Advertisement
Advertisement
মাধ্যমিক

বিয়ে রুখে মাধ্যমিক পাশ, চোখধাঁধানো ফলে নজির গড়ল কালনার ‘কন্যাশ্রী’

মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল, স্বীকার করল পরিবার।

Child marriage crusader passes madhyamik exams
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:May 22, 2019 11:46 am
  • Updated:May 22, 2019 11:46 am

রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: অনেকেই পারে না। কিন্তু এই কন্যাশ্রী পেরেছিল বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে। দশম শ্রেণীতে উঠতেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে ঝাড়া হাত-পা হতে চেয়েছিল পরিবার। কিন্তু এই মেয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, বিয়ে সে করবে না। পড়তে চায়। মানুষের মত মানুষ হতে চায়। সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চায়। কিন্তু পরিবারের কেউই তা মানছিলেন না। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ ঘোষণা করেই দিয়েছিল সে। স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাব, প্রধান শিক্ষিকার হস্তক্ষেপে পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতায় বিয়ে ভেঙে দিয়েছিল। পড়াশোনায় মন দিয়েছিল। আর এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় অসামান্য ফলও করেছে পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলির জালুইডাঙা জিএসপি বালিকা বিদ্যালয়ের লড়াকু কন্যাশ্রী বিশাখা দাস। মঙ্গলবার ফল ঘোষণার পর পরিবারের সদস্যদের মুখেও অন্য সুর। স্বীকার করছেন খুব ভুল করতে গিয়েছিলেন তাঁরা।

বিশাখা এবারের মাধ্যমিকে ৫৪৮ নম্বর পেয়েছে। স্টার মার্কস। পরিবারের প্রতি বিদ্রোহ করে নাবালিকা বয়সে বিয়ে রুখে সমাজের অনেকের চোখেই সেদিনও তারকাই হয়েছিল। এদিন মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরও তারা। সেই পরিবারের গর্বের কারণ হয়ে উঠেছে এই ষোড়শী। আর এই সময়ই যারা তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, বিশাখার ভাল ফল করায় তাঁরাও গর্বিত। সেদিন বিয়ে ভেঙে দিয়ে বিশাখাকে উচ্চশিক্ষিত করতে যাঁরা অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন, এই কন্যে তাঁদের মান রেখেছে।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: দুর্ভেদ্য স্ট্রং রুমে ঢুঁ মারতে পারবে না কাকপক্ষীও, দাবি নির্বাচন কমিশনের ]

Advertisement

শুধু এখানেই নয়, তাঁর সমস্ত লড়াইয়ের গল্প যেন এক নারীকেন্দ্রিক উপন্যাসের চরিত্র যেন। পূর্বস্থলি ১ ব্লকের জালাহাটি গ্রামেই তার বাড়ি। বাবা বিশ্বনাথ দাস স্থানীয় সবজি বাজারে শ্রমিকের কাজ করেন। মা লতিকা দাস ঘর সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁতের সুতো কেটে সংসার চালান। পরিবারের অবস্থা স্বচ্ছল নয়। এই পরিবারের মেয়ে নবম শ্রেণীতে উঠলে খরচ চালাতে পারবে না বলে পরিবারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পড়া বন্ধ করতে চায়নি এই কন্যা। স্থানীয় বাচ্চাদের টিউশন পড়িয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ জুগিয়েছে সে। কিন্তু দশম শ্রেণীতে ওঠার পরই একটি ছেলের সঙ্গে বিয়ের ঠিক করেন বাবা-মা। কিন্তু পড়াশোনা শেষ করে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে থাকায় সে বিয়ে করতে রাজি হয়নি।

বিশাখা বিষয়টি জানায় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা যূথিকা দেবনাথকে। তিনি প্রশাসনের সহযোগিতায় বাড়িতে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করান।  পরিবারকে নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে না দেওয়ার মুচলেকা লিখিয়ে নেন। তারপর থেকেই আরও কঠিন হয়ে পরে তাঁর পড়াশোনা করা। পরিবারের চাপ ও নিজের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে দিনরাত এক করে মাধ্যমিকে ভাল ফল করার লড়াই শুরু করে। সকালে দুপুরে টিউশন পড়িয়ে রাতে নিজে পড়তে বসত। মঙ্গলবার তার ফল পেয়েছে বিশাখা। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা যূথিকা দেবনাথ বলেন, “আমরা জানতাম ও ভাল ফল করবে। আমরা ওর লড়াইয়ে পাশে আছি।” বিশাখার বাবা বিশ্বনাথবাবু  এদিন মেয়ের পরীক্ষার ফলাফল দেখে খুবই খুশি হয়েছেন। তিনি বলেন, “এখন মনে হচ্ছে আমরা সেদিন খুবই ভুল করেছিলাম। এখন আমরা ওর পাশে আছি। ওর লড়াইয়ে শরিক হব।”

[ আরও পড়ুন: দুর্ভেদ্য স্ট্রং রুমে ঢুঁ মারতে পারবে না কাকপক্ষীও, দাবি নির্বাচন কমিশনের ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ