পলাশ পাত্র, তেহট্ট: সন্তানরা জন্মান্ধ৷ তাদের দেখভাল করতেন বাবা৷ কিন্তু সেখানেও বিপদ৷ ষাঁড়ে গুঁতিয়ে দেওয়ার জেরে দৃষ্টিশক্তি হারালেন বাবাও৷ দৃষ্টিশক্তিহীন পরিবারের তিন সদস্যকে নিয়ে গ্রামের বাসিন্দাদের দুশ্চিন্তা কম ছিল না৷ কিন্তু সেই গ্রামেই আজ খুশির ঝলক৷ কারণ, ওই পরিবারের মেয়েই উচ্চমাধ্যমিকে পেয়েছে ৪১১ নম্বর৷ ফলাফল দেখে অবাক ছাত্রীর পরিজন থেকে গ্রামবাসী প্রায় সকলেই৷
বান্টির বোন জন্মান্ধ লিপিকা গত বছর কৃষ্ণনগরের একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করে। সেও পড়াশোনা করে। সংসারে একমাত্র রোজগেরে বাবা ইদ্রিশ মণ্ডল মাঠে কাজ করেন৷ সেই টাকা দিয়েই কোনওক্রমে সংসার চলে৷ বছর সাতেক আগে পথে তাঁকে ষাঁড়ে গুঁতিয়ে দেয়। চিকিৎসা হয়। তারপর থেকেই বছর পঞ্চাশের ইদ্রিশ মূক-বধির হয়ে যান। সংসারে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। এই অবস্থায় সন্তানদের পড়াশোনা চালাতেন বান্টির মা সাহিলা বিবি৷ বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন তিনি। সেই পরিবারেরই সন্তান বান্টি৷ বীরপুর হাইস্কুলের ছাত্রী সে৷ বাড়িতে ৬-৭ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করে উচ্চমাধ্যমিকে ৪১১ নম্বর পেয়েছে। বান্টি বলে, ‘‘এই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে বন্ধুবান্ধব, স্কুলের শিক্ষক এবং পরিজনদের সারাক্ষণ পাশে পেয়েছি। ইচ্ছাশক্তির জোরেই আমি পড়াশোনা করি। অসুস্থ হয়েছি। সে কারণে দুবছর আমার পড়া বন্ধ ছিল। তাও ফের লেখাপড়া শুরু করি৷ আমি বড় হয়ে শিক্ষিকা হতে চাই।’’
ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেছে বান্টি। রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে সে৷ বীরপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘বান্টি খুব ভাল মেয়ে। ও ভাল গানও করে। ও যেভাবে প্রতিবন্ধকতা জয় করল তাতে আমরা গর্বিত।’’ মা সাহিলা বিবি, বাবা ইদ্রিশ খুবই খুশি। তাঁরা বলেন, ‘‘মেয়ের সাফল্যে বাবা-মা খুশি৷ আমার মেয়ের ফলে খুশি।’’ উচ্চমাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পর বান্টির ভাঙা বাড়িতেই যেন বসেছে চাঁদের হাট৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.