সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বেসরকারি হাসপাতালের অনিয়ম নিয়ে সরব হয়েছিলেন। হাসপাতাল কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে কড়া বার্তাও দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও হাল ফেরেনি। শেষমেশ বিল করেই বেসরকারি হাসপাতালের বেনিয়মে লাগাম টানলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ধ্বনি ভোটে বিধানসভায় পাশ হল স্বাস্থ্য বিল।
এদিন নিজের বক্তৃতায় স্বাস্থ্য বিভাগে রাজ্যের একাধিক সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, গত পাঁচ বছরে ইনস্টিটিউশন ডেলিভারি ৬৫ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৯০ শতাংশ। এখন ৪৬টি সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ন্যায্যমূল্যের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডায়ালিসিস পরিষেবা দেওয়া হয়। রাজ্যে শিশুমৃত্যুর হারও কমে হয়েছে ২৬। সাতটি নতুন স্বাস্থ্য জেলা ও ৭টি নতুন মেডিক্যাল কলেজ তৈরির পাশাপাশি চালু হয়েছে মাতৃদুগ্ধ প্রকল্প। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে রাজ্যের এই পদক্ষেপগুলির পাশাপাশিই এই নতুন স্বাস্থ্য বিলের যৌক্তিকতাও ব্যাখ্যা করেন তিনি। জানান, সব বেসরকারি হাসপাতাল খারাপ কাজ করছে তা নয়। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে সমস্ত নিয়ম নীতি লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এমনকী রোগীদের ফিক্সড ডিপোজিট পর্যন্ত জমা নেওয়ারও খবর পৌঁছেছে তাঁর কাছে। সে কারণেই এই বিল তথা আইনের নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে।
প্রস্তাবিত পথেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, গাফিলতির কারণে রোগীর মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে হাসপাতালকেই। রোগীর আর্থিক সংস্থান দেখে কখনওই চিকিৎসা চলতে পারে না। দুর্ঘটনা, অ্যাসিড হামলা, ধর্ষণের ক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসায় আগাম টাকাপয়সার কথা ভাবা চলবে না। প্যাকেজের বাইরে বাড়তি টাকা নেওয়া যাবে না। টাকার জন্য মৃতদেহ আটকে রাখাও অপরাধের পর্যায়ভুক্ত হবে। আইনের বাঁধনের পাশপাশি মুখ্যমন্ত্রী এদিন মানবিক দিকটিরও উপর জোর দেন। ব্যবসা ঢুকে পড়ায় রোগী ও ডাক্তারের সম্পর্কে যে অবণতি হয়েছে, তা শোধরানো জরুরি বলেই উল্লেখ করেন তিনি। রাজ্যের এই বিল ভবিষ্যতে দেশের কাছেও মডেল হবে বলেও দাবি মুখ্যমন্ত্রীর।
আইন না মানলে লাইসেন্স বাতিল হওয়ার হুঁশিয়ারি যেমন তিনি দিয়ে রাখলেন, তেমনই জানালেন, ১০ শতাংশ মানুষকে বিনামূল্যে সেবা দিলে সেই হাসপাতালকে জমি দেবে রাজ্য সরকারই। এছাড়া সাধারণ মানুষ যাতে অভাব অভিযোগ জানাতে পারেন সে কারণে প্রত্যেক হাসপাতালে পাবলিক গ্রিভেন্স সেল থাকা বাধ্যতামূলক। ১০০ শয্যা বিশিষ্ট প্রতিটি হাসপাতালে ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকান ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারও থাকতে হবে। কোনওভাবেই কৌশল করে বাড়তি খরচের বোঝা রোগীর পরিবারের উপর চাপিয়ে দেওয়া চলবে না। যদি অতিরিক্ত খরচ হয়েই থাকে, তবে সে কথা আগেই জানাতে হবে রোগীর পরিবারকে। সামগ্রিক ভাবে রোগী ও চিকিৎসকের পারস্পরিক সম্পর্ক যাতে ভাল হয় সেদিকেই নজর দিলেন তিনি।
তবে এর পাশাপাশি আজই আরও দু’টি বিষয়ে নজর দিয়েছেন তিনি। প্রথমত রাজ্যে যেভাবে দুর্ঘটনা বাড়ছে তাতে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী। এর আগে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইভ’ প্রকল্প চালু করেছেন তিনি। তবে এবার আরও কঠোর হয়ে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দুর্ঘটনা রোখার ভাবনা মুখ্যমন্ত্রীর। সেইসঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রেও আমূল সংস্কার আনতে চান তিনি। প্রাইভেট স্কুলগুলির সঙ্গেও এ ব্যাপারে কথা বলবেন। মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলেই শিক্ষামন্ত্রী তত্ত্বাবধানে প্রাইভেট স্কুলের পঠনপাঠন ও খরচের ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেই আজ জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.