রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: তাঁর ঢাকের বোলে একসময় মন্ত্রের মতো মুগ্ধ হয়ে যেত আট থেকে আশি। ঢাকের তালে অজান্তেই কোমর দুলিয়ে ফেলতেন ঘরের বধূ থেকে অষ্টাদশী তরুণী। কিন্তু সেই ‘ঢাকের জাদুকর’ই আজ কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মুখে। তিনি আলিপুরদুয়ারের বঙ্গরত্ন বলরাম হাজরা। গত ৫ দিন থেকে খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আলিপুরদুয়ার ১ নম্বর ব্লকের দক্ষিণ পাটকাপাড়া গ্রামের বাড়ি ছেড়ে আপাতত আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে।
[আন্দোলনে কিছুটা সুর নরম উপাচার্যের, ৯ জনকে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ]
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ভাল জায়গায় নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই। শুক্রবার বিকেলে শিল্পীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। শিল্পীর স্ত্রী ভারতী হাজরা বলেন, “যখন শরীর ভাল ছিল, তখন বাড়িতে মানুষের ভিড় লেগেই থাকত। কত জায়গা থেকে কত মানুষ আসতেন। এখন কেউ খোঁজখবর নেয় না। চিকিৎসার টাকা নেই। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতাল আগেই বলেছিল, বাইরে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু টাকার অভাবে তা করতে পারিনি। তবে জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য তৃণমূল নেতা সৌরভ চক্রবর্তী ও মোহন শর্মা দু’জনেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল। এবার তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। কি হবে ভাবতে পারছি না। শেষ ৫ দিন কিছুই খাননি। কেউ সাহায্য না করলে আর হয়তো বাঁচাতেই পারব না।”
২০১৭ সালের শুরুর দিকে রাজ্য সরকার এই বিখ্যাত ঢাকবাদক বলরাম হাজরাকে বঙ্গরত্ন সন্মানে ভুষিত করেছে। নগদ এক লক্ষ টাকা দেওয়াও হয়েছিল। কিন্তু জটিল কর্কট রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ভেঙে পড়েছেন এই শিল্পী। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে এর আগে চিকিৎসা হলেও তাতে রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় হয়নি। কলকাতার ঠাকুরপুকুর ক্যানসার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিলেন ৭১ বছরের এই শিল্পী। কিন্তু পরিবারের দাবি, সেখানে ৪ লক্ষ টাকা দাবি করা হয়। টাকা না থাকার জন্য সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়। তারপর থেকে বাড়িতেই ছিলেন শিল্পী। তাঁর স্ত্রী ভারতী হাজরা বলেন, “বাড়িতে প্রতিবন্ধী ছেলে। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এক নাতনি আমাদের সঙ্গে থাকে। চারজনের সংসার টানাই এখন আমাদের কাছে দুঃসাধ্য। চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করব কি করে?” অথচ বলরাম হাজরার খ্যাতি বিশ্বজোড়া। শিল্প সংস্কৃতির জগতে ঢাকের জাদুকর বলরাম হাজরাকে এক ডাকে সবাই চেনেন। এহেন শিল্পীর শেষ জীবনের এই করুণ পরিণতি মেনে নিতে পারছেন এলাকার অনেকেই।
[পড়ুয়াদের সর্বনাশ করছে ‘চেরি’, গোয়েন্দাদের নজরে ৪৫টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট]
আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপার চিন্ময় বর্মন বলেন, “বলরাম হাজরার শ্বাসকষ্ট রয়েছে। সঙ্গে দুর্বলতাও রয়েছে। এছাড়া ওনার পুরনো অসুখ রয়েছে। আমরা চিকিৎসা শুরু করেছি।” তবে বলরামবাবুর চিকিৎসার বন্দোবস্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি চিকিৎসার সবরকম বন্দোবস্ত করা হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.