সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: মতুয়া বিদ্রোহের আবহে সোমবারের পর মঙ্গলবারও টলোমলো রাজ্য বিজেপি।
এদিন সন্ধেয় ঠাকুরনগরে নিজের বাড়িতে নিজের অনুগামী ৫ মতুয়া বিধায়ককে বৈঠকে ডেকেছিলেন স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় জাহাজ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর (Shantanu Thakur)। যদিও বৈঠকে প্রথমে হাজিরা দেন ৩জন। তাঁদের মধ্যে একজন শান্তনুর অগ্রজ সুব্রত ঠাকুর। বাকি দু’জন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক অশোক কীর্তনীয়া ও হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার। বৈঠকে দেরিতে আসেন রানাঘাট দক্ষিণের বিধায়ক মুকুটমণি অধিকারী। কল্যাণীর বিধায়ক অম্বিকা রায়। আরেক বিধায়ক বঙ্কিম ঘোষের আসা নিয়ে কানাঘুষো থাকলেও তাঁর দেখা মেলেনি।
এদিকে, মঙ্গলবার সকালেই দলের ‘মতুয়া গড়’ রক্ষায় মাঠে নামতে দেখা গিয়েছে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে। দুপুরে কলকাতায় রাজ্য দপ্তরে বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক স্বপন মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। দলীয় সূত্রে খবর, দিল্লি থেকে বি এল সন্তোষের নির্দেশেই এই বৈঠক। স্বপন মজুমদার মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি হলেও বনগাঁ বিজেপির অভ্যন্তরীণ অবস্থানে তিনি শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে নেই। সেই বিরোধের অঙ্কেই এদিন সুকান্ত ও স্বপনের বৈঠক। সূত্রের খবর, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে রাজ্য কমিটিতে মতুয়া প্রতিনিধিত্ব না থাকার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন সুকান্ত। বলেছেন, যখন রাজ্য কমিটির জন্য বিভিন্ন নাম নিয়ে বিবেচনা চলছিল, তখন শান্তনু ঠাকুরের পক্ষ থেকে কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। জানা গিয়েছে, শান্তনু ঠাকুরের ‘বিদ্রোহ’-র বিষয়টি অন্যান্য মতুয়া নেতা ও মতুয়া সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ কী চোখে দেখছেন, সে কথাও জানতে চাওয়া হয় বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়কের কাছে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের স্বপন মজুমদার জানান, তাঁকে শান্তনু ঠাকুরের বৈঠকে ডাকা হয়নি। ফলে ওই বৈঠকে তাঁর যাওয়ার প্রশ্নও নেই। বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়কের দাবি, শান্তনু ঠাকুরবাড়িতে যে বৈঠক ডেকেছেন, সেখানে তিনজনের বেশি বিধায়ক উপস্থিত হবেন না। বাস্তবে হয়েছেও তাই! মতুয়া সমাজে শান্তনুর প্রভাব সম্পর্কে স্বপনবাবুর দাবি, কয়েকজন বাদে বেশিরভাগ বিধায়কই শান্তনুর সঙ্গে নেই। তাঁর কথায়, “আমরা শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে নেই, আমরা বিজেপির সঙ্গে আছি।” রাজ্য কমিটিতে মতুয়া প্রতিনিধিত্ব না থাকার প্রশ্নে পরোক্ষে শান্তনুকেই দোষী সাব্যস্ত করে স্বপন বলেন, রাজ্য কমিটিতে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মতুয়া সদস্যদের নাম পাঠানো দরকার ছিল। তা করা হয়নি।
মতুয়া বিক্ষোভ ও শান্তনুর ক্ষোভ প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বা অন্য কোনও শীর্ষনেতা। এ প্রসঙ্গে সুকান্তবাবুর বক্তব্য, “এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। আমরা মিটিয়ে নেব।” দলীয় সূত্রে খবর, দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা ফোন করেন শান্তনু ঠাকুরকে। তারপরও অবশ্য বরফ গলেনি। অন্যদিকে, মঙ্গলবার সন্ধেয় বৈঠকে যোগ দিতে ঠাকুরবাড়িতে এসে অসীম সরকার জানান, আজকের বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না৷ শান্তনু ঠাকুর তাঁকে আসতে বলেছেন বলে তিনি এসেছেন। তাঁর মন্তব্য, “রাজ্যের ৮৩টি বিধানসভা আসন মতুয়া অধ্যুষিত। সেখানকার জয়-পরাজয় নির্ধারণ করেন মতুয়ারা। তাহলে মতুয়া অধ্যুষিত বিধানসভাগুলিতে আলোচনা করে পদাধিকারী ঠিক করা উচিত ছিল। সেই আলোচনা হয়নি বলেই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।”
অসীমবাবু জানান, বঙ্কিম ঘোষ-সহ ৬-৭ জন বিধায়কের আসার কথা ছিল। যদিও রাত আটটা পর্যন্ত ঠাকুরবাড়ির সদস্য সুব্রত ঠাকুর ছাড়া উপস্থিত বিধায়কের সংখ্যা মাত্র দুই। সোমবার দলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে ছিলেন শান্তনু। তারপর এদিনের এই বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক কৌতূহল ছিল। যদিও দু’জনের বেশি বিধায়ক না আসায় বিদ্রোহ কতটা ফলপ্রসূ, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে রাজনৈতিক মহলে। এরই মধ্যে কলকাতায় বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতারা বৈঠকে বসেন। আর তারই মধ্যে বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর এদিন সকালে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। তাঁর অভিযোগ, বিজেপি মতুয়াদের জন্য কিছুই করেনি। তিনি বলেন, “শান্তনু ঠাকুরদের সৎ বুদ্ধির উদয় হোক। কেউ তৃণমূলে আসতে চাইলে একসঙ্গে দল করতে আমার আপত্তি নেই। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.