Advertisement
Advertisement
Purulia

কাকভোরেই শঙ্খের বিকিকিনি, শাঁখার হাটেই মজবুত গ্রামের অর্থনীতি

বাংলার শঙ্খ শিল্পের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়ার হাটগ্রামে বিকিকিনি হয়ে থাকে পুরুলিয়ার শঙ্খহাটের মাধ্যমে।

Conch shell bangles market in Purulia and Bankura is the main source to continue village economy | Sangbad Pratidin

নিজস্ব চিত্র।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:February 23, 2024 5:00 pm
  • Updated:February 23, 2024 5:40 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ঘড়ির কাঁটায় তখন ভোর পাঁচটাও বাজেনি। এই ফাগুনে তখনও আঁধার। ফোটেনি সকালের আলো। কিন্তু পুরুলিয়া (Purulia) বাসস্ট্যান্ডের মুখে তথ্য-সংস্কৃতি দপ্তর পার হয়ে ঠিক পুলিশ ক্লাবের পাশে রীতিমতো হইহই রইরই ব্যাপার। হ্যাঁ, ভোর পাঁচটা থেকেই এখানে হাট সে। অদ্ভুত লাগছে? কিন্তু এটাই যে বাস্তব। ফি শনিবার পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডের মুখে পুলিশ ক্লাবের পাশে শাঁখের (Conch Shell)হাট। ১০ বা ২০ বছর নয়। ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ভোরের শঙ্খহাট চলে এখানে। এমনকী পৌষ-মাঘের ভরা শীতেও কাঁপুনিকে সঙ্গী করেই এই হাট বসে। হাট বসে বর্ষার ঝমঝম বৃষ্টিতেও। ওই ভোরেই। যেখানে ৬ থেকে সাড়ে ছ’ঘন্টার মধ্যেই লাখ- লাখ টাকার সওদা হয়ে যায়। আর সেই বিকিকিনি ঘিরেই আজও পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা।

পুরুলিয়ার পড়শি জঙ্গলমহলের (Junglemahal) ওই জেলার হাটগ্রামের শঙ্খর নামডাক বাংলা জুড়ে। বাঁকুড়ার (Bankura) ইন্দপুর ব্লকের ওই গ্রামে এই শাঁখ শিল্পের হাত ধরে আসে জাতীয় পুরস্কার। ওই গ্রামের শিল্পী বাবলু নন্দীর হাত ধরেই এই পুরস্কার পায় ওই গ্রাম। তিনি যে শঙ্খের উপরই ফুটিয়ে তুলেছিলেন মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ। কী ছিল না সেখানে? ভীম-দুর্যোধনের গদাযুদ্ধ থেকে কৃষ্ণ-অর্জুনের রথযাত্রা, অশ্বত্থামা বধ, কৃষ্ণের বিশ্বরূপ দর্শন – সব ফুটে উঠেছিল শাঁখের উপর। সেই শিল্প গ্রামের গ্রামীণ অর্থনীতি কিন্তু পুরুলিয়ার ভোরবেলার এই শঙ্খ হাটের উপরেই খানিকটা নির্ভরশীল।

Advertisement

[আরও পড়ুন: আমেরিকার নাইট ক্লাবে ঢুকতে বাধা, বাইরে ঠান্ডায় জমে মৃত ভারতীয় বংশোদ্ভূত পড়ুয়া]

হাটগ্রাম শঙ্খ বণিক কল্যাণ সমিতির আয়োজনে পুরুলিয়া শহরে এই হাট (Village Market) বসে। হাটগ্রামে শাখা তৈরি করা শাঁখারিরা নানা কারুকাজ করা শঙ্খের পাশাপাশি শাঁখার যাবতীয় জিনিসপত্রের পসরা নিয়ে হাজির হন। শঙ্খ দিয়ে যে কত রকমের হস্তশিল্প বা গৃহস্থ সাজাবার জিনিস তৈরি করা যায় তা পুরুলিয়ার এই শঙ্খ হাটে না এলে বোঝা যাবে না। ধূপদানি, কাজলদানি, চুলের ক্লিপ, গলার হার, কানের দুল, শঙ্খ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের শো-পিস, কী নেই?

Advertisement
শাঁখার নানা সামগ্রী পাওয়া যায় এই হাটগ্রামে। নিজস্ব ছবি।

ওই সমিতির সম্পাদক তথা এই হাটে নিয়মিত পসরা নিয়ে আসা জয়ন্ত নন্দী বলেন, “সপ্তাহে একদিনের হাট। বলা যায় কয়েক ঘন্টার। ভোর পাঁচটা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা। তার মধ্যেই লাখ-লাখ টাকার জিনিস কেনাবেচা হয়। আমাদের হাটগ্রামের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য এই হাটের অবদান কম নয়।” ওই সমিতির সভাপতি তথা শনিবার এই হাটে শাঁখার যাবতীয় জিনিস নিয়ে আসা রমেশ দত্তর কথায়, “১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই হাট চলছে। পুরুলিয়ার এই হাটে শুধু জেলার মানুষ নন। অন্যান্য জেলা এমনকি পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকেও শঙ্খ বা শাঁখা ব্যবসায়ীরা এখানে এসে শাঁখকেন্দ্রিক যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে যান।” এই হাট এতটাই জনপ্রিয় যে গত ৫ ডিসেম্বর পুরুলিয়া পুলিশ ক্লাব নবরূপে তৈরি হওয়ায় পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সেই ক্লাবের নাম দেয় ‘শঙ্খবেলা’।

[আরও পড়ুন: লোকসভার আগে তপ্ত সন্দেশখালি, তড়িঘড়ি বিশেষ বৈঠক কমিশনের

এ রাজ্যের বেশিরভাগ শাখা ও এই জাতীয় পণ্যের অধিকাংশই জোগান দেয় বাঁকুড়ার হাটগ্রাম। যার মাধ্যম হয়ে থাকে পুরুলিয়ার এই শঙ্খহাট। বাংলার শঙ্খ শিল্পের পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত এই গ্রাম। যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পুরুলিয়ার এই হাট। বাঁকুড়ার ওই গ্রাম থেকে শাঁখারিরা ছোট গাড়ি ভাড়া করে শনিবারের ভোরে এখানে পা রাখেন। তাই শাঁখা ব্যবসায়ীরাও সেই ভোর থেকে ভিড় জমাতে থাকেন।

ঝড়. জল, রোদ, শীত মাথায় করে ভোর ৫টায় বসে যায় এই বাজার। নিজস্ব চিত্র।

প্রায় ২৬-২৭ ধরে এই হাটে আসা জয়পুরের গোয়ালিডি গ্রামের শাঁখা ব্যবসায়ী ভ্রমর গোস্বামী জানান, “এই হাটে একেবারে পারফেক্ট সাইজ, পারফেক্ট ডিজাইনের শাখা মেলে। নতুন বউমাকে দেওয়ার জন্য একেবারে পছন্দসই উপাদান।” হাটগ্রামের এই বাংলা বিখ্যাত শঙ্খ GI ট্যাগের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। পরপর দু দফা উত্তীর্ণ হয়েছে। আরও দুয়েক দফা পার হলেই মিলবে স্বীকৃতি। সেই আশাতেই যেমন বাঁকুড়ার হাটগ্রাম। তেমনই পুরুলিয়ার এই শঙ্খহাট। এই শিল্পকে ঘিরে বাঁকুড়ার গর্ব। যার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে পুরুলিয়া। আসলে এই হাটের কেনাবেচা থেকেই হাটগ্রামের গ্রামীণ অর্থনীতি মজবুত হয়েছে।

দেখুন ভিডিও: 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ