ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: গুরুং-বৃত্তান্ত খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে এল ভয়াবহ তথ্য। বাংলার ‘চিকেন নেক’ ছিঁড়ে নিতে চায় চিন। এই উদ্দেশ্যেই দার্জিলিং পাহাড়কে উত্তপ্ত করে তোলা হয়েছিল, যে কাজে অতি সন্তর্পণে কাজে লাগানো হয়েছিল সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিংয়ের ‘ইন্টেলিজেন্স’কে। এখন পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত হলেও নেপাল-ভুটান সীমান্তবর্তী ওই শিলিগুড়ি করিডর থেকে চিন এখনও নজর ঘোরায়নি। ওত পেতে আছে মওকার অপেক্ষায়। জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে অশনি সংকেতস্বরূপ মারাত্মক খবরটি আপাতত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে ফাইলবন্দি। উদ্বিগ্ন দিল্লি গোটা অঞ্চলে সতর্ক নজর রাখছে। দেশের সুরক্ষার স্বার্থে আপাতত কেন্দ্রের ‘নজরবন্দি’ চামলিংও।
[গুগল ডুডলে আজ শ্রদ্ধা মহাশ্বেতা দেবীকে]
কানাঘুষো একটা ছিলই। চিন নাকি নাক গলিয়ে দিয়েছে শিলিগুড়ি করিডরে। দার্জিলিং তখন উত্তাল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও রিপোর্ট পাঠাচ্ছে। নিত্য হাঙ্গামা। মোর্চা ‘সুপ্রিমো’ বিমল গুরুং বাংলার সীমানা পেরিয়ে সিকিমের জঙ্গলে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাঁর খোঁজে হন্যে রাজ্য পুলিশ। আর সেই গুরুংকে পাকড়াও করতে গিয়েই সিকিম সীমানায় রঙ্গিত নদীর তীরে মোর্চার ঘাতকবাহিনীর হাতে প্রাণ খোয়ালেন রাজ্য পুলিশের তরুণ অফিসার অমিতাভ মালিক।
[যাত্রীদের খাবার চুরি করে খাচ্ছেন বিমানসেবিকা, ভাইরাল ভাজ্জির ভিডিও]
অর্থাৎ, সরাসরি সরকারি কর্মী খুন! বেগতিক বুঝে সে যাত্রা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল বিমল গুরুং। বেজিংও মুঠো আলগা করে। নচেৎ ‘চিকেন নেকে’ ড্রাগনের থাবা প্রায় বসেই গিয়েছিল বলে জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা রিপোর্ট। এরপর দার্জিলিং পরিস্থিতি নিয়ে তড়িঘড়ি প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সংসদীয় পরামর্শদাতা কমিটির বৈঠক বসে। আলোচনায় যা উঠে আসে, তা রীতিমতো ভীতিপ্রদ। কী রকম? জানা যায়, ‘স্ট্র্যাটেজিক’ অবস্থানের নিরিখে অতীব গুরুত্বপূর্ণ শিলিগুড়ি করিডর দীর্ঘদিন ধরেই চিনা মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের টার্গেট। ওই তল্লাটে গেড়ে বসলে সিকিম-ডুয়ার্স ও সীমান্ত লাগোয়া নেপাল-ভুটানে কবজা কায়েম করা সহজ হবে। এই লক্ষ্যসাধনেই গুরুংকে হাতিয়ার করে বেজিং অশান্তির ইন্ধন ছড়াচ্ছে দার্জিলিং পাহাড়ে, যাতে তলে তলে মদত দিচ্ছে সিকিমের চামলিং প্রশাসন।
[পৌষপার্বণে সুখবর, খড়গপুর আইআইটির সৌজন্যে ঢেঁকিছাঁটা চাল ফিরছে বাংলায়]
কমিটি আর দেরি করেনি। তৎক্ষণাৎ বিশদে পরিস্থিতি উল্লেখ করে রিপোর্ট বানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো হয়। তাতে বিদেশি শক্তিকে মদতের সাংঘাতিক অভিযোগ তোলা হয়েছে পবন চামলিংয়ের বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট দেয় কমিটি। তাদের সুপারিশ, পড়শি রাষ্ট্রের এহেন অভিপ্রায় সম্পর্কে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে যথোচিত সতর্ক করা হোক। যে কোনও আক্রমণ বানচাল করতে ফৌজ যেন সদা প্রস্তুত থাকে। বস্তুত রিপোর্টে কমিটি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে জানিয়েছে, দার্জিলিংকে উত্তপ্ত করার পিছনে সরাসরি চিনের হাত দেখা যাচ্ছে। ডুয়ার্স সমেত গোটা দার্জিলিংটা তারা গিলে নিতে চায়। এবং সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীকে সেই কাজের ‘বরাত’ দিয়েছে বেজিং। নানা ভাবে তাঁকে ষড়যন্ত্র রূপায়ণের রসদ জোগাচ্ছে। কমিটির পর্যবেক্ষণ, গুরুংয়ের হাতে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ও অত্যাধুনিক অস্ত্রসম্ভার তুলে দিয়ে চামলিংও তাঁর দায়িত্ব যথেষ্ট ‘যোগ্যতা’র সঙ্গেই পালন করছেন। প্রশ্ন হল চিন কীভাবে মদত জোগাচ্ছে?
খোলসা করতে না চাইলেও কমিটির এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য জানান, অনেক রকম সাহায্যই চামলিং তথা গুরুং বাহিনীর হাতে এসে পৌঁছচ্ছে। “পুরো বিষয়টা স্পষ্ট ছবির মতো করে আমরা পিএমও-তে পাঠিয়েছি। জানিয়েছি নবান্নকেও।” কমিটির চেয়ারম্যান তথা প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন সদস্যরা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য তাঁদের কাছেও এসেছিল। তবে কমিটি যেভাবে খুঁটিয়ে তথ্য জোগাড় করেছে, তাকে বাহবা দিয়ে বিষয়টিকে অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর ও উদ্বেগজনক হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। মাস ছয়েক আগে কমিটির এক সদস্য আরও একটি তথ্য পেয়েছিলেন। তাঁর এক নিকটাত্মীয় সিকিম বেড়িয়ে এসে বলেছিলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে যেভাবে ভারতীয় বা বাংলাদেশি নোটে সমমূল্যে বিকিকিনি চলে, ভারত-ভুটান সীমান্তে যেমন সমানে চলে দুই দেশের নোট, সেভাবেই সিকিমে চলে চিনের মুদ্রা-ইউয়ান। শুধু সীমান্তে নয়, সিকিমের প্রায় সর্বত্রই চলে। খোঁজ-খবর নিয়ে আরও মারাত্মক তথ্য হাতে আসে। সিকিমে ভোট এলে সেখানকার বাতাসে ভারতীয় নোটের পাশাপাশি ইউয়ানও ওড়ে। এটাও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কানে তোলেন তিনি। কেন্দ্রের হুঁশিয়ারির সংবাদ জানিয়ে তাঁর মন্তব্য, “হরেক খবর এখনও আসছে। চিন কিন্তু আশা ছাড়েনি। দিল্লি যে নজর রাখছে, সে খবরও তারা পেয়েছে। তাই পা ফেলছে নিঃশব্দে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.