শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: প্রায় দু’বছর দুবাইয়ের সমুদ্র বন্দরে আটকে থাকার পর বাড়ি ফিরলেন বাঙালি ক্যাপ্টেন ঘাটালের বাসিন্দা যাজ্ঞিক মুখোপাধ্যায়। বুধবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন যাজ্ঞিকবাবু। সেখানেই অপেক্ষা করছিলেন পরিবারের লোকজন। স্ত্রী ছন্দা মুখোপাধ্যায়-সহ দুই পুত্র কন্যাকে কাছে পেয়ে চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি যাজ্ঞিকবাবু। আর প্রায় দুই বছর পর স্বামীকে কাছে পেয়ে আনন্দ চেপে রাখতে পারলেন না মেদিনীপুর বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছন্দাদেবীও।
[আরও পড়ুন: জরায়ুর জটিল অস্ত্রোপচারে ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম, সুস্থ মা]
পেশায় মেরিন ইঞ্জিনিয়ার যাজ্ঞিক মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনা থানার ডিঙ্গাল গ্রামে। ২০১৭ সালের ৫ আগস্ট যাজ্ঞিকবাবু এমটি আব্দুল রজাক নামে এক পণ্যবাহী জাহাজের ক্যাপ্টেন হিসাবে যোগ দেন। আট মাসের চুক্তিতে যাজ্ঞিকবাবুর মতো ৩৯ জন ভারতীয় সাতটি জাহাজে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। যথারীতি পণ্যবাহী জাহাজগুলি আরব দেশে রওনা দেয়। কিন্তু জাহাজ কোম্পানির বৈধ কাগজপত্র না থাকায় আরব দেশের উপকূলে জাহাজগুলিকে আটক করা হয়। ফলে চরম বিপদে পড়ে যান যাজ্ঞিকবাবুরা। কোম্পানি মাত্র দু’মাসের বেতন দেওয়ার পর আর কোনও আর্থিক সুবিধা দিতে পারেনি। এমনকী, দুবাই বন্দর থেকে বাড়ি ফেরারও কোনও ব্যবস্থা করতে পারেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ফলে মাসের পর মাস বন্দরেই আটকে থাকেন যাজ্ঞিকবাবুরা। গত ২২ জানুয়ারি সংবাদটি ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ প্রকাশিত হয়। জাহাজগুলিকে বেআইনি ঘোষণা করেন দুবাই বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে দুবাইয়ের সমুদ্র বন্দরে জাহাজে কপর্দকশূন্য অবস্থায় দিন কাটছিল ক্যাপ্টেন যাজ্ঞিক মুখোপাধ্যায়-সহ অন্য কর্মীদের। অভুক্ত অবস্থায় ছিলেন তাঁরা। যাজ্ঞিকবাবুর সমস্যার কথা জানিয়ে ছন্দাদেবী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে ভারতীয় দূতাবাস, বিদেশমন্ত্রক, এমনকী দুবাই বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বারবার যোগাযোগ করতে থাকেন। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন ছন্দাদেবী। প্রায় দু’বছর পর আইনি ঝামেলা কাটিয়ে স্বামীকে ফিরিয়ে আনলেন তিনি। আটক ৩৯ জন ভারতীয়ের মধ্যে দু’জন বাঙালি। গত ২৫ এপ্রিল যাজ্ঞিকবাবুদের কোম্পানির সঙ্গে চূড়ান্ত শুনানি হয় দুবাই আদালতে। তারপরই মুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ১১ মে চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেয়ে যান যাজ্ঞিকবাবু। অতঃপর বুধবার সকালে দেশের মাটিতে পা রাখেন যাজ্ঞিকবাবু। মেদিনীপুর থেকে পুত্র—কন্যাদের নিয়ে বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন ছন্দাদেবী। হাসিমুখে স্বামীকে ঘরে তুলে নিয়ে বলেন, “এই দু’বছর কী যে উৎকণ্ঠায় কাটিয়েছি তা বোঝাতে পারব না। শেষমেশ ওঁকে ফিরে পেলাম, এটাই বড় কথা।”
ছবি: সুকান্ত চক্রবর্তী