সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: পুরসভায় পরিবর্তন আসতেই বদলে যাচ্ছে ‘মিরিক। পর্যটন দপ্তরের উদ্যোগে এক বছরের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে সম্পূর্ণ নতুন মিরিক ডেস্টিনেশন। মুখ্য ভূমিকায় অবশ্যই মিরিকের বিখ্যাত সুমেন্দু লেক, যা মিরিক লেক নামেই পরিচিত। সঙ্গে মেঘের রাজ্যে বিচরণের জন্য চা বাগানে রাত্রিবাস। তৈরি হচ্ছে পর্যটন দপ্তরের কটেজও। সেখানেই হাত-পা ছড়িয়ে দিব্যি ছুটির দু’টো দিন রেখে আসতে পারেন।
প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন খোদ পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই মিরিক নিয়ে উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব ছিল। তা বিভিন্ন কারণে হয়নি। এবার পুরসভা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় পর্যটন দপ্তর ঢেলে সাজাবে মিরিককে। মন্ত্রী বলেন, “দার্জিলিং, গ্যাংটকের সঙ্গে স্বতন্ত্র পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এটি যেন এক সারিতে উচ্চারিত হয় তার জন্য সবরকম পদক্ষেপ করা হবে।”
[জানেন, বিশ্বের এই পাঁচটি নৈসর্গিক দ্বীপ এখনই কিনে ফেলতে পারেন আপনিও?]
প্রথম উদ্যোগ হিসেবে রাজ্য ও জিটিএ-র তরফ থেকে মিরিকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার সব ক’টি রাস্তাকে চওড়া ও সারাই করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে দখল হয়ে যাওয়া বিভিন্ন এলাকাগুলি দখলমুক্ত করে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে এ ওয়ান ক্যাটেগরিতে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তা শেষ হলেই কেন্দ্রিক সৌন্দর্যকে বাড়ানোর কাজ শুরু হবে।
সুমেন্দু লেক সংস্কারের কাজ প্রায় শেষ। সবুজায়ন করা হয়েছে লেকের চারিদিকে। নতুন করে ঘাস লাগিয়ে নেড়া মাঠে ঘোড়ার আদর্শ বিচরণক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি তৈরি হবে একটি রোপওয়ে। রোপওয়েটি কোথা থেকে কোথায় যাবে, তা ঠিক হয়নি এখনও। তবে মিরিককে কেন্দ্র করে তা তৈরি করা হবে বলে মন্ত্রীর দাবি। পর্যটক আকর্ষণ বাড়াতে একটি কেবল কার সার্ভিস চালু হবে মিরিকে।
[রাজ্যে ঘোরার অলিগলি হাতের মুঠোয়, আসছে নয়া অ্যাপ]
বিনোদনের এই সমস্ত সামগ্রী তৈরির পাশাপাশি মিরিকে রাত্রিবাস এখন একটা বড় সমস্যা। এমনকী ব্যক্তিগত গাড়ি না থাকলে মিরিক থেকে বিকেল তিনটের পর শিলিগুড়ির কোনও গাড়ি মেলে না। ফলে মিরিকের পর্যটনের সম্ভাবনা আটকে আছে দিনের চার-পাঁচ ঘন্টার মধ্যে। এই খামতি পূরণেই এগিয়ে এসেছে পর্যটন দপ্তর। মিরিকের সবেচেয়ে কাছে থার্বো চা বাগান, ওকাইতি চা বাগান, গোপালধারা চা বাগানগুলির মধ্যে চা অনুৎপাদক খালি জমি খুঁজে তাতে কটেজ তৈরি করা হবে। তবে থার্বো বাগানটিই মিরিক লাগোয়া হওয়ায় এটিকেই পাখির চোখ করছে পর্যটন দপ্তর।
এগুলি ব্যাক্তিগত লিজে থাকায় বাগান মালিকদের সঙ্গে কথা বলা হবে। ওই বাগানগুলির জমির চরিত্র বদল করিয়ে তারপর তাতে কাজ করা সম্ভব বলে মিরিক পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে। প্রায় পাঁচ একর জমির প্রয়োজন রয়েছে সমস্ত পরিকল্পনা রূপায়ণ করতে। পুরসভার চেয়ারম্যান লালবাহাদুর রাইও আশাবাদী প্রকল্প নিয়ে। তিনি বলেন, “রাজ্যের উদ্যোগে ইতিমধ্যেই মিরিকের চরিত্র বদলাতে শুরু করেছে। আশা করছি এক বছর পরে মিরিক পাহাড়ের অন্যতম গন্তব্য হবে।” স্থানীয় পর্যটনের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে যুক্ত সম্রাট সান্যালও উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি চা বাগানের পাশাপাশি, ট্রেক রুটগুলিকেও তুলে ধরার উপর জোর দিয়েছেন। দীর্ঘদিন দুয়োরানি হয়ে থাকার পর অবশেষে হাল ফিরতে চলায় সন্তোষ প্রকাশ করেন।
[চোখ মেললেই ঘন সবুজের রাজত্ব, এই গরমে আপনারও ঠিকানা হোক ‘ইচ্ছেগাঁও’]