Advertisement
Advertisement
রথ

বিতর্কের মাঝেই ফের পথে হেতমপুরের রথ, লোকমুখে ঘুরছে অলৌকিক কাহিনি

হেতমপুরের রথের ইতিহাস প্রায় ৩০০ বছরের।

Birbhum's Hetompur to witness Rath Yatra after a decade
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:July 3, 2019 4:00 pm
  • Updated:July 3, 2019 4:42 pm

নন্দন দত্ত, সিউড়ি: একযুগ পরে এবার সিউড়ির হেতমপুর রাজবাড়ি থেকে আগামী বৃহস্পতিবার বেরোবে রথ। ইংল্যান্ড থেকে আনা সেই শতাব্দী প্রাচীন রথকে পথে নামাতে তাই সাজো সাজো রব। চলছে রথ পরিষ্কারের কাজ।  এবার রাজবাড়ির অধিষ্ঠিত দারু মূর্তির গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু ও নিতাইয়ের মূর্তি রথে বসানো হবে। সে জন্য মূর্তি তৈরির প্রস্তুতিও চলছে।

হেতমপুরের রথের ইতিহাস প্রায় ৩০০ বছরের। রাজা রামরঞ্জন চক্রবর্তী গৌরাঙ্গ মন্দির প্রতিষ্ঠা করে প্রভুকে রথে চাপিয়ে নগর প্রদক্ষিণে বের করেন। কালের নিয়মে রাজত্বের দৈনদশার জেরে রথ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় গৌড়ীয় মঠের হাতে। কিন্তু বর্তমানে হেতমপুরের রাজকন্যা বৈশাখী চক্রবর্তী রাজবাড়ি থেকেই তাঁদের পূর্বপুরুষের রীতি মেনে রথ পথে বের করতে উদ্যোগী হন। কিন্তু তাঁর সিদ্ধান্তে বিতর্ক শুরু হয়েছে মঠে। গৌড়ীয় মঠের দাবি আলোচনা না করে এভাবে একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না রাজকন্যা। তাঁদের দাবি, হেতমপুরে গৌরাঙ্গ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা। প্রতিবছর সেখান থেকে রথ বের হত। রথ রাজবাড়ি হয়ে যেত রাধাবল্লভ মন্দিরে।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: অব্যাহত রাজনৈতিক হিংসা, বিজেপি কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুরে অভিযুক্ত শাসকদল ]

Advertisement

এই রথকে ঘিরে একটা অলৌকিক কাহিনিও আছে। রাজবাড়ির অন্দরে খবর ছিল, বজ্রাঘাতে মৃত্যু যোগ রাজা রামরঞ্জন চক্রবর্তীর। একবার বজ্রাঘাতের রাজাকে বাঁচাতে গৌরাঙ্গদেব নিজের আঙুলে বজ্র ধারণ করে নেন। সে কারণে বিগ্রহের একটি আঙ্গুল ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যার ফলে তৈরি হয় নতুন বিগ্রহ। কিন্তু সেই পুরনো বিগ্রহকে সরানো হয়নি। দুই বিগ্রহ ও মহাপ্রভু ও নিতাইকে নিয়ে রথযাত্রা শুরু হয়। শতবর্ষ আগে ইংল্যান্ডের একটি কোম্পানি থেকে আনা হয় আধুনিক রথটিকে। কিন্তু ২০০৭ সালের পর আর রথকে পথে নামায়নি রাজপরিবার। রাজবাড়ির সূত্রে খবর,  রাজা মাধবীরঞ্জন চক্রবর্তী কিছুটা বাধ্য হয়েই রথের দায়িত্ব তুলে দেন গৌড়ীয় মঠের হাতে। এমনকী, তাঁদের হাতে গৌরাঙ্গের সেবার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়।

নতুন দায়িত্ব নিয়ে নিজস্ব ভাবনায় রথ পরিচালনা করত গৌড়ীয় মঠ। তারা গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে মন্দিরে রেখে জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রার মূর্তি চাপাত রথে। সেই রথ রাজবাড়িতেও যেত না। এই নিয়েই রাজবাড়ির সদস্যদের সঙ্গে গৌড়ীয় মঠের বিরোধ শুরু হয়। শেষে মাধবীরঞ্জনের কন্যা বৈশাখী চক্রবর্তী এবছর রথ পরিচালনার উদ্যোগ নেন।

[ আরও পড়ুন: এটিএম লুটের চেষ্টা বানচাল, সিনেমার কায়দায় গ্রেপ্তার ১ ]

এদিকে গৌরাঙ্গ মন্দির গৌড়ীয় মঠের সেবায় আছে। তাই এবার নতুন বিগ্রহকে অধিষ্ঠিত করে রথ পথে নামানোর উদ্যোগ শুরু হয়েছে। বৈশাখীদেবী বলেন, “রাজবাড়ির রীতি মানে না ওরা। রাজবাড়িতে রথ আসে না। রীতি নষ্ট করে দিয়েছে। তাই এবার আমরা নিজেরা রাজবাড়ি থেকে রথ বের করব।” যদিও হেতমপুর গৌড়ীয় মঠের সম্পাদক ত্রিদণ্ডী মহারাজ বলেন, “যিনি উদ্যোগ নিচ্ছেন, তিনি কোনও নিয়ম জানেন না। রাজা রামরঞ্জন চক্রবর্তী এই সম্পত্তি কারও ব্যক্তি মালিকানাধীন করে যাননি। তিনি ব্রজবালা ট্রাস্ট করে যান। সেই ট্রাস্টের সদস্য মাধবীরঞ্জন নিঃশর্তে আমাদের হাতে চুক্তি করে রথ ও মন্দির তুলে দেন। এতদিন রাজপরিবারের কেউ তো চেষ্টা করেননি। এই উদ্যোগের পিছনে কোনও উদ্দেশ্য নাকি সরকারি অর্থ সাহায্যের উৎসাহ আছে তা দেখা দরকার।”

ছবি: শান্তনু দাস

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ