Advertisement
Advertisement

Breaking News

শরীরে অংখ্য মৌমাছির কামড়েও নির্বিকার, তাক লাগাচ্ছেন বাঁকুড়ার যুবক

মধুর চাক ভেঙে গতে বাঁধা ছক ভেঙেছেন রাঙামাটির যুবক।

Bankura youth crafts honey amid swarm of bees
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:January 8, 2018 9:57 am
  • Updated:January 8, 2018 10:17 am

তন্ময় মুখোপাধ্যায়: সারা শরীরে কিলবিল করছে মৌমাছি। ভ্রমরের বিষাক্ত হুল মানুষটির কাছে কোথাও যেন হেরে যায়। মধু সংগ্রহের সময় হাজার হাজার মৌমাছি চেপে ধরলেও এই যুবক দমেন না। বরং মৌমাছি শরীরে চাপলেই তাঁর দস্যিপনা বাড়ে। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এ র বিশেষ প্রতিবেদন রাঙামাটির এই অকুতোভয়কে নিয়ে।

BANKURA-HONEY-MAN.jpg-2

Advertisement

[এ রাজ্যে আছে আরও এক গঙ্গাসাগর, পুণ্যস্নানে তৈরি তো?]

Advertisement

আলাপ করুন। সুখ মহম্মদ জালাল। বাঁকুড়ার অজ গাঁয়ের এই যুবকের সঙ্গে মৌমাছিদের যেন অদ্ভুত সম্পর্কের সমীকরণ। হাজার হাজার মৌমাছি তাঁকে ছেঁকে ধরলেও কিস্যু হয় না। আসলে মধু সংগ্রহের সময় ধোঁয়া, আগুন জ্বালিয়ে মৌমাছিদের ছন্দ নষ্ট করায় তাঁর সায় নেই। আত্মরক্ষায় শরীর ঢাকা পোশাক কিংবা কোনওরকম ক্রিম ব্যবহার করতেও একেবারে চান না সুখ। খালি হাতেই তাঁর যত বাহাদুরি। মৌমাছিরা মনের সুখে হুল ফোটালেও এতটুকু দমেন না। সেই আত্মবিশ্বাসেই বাঁকুড়ার ওন্দার যুবক মধু সংগ্রহে করে বেড়ান মালদহ, সোনামুখী কিংবা সুন্দরবনে। কখনও আবার বিহার, ঝাড়খণ্ড বা গুজরাটে। চাক ভাঙা মধু ওন্দায় এনে প্রক্রিয়াকরণ শুরু করেন। মধুর সৌজন্যে গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের মুখে হাসি ফুটেছে। প্রকৃতির স্বাদ বোতলবন্দি হয়ে পৌঁছে যাচ্ছে বাংলার নানা প্রান্তে। মধু আক্ষরিক অর্থেই তাঁর জীবনে মিষ্টতা এনেছে।

BANKURA-HONEY-MAN.jpg-3

[শংকরলাল জমানায় ফের জয়ের সরণিতে মোহনবাগান]

তবে সুখের এগোনোর পথটা ছিল একেবারে আঁকাবাঁকা। এগারোজনের বিশাল সংসার। ইচ্ছে থাকলেও ক্লাস এইটের বেশি পড়া হয়নি সুখ মহম্মদ জালালের। ওন্দার চিঙ্গানির বাসিন্দা ছোট থেকেই একটু ডানপিটে। গাছে চড়ার অভ্যাস ছিল বরাবর। সেটাই মধু সংগ্রহে কাজে দেয়। পাড়া-গাঁয়ে মধুর চাক ভাঙার ডাক পড়ত তাঁর। একদিন মৌচাক ভাঙার জন্য নির্দেশ আসে খোদ বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসকের থেকে। সময়টা ২০১৩ সাল। মৌমাছিদের বিরক্ত না করে নিপুণ হাতে সুখের কাজ দেখে চমকে গিয়েছিলেন মহকুমাশাসক। তিনি উদ্যমীকে পরামর্শ দেন এভাবে এর-ওর বাড়িতে মৌমাছির চাক ভেঙে সময় নষ্ট করলে চলবে না, সংগঠিতভাবে কিছু করতে হবে। মধু তৈরি‌র পর ঠিকমতো প্যাকেজিং করলেই খাটনি হবে সার্থক। এব্যাপারে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলেন মহকুমাশাসক। জেলাশাসকের হস্তক্ষেপে মধু তৈরির আধুনিক মেশিনের জন্য খাদি বোর্ড থেকে চার লক্ষ টাকার ঋণ পান সুখ। মৌমাছির পিছনে দৌড়ালে যে অনেক দূর যাওয়া যাবে তা তখন থেকেই বুঝতে শুরু করেন এই উদ্যমী।

[বাজপেয়ী-প্রণব মুখোপাধ্যায়কে কি ছাড়তে হবে সরকারি বাসভবন?]

বিষ্ণুপুরের পর সুখের হাতযশ পেতে থাকে বাঁকুড়ার নানা প্রান্ত। তাঁকে দেখে তাজ্জব বনে যান সাধারণ মানুষ। একবার তিনি খবর পান মালদার কালিয়াচকে লিচু ফুল থেকে ভালমানের মধু পাওয়া যায়। কার্যত বিনা সরঞ্জামে পৌঁছে যান মালদায়। একইভা‌বে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, নিজের জেলা রানিবাঁধ ও ঝিলিমিলির পলাশ ফুলের মধুও সংগ্রহ‌ শুরু হয়। আবার বিহার, ঝাড়খণ্ডেও মধুর টানে চলে যান। গুজরাটের আমেদাবাদে এক ধরনের ঘাসের ফুলেও ভাল মানের মধু হয়। সেই মৌ-ও রয়েছে সুখের জিম্মায়। শুরুর দিকে নিজের বাড়িতে মধু শোধনের কাজ শুরু করেন তিনি। পরে এক প্রশাসনিক আধিকারিকের পরামর্শে গ্রামের মেয়েদেরও এই কাজে জুটিয়ে ফেলেন। তৈরি হয় স্বনির্ভর গোষ্ঠী। জেলা থেকে ভিনরাজ্যে ঘুরে মধু জোগাড়ে আরও গতি আনেন সুখ। কাঁচা মধুকে শোধন ও প্যাকেজিং-এর কাজ করেন রাফিয়া বিবি, সকিয়া বিবি, কলসুমা বিবিরা। তাঁদের তৈরি মধু কাচের বোতলে ২৫ গ্রাম থেকে এক কেজিতে পাওয়া যায়।

[রিয়েল থেকে রিলে পদ্মশ্রী করিমুল, এবার সিনেমায় ‘অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’]

গোটা কাজটাই ঝুঁকির। কোনওরকম আত্মরক্ষা ছাড়াই খালি হাতে কাজ করতে গিয়ে মাঝেমধ্যে মৌমাছির কামড়ও সুখ কম খাননি। উনত্রিশ বছরের যুবার কথায়, এখন কয়েকশো মৌমাছি কামড়ালেও সামলে নিতে পারি। তাঁর এমন কাজ অনেকের কাছেই তা বিস্ময়ের। কীভাবে এটা সম্ভব? তা অবশ্য ভাঙেননি সুখ। আসলে মৌমাছিদের সঙ্গে তাঁর যে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। মাঝেমধ্যে হুল ফুটলেও, তার বিনিময়ে অনেক কিছুই পেয়েছেন এই যুবক। সংসার এখন একাই নিশ্চিন্তে এগিয়ে নিয়ে যান। বোনেদের বিয়ে দিয়েছেন। ভাইদের পড়াশোনার দায়িত্বও রয়েছে। ধোঁয়া বা আগুন জ্বালালে মধু পেতে কোনও সমস্যা হয় না। সুখ সবাইকে বোঝাতে চান এতে ক্ষতি হয়ে যায় মৌমাছির। এর ফলে বেশ কিছু মৌমাছি মারাও যায়। সুখ মনে করেন, যাদের থেকে আমরা এত কিছু পাচ্ছি, তাদের ক্ষতি করা ঠিক নয়। মৌমাছিরা বাঁচলে লাভ সরকারের। এই বার্তাই বিভিন্ন সরকারি শিবিরে বলে বেড়ান ওন্দার এই স্বপ্নসন্ধানী।

[জন্মদিনে স্বামীর সঙ্গে খুনসুটিতে মাতলেন বিপাশা, দেখুন ভিডিও]

হুল হজম করে মধুর ব্যবসায় সোনা ফলাচ্ছেন বাঁকুড়ার সন্তান। নিজের ব্রেনচাইল্ডের নাম রেখেছেন ‘ন্যাচারাল হানি’। ভাল প্যাকেজিং-এর দৌলতে সুখের মধু বাঁকুড়ায় ভাল বিক্রি হচ্ছে। মেলা, প্রদর্শনীর সুবাদে পৌঁছে যাচ্ছে রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তে। অনেকেই এমন মধুর খোঁজ করেছেন। সুখের কথায়, ‘‘মৌমাছির কামড় আমায় খেতে হবে। যখন দেখি আমার মতো গ্রামের অনেকেই মধুর ভরসায় সংসার ভালমতো চালাচ্ছেন তখন আর কোনও যন্ত্রণা থাকে না।’’  সুখের স্বর্গে এখনই পৌঁছে গিয়েছেন বলে মনে করেন না সুখ। মধুর হাত ধরে এলাকা শুধু অন্যরাও যাতে সুখের খোঁজ পান সেটাই চান এই নীরব যোদ্ধা। মৌমাছির ক্ষতি না করে মধু সংগ্রহে তাঁর একান্ত পদ্ধতি এখন রাঢ়বঙ্গের অন্যতম আলোচনার বিষয়। হাজার হাজার মৌমাছি সুখের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেও এক বিন্দু তাঁর ক্ষতি হয় না। কীভাবে তা সম্ভব এর উত্তর খুঁজতে অনেক উৎসাহী আসনে সুখের কাছে। তবে ধাঁধার সমাধানে এসে তারা যেন ম্যাজিক দেখে ফেরেন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ