নিজস্ব সংবাদদাতা: পড়াশোনার জন্য নেই পর্যাপ্ত অর্থ। বাবা মিষ্টির দোকানের সামান্য বেতনের কারিগর। তাই তিন ছেলের পড়াশোনা চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। পরিবারের এই অবস্থা দেখে পড়াশুনো চালাতে প্রতিমা গড়াকেই বেছে নিয়েছে তালডাংরার জুগদা গ্রামের কুশ দাস। একাদশ শ্রেণির ছাত্র কুশ এখন সরস্বতী প্রতিমা গড়ে তিন ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে ব্যস্ত। দিনের বেশিরভাগ সময়টাই এই ক’দিন তার খড়, মাটি, রং আর তুলির টানেই কেটে গিয়েছে। তবুও পড়াশোনা করে বড়ো হওয়ার স্বপ্ন এখন তার কাছে রং তুলির আঁচড়ের মতোই।
[তালপাতার সরস্বতী, রানিনগরে বাগদেবীর আরাধনায় চমক]
কুশ দাস বলে, “বাড়িতে অভাব। বাবা আমাদের তিনজনের পড়াশোনা চালাতে হিমশিম খেয়ে যান। তাই আমি প্রতিমা গড়ে কিছুটা রোজগার করি। এতে বাবার অনেকটা সুবিধে হয়।” এই গ্রামের একচিলতে মাটির বাড়িতে বাবা-মা এবং তিন ভাই মিলে মোট পাঁচ জনের সংসার। বাবা স্বপন দাস হাড়মাসড়ার একটি মিষ্টির দোকানে মিষ্টি তৈরির কাজ করেন। কিন্তু তার থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনওমতে টেনেটুনে সংসার চলে। ফলে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসারে ছেলে কুশই এখন অনেকটা ভরসা বলেই জানিয়েছেন তার বাবা।
স্বপন দাস বলেন, “আমি মিষ্টির দোকানের কারিগর। মাসে যা রোজগার করি তা দিয়ে কোনওমতে সংসার চলে। তিন ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খেয়ে যাই। ছোট ছেলে প্রতিমা গড়ে আমার অনেকটা সুবিধে করে দেয়।” এবারে মোট কুড়িটি সরস্বতী প্রতিমা তৈরি করেছে সে। প্রতিটি প্রতিমা বিক্রি হলে কুড়ি হাজার টাকার মতো আয় হবে। কিন্তু রং-সহ প্রতিমা তৈরির খরচের তুলনায় লাভ খুব একটা নেই বলেই জানিয়েছে ছাত্র তথা শিল্পী কুশ দাস। তবে শুধুমাত্র সরস্বতী প্রতিমা তৈরিই নয়। বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের ছোট ছোট প্রতিমা তৈরি করে পড়াশোনার খরচ চালায় সে।
কাঁকর ছড়ানো মোরামের মেঠো পথ ধরে প্রায় পাঁচ কিমি সাইকেলে করে বিবড়দা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে যায় সে। যদিও গীতাঞ্জলি প্রকল্পে একটি বাড়ি পেয়েছে কুশের পরিবার। কিন্তু দেওয়াল তুললেও এখনও ছাদ তৈরি করতে পারেনি। তাই বাঁকুড়া শহর থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে থেকেও পড়াশোনার প্রতি তাঁর এই আগ্রহকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকেই। কুশ নিজে বলছে, “আমরা তিনজনই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু মাঝে মাঝেই সংসারে অনটন দেখা দিচ্ছে। তবে আশা করি প্রতিমা গড়ে কোনওমতে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে পারব।”
[সামান্য ইরেজার দিয়ে সরস্বতী বানিয়ে নজির বাংলার এই শিল্পীর]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.