নন্দন দত্ত, সিউড়ি: ভারতের রাষ্ট্রপতির নাম কী? প্রশ্নটা যে শ্রেণিকক্ষের পড়ুয়াদের করা হল প্রত্যেকেই খাতায়-কলমে হাই স্কুলে পড়ে। কিন্তু উত্তর? উত্তর শুনে তো প্রশ্নকর্তার চোখ কপালে ওঠার উপক্রম। কারণ উত্তর দেওয়া ছাত্রীর মতে ভারতবর্ষের বর্তমান রাষ্ট্রপতির নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নাম কী? যাহ বাবা, এই প্রশ্নের উত্তরও দিতে হবে নাকি? এমনটাই হাবভাব ছিল বীরভূমের মুরারই থানার গোড়শা হাই স্কুলের পড়ুয়াদের।
২০১২-১৩ সালে বীরভূমের মুরারই থানার গোড়শা জুনিয়ার হাই স্কুল অনুমোদন লাভ করে। স্কুলে শুরু থেকেই একজন শিক্ষক। তাঁকে ঘিরেই শুরু হয় স্কুল। মিড ডে মিল দেখতে হয় তাঁকেই। সরকারি কাজেও তিনিই যান। এক শিক্ষকের দায়িত্বে শিক্ষা পাচ্ছে স্কুলের ৩২৪ জন ছাত্রছাত্রী। কোনদিন অফিসের কাজে বাইরে গেলে সেদিন স্কুল বন্ধ থাকে। ফলে মিড ডে মিলে খামতি না থাকলেও পড়াশোনার এই হাল স্কুলে।
[ডোমকলে সম্প্রীতির নজির, শিবভক্তদের সেবায় রেজাউল-আলমরা]
স্কুলেরই এক ছাত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রশ্নটি। ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপতির নাম কী? সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রীর উত্তর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর প্রধানমন্ত্রী? সে প্রশ্নের উত্তরে কেবল মোদি শব্দটুকুই মিলল। পুরো নাম জানা নেই। এবার প্রশ্ন এল তাহলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নাম কী? হালকা গুঞ্জন শোনা গেল ক্লাসে। সকলেই একে-অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু শেষমেশ আর বলে উঠতে পারেনি। স্বাধীনতার সত্তর বছর পর ভারতবর্ষের বানানও বলতে পারেনি পড়ুয়ারা।
সপ্তম ও অষ্টম, দুই শ্রেণির সমস্ত ছাত্রছাত্রীর অবস্থা এরকমই। কিন্তু কেন? অষ্টম শ্রেণির মিলি কোনাই ও সৌরভ রাজবংশীদের যুক্তি, স্কুলে একজন মাত্র শিক্ষক। ফলে দিনে একটার বেশি ক্লাস হয় না। পড়াশোনা হয় না বললেই চলে। চারটি ক্লাসে কমপক্ষে চারজন শিক্ষক প্রয়োজন। একমাত্র শিক্ষক সুকান্ত মল্লিক বলেন, “আমি একমাত্র শিক্ষক। ফলে যেমন পড়াশোনা হওয়ার কথা তেমনই হচ্ছে”। যদিও প্রশাসনিক কর্তাদের কথায় শুধু গোড়শা নয়, জেলার বেশিরভাগ জুনিয়র স্কুলগুলির অবস্থা এমনই। শিক্ষকের অভাবে খাতায়-কলমে অষ্টম শ্রেণি পাশ ছাত্র-ছাত্রী শুধুমাত্র স্বাক্ষর হচ্ছে। যার কোনও মান বিচারই হয় না বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। কিন্তু এর প্রতিকার কী? এই প্রশ্নের উত্তর বড়রাও দিতে পারলেন না।
[রাজ্যের আকাশে ফের ঘনাচ্ছে নিম্নচাপ, ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা]