নন্দন দত্ত, সিউড়ি: বছরভর বইয়ে মুখ। পরীক্ষা, সিলেবাসের চাপ। হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে পড়ুয়াদের অবসরের ব্যবস্থা করে দেন দেবী সরস্বতী। তবে পুজো মানে স্রেফ ঘুরে-বেড়ানো বা খিচুড়ি খাওয়া নয়, ভাবনার হাতেখড়িও। সিউড়ির বেশ কিছু স্কুলের পড়ুয়ারা সেই কথা বুঝিয়ে দিল। কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা সাইকেল দিয়ে অন্যরকম কাজ করেছে। কারও ভাবনা অন্যরকম।
[সরস্বতী প্রতিমা গড়ে পড়াশোনার খরচ চালাতে ব্যস্ত এই কিশোর]
বীরভূম জেলা স্কুলের ঐতিহ্য ১৬৫ বছরের। প্রতিবারের মতো শিল্পকলার বিভিন্ন মাধ্যম বেছে নেয় তারা। এবার তারা ৩৫ ফুট উচ্চতায় বিভিন্ন ধরনের সাইকেল দিয়ে মণ্ডপ সাজিয়েছে। স্কুলে ঢুকলে মনে হয় যেন সবুজসাথীর সমাবেশ। শিক্ষকরা জানালেন, এই শিল্পকলাকে বলা হয় ‘সাইট স্পেসিফিক ইনস্টলেশন’। স্কুলের দুই কৃতী শিল্পগুরু সারথি দাস ও প্রদীপ সাউ বলেন, এধরনের শিল্পকলা গ্যালারির জন্য নয়। বরং খোলামেলা জনগণের জন্য। যদিও শিল্পমাধ্যমে অনভ্যস্ত চোখে এর সৌন্দর্য্য কতটা গ্রহণযোগ্য, সে নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে ছাত্রজীবনের সাইকেল এবং তা সবুজসাথীকে ঘিরে গড়ে ওঠায় স্বাভাবিক ভাবেই আগ্রহ বাড়ছে। জেলা স্কুলের প্রধানশিক্ষক চন্দন সাহা বলেন, “ছাত্র জীবনের সঙ্গে সাইকেলের একটা আবেগ মিশে থাকে। যেভাবে মনে ধরে থাকে স্কুলের সরস্বতী পুজো। তাই সরস্বতী পুজোয় যদি সাইকেল মণ্ডপ সাজানোর উপকরণ হয়, সহজেই তা সকলে মনে রাখবে। এটাই এবারের বৈশিষ্ট্য।” স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, সাড়ে তিনশোর বেশি সাইকেল দিয়ে তৈরি হয়েছে জেলা স্কুলের থিম ভাবনা। স্কুলের গোটা চত্বর সাইকেলের নানা অনুষঙ্গে ভরিয়ে তুলেছে বিদ্যালয়ের দশম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্ররা।
[রাজ্য জুড়ে বাণী বন্দনা, কেমন কাটছে তারকাদের সরস্বতী পুজো?]
অন্যদিকে সিউড়ির দুটি স্কুলই শতাব্দী প্রাচীন। বেণিমাধব স্কুলের ভিতরে যেন আস্ত উঠে এসেছে দুবাই শহর। তুলে আনা হয়েছে বিখ্যাত ‘বুর্জ খলিফা’। যেটি বানানো হয়েছে পুরনো সুতোর রিল দিয়ে। যার ভেতর খেলা করছে আলোর বিচ্ছুরণ। দুবাই শহরের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য জায়গাগুলিকেও তুলে ধরা হয়েছে। পিরামিড হয়েছে পুরনো পরীক্ষার খাতা, পুরানো খবরের কাগজ, পুরনো শাড়ি দিয়ে। স্কুলের তিনটি ক্লাসরুমেই গত একমাস ধরে তিল তিল করে এই কর্মকাণ্ড গড়ে তুলেছে পড়ুয়ারা। স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক অভিষেক দাঁ জানান, “গতবার আমাদের ভাবনা ছিল জল-তল। আমরা এমন থিম করি যেন সকলেই বুঝতে পারবে। পুজোর সঙ্গে শিল্প প্রদর্শনীও করা হয়।”
ছবি: বাসুদেব ঘোষ