লৌকিক আচার।