সৌরভ মাজি, বর্ধমান: জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতিতে বর্ধমান মেডিক্যালে চূড়ান্ত অব্যবস্থা। আন্দোলন প্রায় ২৪ ঘণ্টা হয়ে গেলেও আন্দোলনকারীদের মনোভাব পাল্টায়নি। তাদের এই অনড় মনোভাবের জেরে আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি সামাল দিতে সিনিয়র ডাক্তারদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। চিকিৎসকদের এই মনোভাবের ফলে রোগীর লোকজন ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।
[বৃদ্ধা প্রাপ্য না পেলে ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের মাইনে বন্ধ, তোপ আদালতের]
প্রথম দফায় শিশুমৃত্যুর অভিযোগ তুলে পরিজনদের তাণ্ডব। আর দ্বিতীয় দফায় নিরাপত্তার দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের পালটা কর্মবিরতি। বৃহস্পতিবার দিনভর উত্তপ্ত থাকার পর শুক্রবারও অচলাবস্থা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। জুনিয়র ডাক্তাররা সুপার ও ডেপুটি সুপারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে ক্ষান্ত হননি। তাদের ঘরে তালা লাগিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। কর্মবিরতির জেরে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়ে। এদিন রাত পর্যন্ত অচলাবস্থা চলে দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম সেরা এই হাসপাতালে। রাত ৮ টা নাগাদ সুপার ঘেরাওমুক্ত হন। তবে কর্মবিরতি জারি থাকে। গোটা পরিস্থিতি হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁ স্বাস্থ্য দপ্তরে জানান। কিন্তু শুক্রবার বেলা পর্যন্ত কোনও সুরাহা হয়নি।
[চিড়িয়াখানায় আর পিকনিক নয়, বন্ধ বাইরে থেকে জল নিয়ে ঢোকাও]
মন্তেশ্বরের আকবরনগরের এক বছর সাত মাস বয়সি ঈশান মণ্ডলের গলায় কিছু আটকে যায়। অস্ত্রোপচারের পর রোগীর পরিবারের লোকজন বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসককে হেনস্তা করেন বলে অভিযোগ। এরপরই জুনিয়র ডাক্তাররা নিরাপত্তার দাবি তুলে কর্মবিরতি শুরু করে। তাদের অভিযোগ, বারবার চিকিৎসকরা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সুপার কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। তার প্রতিবাদে এই আন্দোলন বলে সাফাই দেন জুনিয়র ডাক্তাররা।
[শিকেয় সরকারি সুবিধা, অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাতেও দেদার কালোবাজারি]
হাসপাতাল সুপার উৎপল দাঁ বলেন, “এই ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করেছে। তারপরও চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ করে কেন আন্দোলন করা হচ্ছে বুঝতে পারছি না। কেনই বা আমার ঘরে ভাঙচুর করল তারও কোনও জবাব নেই। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরে রিপোর্ট করা হবে।” সুপার জনিয়র ডাক্তারদের তাঁর চেম্বারে ডাকলেও কেউ যাননি। উলটে আন্দোলনকারীরা দাবি করতে থাকেন সুপারকেই তাঁদের কাছে আসতে হবে। এরপর সুপারের ঘরের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তার (ইন্টার্ন) অরিন্দম বিশ্বাসের বক্তব্য, “বারবার আমরা আক্রান্ত হচ্ছি। আমরা রোগীর জীবন বাঁচাতে গিয়ে মার খাচ্ছি। আর সুপার ঠান্ডাঘরে বসে থাকছেন। শুধুই আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রোগীর পরিবারের হাতে আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। তাই সুপারের ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি আমরা।”
কর্মবিরতির জেরে হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে পরিষেবা কার্যত শিকেয় ওঠে। রায়নার বাসিন্দা অনল চৌধুরি বলেন, “বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রোগীরা কোনও পরিষেবা পাচ্ছেন না। চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।” খণ্ডঘোষের বরুণ মাঝি, ঝাড়খণ্ডের বিশ্বনাথ মালি, মঙ্গলকোটের নসরত শেখদের অভিযোগ, রোগীদের স্রেফ ফেলে রাখা হয়েছে। কোনও চিকিৎসকের দেখা নেই।
ছবি: মুকলেসুর রহমান