স্টাফ রিপোর্টার, শিলিগুড়ি: পাহাড় ইস্যুতে এবার সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবনকুমার চামলিংকে সরাসরি কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন মোর্চার নয়া সভাপতি তথা জিটিএ-র প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় তামাং। রবিবার পাহাড়ের পাদদেশে সুকনার জনসভা থেকে চামলিংকে উদ্দেশ্য করে বিনয়ের তোপ, “আগুনে হাত দেবেন না। দার্জিলিংয়ের আন্দোলন আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এই নিয়ে সিকিমের মাথা ঘামানোর দরকার নেই।” তাঁর হুঁশিয়ারি, “এরপরও যদি এমনটা চলতে থাকে, তাহলে আমরাও সিকিমের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করব।”
একইসঙ্গে সুকনা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের মাঠে এদিনের জনসভায় দলীয় কর্মী-সমর্থকদের আশ্বস্ত করে বিনয়ের দাবি, “নয়া প্রশাসনিক ব্যবস্থা আসছে। এতে আত্মপরিচয়ের সমস্যা মিটবে।” তবে সেই ব্যবস্থা কী, সে সম্পর্কে এদিন ভাঙতে চাননি বিনয়। এদিনের জনসভার পর বিমল গুরুং ও রোশন গিরির পাহাড়ে আর কোনও অস্তিত্ব থাকল না বলেও দাবি করেন তিনি। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারকে তাঁর খোলা চ্যালেঞ্জ, “জনপ্রিয়তা নিয়ে সন্দেহ থাকলে এখনই পাহাড়ে নির্বাচন করান। দেখবেন, পাহাড়ের মানুষ কার সঙ্গে রয়েছে।” ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে যে আর সমর্থন নয়, এদিন তারও ইঙ্গিত দিয়ে দেন বিনয় তামাং। মোর্চার সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ডাকে এদিনই ছিল বিনয় তামাংয়ের প্রথম প্রকাশ্য জনসভা। ফলে তিনি কী বলেন, সেদিকে নজর রেখেছিল রাজনৈতিক মহল। পাহাড়-তরাইয়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে এদিন মোর্চার কর্মী-সমর্থকরা সভাস্থলে আসেন। টানা এক ঘণ্টা ৪১ মিনিটের ভাষণে এদিন বিনয় ছিলেন যথেষ্টই আক্রমণাত্মক।
পাহাড়ের রাজনীতিতে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর নাক গলানো নিয়ে অনেক দিন ধরেই প্রশ্ন উঠছে। এমনকী সিকিমকে মাঝখানে রেখে প্রতিবেশী চিন এই অঞ্চলকে কবজায় নিতে চাইছে বলেও গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে এদিন কড়া বার্তা দেন বিনয় তামাং। তিনি বলেন, সিকিমবাসীর সঙ্গে তাঁদের কোনও বিরোধ নেই। কিন্তু দার্জিলিংয়ের রাজনীতি নিয়ে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী নাক গলালে তা মেনে নেওয়া হবে না। একইসঙ্গে ১৯৫০ সালের ভারত-নেপাল চুক্তি নিয়েও খোলামেলা বিতর্কের দাবি জানিয়েছেন তিনি। পাহাড়ে দু’বার বিজেপির সাংসদকে জিতিয়েও যে পাহাড়বাসীর কোনও লাভ হয়নি, সেকথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বিনয় এদিন বলেন, “২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে পাহাড়বাসী ভোট দেবে কি না তা নিয়ে ভাবতে হবে।”
এদিন ভাষণের শুরুতেই বিনয় জানিয়ে দেন, তিনি ‘শত্রুবিহীন’ রাজনীতি চান। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে নানা কটূক্তির উল্লেখ করে বিনয়ের বক্তব্য, তিনি সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চান। এর প্রমাণ দিতে শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াং যেতে রোহিনির রাস্তা সুবাস ঘিসিংয়ের নামে করার কথা ঘোষণা করেন তিনি। পাশাপাশি দিল্লি ও কলকাতার গোর্খা ভবনেও বিমল গুরুংয়ের আমলে সরিয়ে দেওয়া সুবাস ঘিসিংয়ের নামের ফলক পুনরায় স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। বিনয় বলেন, “যার হাত দিয়ে যে উন্নয়ন হয়েছে, সেখানে তাঁর নামই থাকবে। এই নিয়ে আমি কোনও রাজনীতি চাই না।” পাহাড়ে আর কোনও বন্ধ হবে না বলেও এদিন নিজের ভাষণে স্পষ্ট করে দেন বিনয়। নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থার ইঙ্গিত দিয়ে তাঁর বক্তব্য, পাহাড়বাসীকে আন্দোলনে পথে নামিয়ে জেলে ঢোকাতে চান না তিনি।
দার্জিলিংয়ে শিল্প স্থাপনে ট্যাক্স ফ্রি জোন ঘোষণা, বিদ্যুৎ বিলে ভরতুকি দেওয়া ,হাসপাতালগুলিকে সুপার স্পেশালিটি করা, মেধাবী পড়ুয়াদের স্কলারশিপ দেওয়া, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং-সহ উচ্চশিক্ষায় জিটিএ এলাকার কোটা, পাহাড়ে স্পোর্টস অ্যাকাডেমি গঠন, হেলিপ্যাড নির্মাণ-সহ একাধিক দাবি ও পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। সভায় বিনয় ছাড়াও বক্তব্য রাখেন জিটিএ-র ভাইস চেয়ারম্যান অনিত থাপা-সহ মোর্চা নেতারা। তাঁরা উন্নয়নের পক্ষেই সওয়াল করেন। পাশাপাশি নিজেদের দাবি আদায়ে কেন্দ্রের কাছে দরবার করার কথা ঘোষণা করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.