Advertisement
Advertisement
পথশিশু

শারীরিক প্রতিবন্ধকতার উর্ধ্বে মানবতা, কাকদ্বীপের পথশিশুদের বাঁচতে শেখাচ্ছেন ‘ভাল দাদু’

১৬টি পথশিশুর দায়িত্ব নিয়েছেন দিলীপ কুমার করণ।

'Bhalo Dadu' of Kakdwip has taken responsibility of 16 child
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:November 5, 2019 9:17 pm
  • Updated:November 5, 2019 9:17 pm

সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ডহারবার: ওরা জানে না কে ওদের বাবা, কেই বা ওদের মা। মায়ের কোমল হাত কোনওদিন মাথা ছুঁয়েছিল কিনা মনেই পড়ে না ওদের। বাবার সোহাগভরা শাসনও ভাগ্যে জোটেনি কোনওদিন। পরিচয়হীন ওরা। একটা পরিচয় অবশ্য আছে ওদের। ওরা পথশিশু। পথেই বেড়ে ওঠা। খোলা আকাশের নিচে রাতটুকু বিশ্রাম। তারপর দিনভর টো-টো করে ঘুরে বেড়ানো, আর এর-ওর কাছ থেকে চেয়েচিন্তে এঁটোকাঁটার চর্বিতচর্বণ। তাও কখনও জোটে কখনও জোটে না। এটাই ছিল ওদের ধারাবাহিক জীবনপঞ্জি। সেসব এখন পালটেছে ‘ভাল দাদু’র দৌলতে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ওদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দিলীপ কুমার করণ। সম্প্রতি এক দুর্ঘটনায় নিজের একটি পা হারিয়েছেন দিলীপবাবু। সেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে আশ্রমের কচিকাঁচাদের জন্যই নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তিনি।

একসময় ফুটপাত বা কারোর বাড়ির খোলাবারান্দায় ঠাঁই ছিল ১৬টি পথশিশুর। সেই অনিশ্চয়তা ছেড়ে ওরা এখন এক নিরাপদ আশ্রয়ে। ঠাঁই হয়েছে আনন্দমন আশ্রমে। সেখানেই ওরা এখন নিয়ম করে সকালে ঘুম থেকে ওঠে, পড়তে বসে। পেট ভরে দু’বেলা খেতেও পায় গরম ভাত আর শাকসবজি। খুশিতে তাই ডগমগ ওরা। আশ্রমের ভেতরেই এখন ওদের প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ। কাকদ্বীপ রোড অর্থাৎ ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই মাত্র কয়েক শতক জমির ওপর গড়ে উঠেছিল এই আনন্দ আশ্রম। আট বছর আগে। খড়ের ছাউনি দেওয়া মাটির একচিলতে ঘর ছিল সেসময়। এখন কিছুটা জায়গায় ইটের দেওয়াল উঠেছে। আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা দিলীপ কুমার করণ। কলকাতায় এক বেসরকারি হাসপাতালে একটা সময় কাজ করতেন। পথচলতি ফুটপাতের অনাথ শিশুদের দিকে চোখ চলে যেত প্রায়ই। তখন থেকেই ভাবনা ওদের জন্য কিছু করার। অবসরের পর তাই নিজের এলাকার পথশিশুদের ভবিষ্যৎ গড়তে উঠেপড়ে লেগেছেন তিনি। নিজের সারাজীবনের সঞ্চিত অর্থ খরচ করছেন ওদের জন্যই।

[আরও পড়ুন: ‘মুখ্যমন্ত্রী NRC’র সংজ্ঞাই জানে না’, মমতাকে তোপ মুকুলের ]

সেখানেই তুখড় আনন্দে একটু একটু করে বড় হচ্ছে বাপ-মা হারা ষোলোটি শিশু। ওদের প্রত্যেকেরই বয়স তিন থেকে আট বছরের মধ্যে। তিন বছরের পিউ, বছর ছয়েকের গণেশ কিংবা আট বছরের খোকনের কাছে যেন ভগবান দিলীপবাবু। ওই অসহায় ও অনাথ শিশুদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে উঠেপড়ে লেগেছেন ‘ভাল দাদু’। হ্যাঁ, এই নামেই ডাকে ওরা দিলীপবাবুকে।পিতার পরম স্নেহে লালন পালন করছেন ষোলজন পথশিশুকে।কিন্তু, ওরা এভাবে সারাজীবন কাটাতে চায় না।অনেক লেখাপড়া শিখে বড় হয়ে গাড়িঘোড়া চড়তে চায় গণেশ, খোকন, পিউরা। ‘ভাল দাদু’ বলেছেন ওদের সেকথা। স্বামী বিবেকানন্দের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত দিলীপবাবু ওই অসহায় ও অনাথ শিশুদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। পিতার পরম স্নেহে লালন পালন করছেন ষোলজন পথশিশুকে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: মাসির বাড়ি থেকে আর ফেরা হল না, ট্রেন থেকে পড়ে মৃত যুবকের পরিবারে হাহাকার ]

যদিও আশ্রমে সমস্যা অনেক। তবে সেসব সমস্যা সমাধানে পাশে পেয়েছেন এলাকার আরও কিছু সহৃদয় মানুষকে। সাহায্যে এগিয়ে এসেছে কয়েকটি সংস্থাও। ইউনিটি সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামে এক সেচ্ছাসেবী সংগঠন সম্প্রতি খাদ্যসামগ্রী ও বইখাতা দিয়ে দিলীপবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছে।

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ