সংগ্রাম সিংহ রায়, শিলিগুড়ি: “আজ ম্যায় উপর, আশমা নিচে”। হিন্দি ছবির এই গানটিকে যদি হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে চান, তাহলে আসতেই হবে দার্জিলিংয়ের পোস্টকার্ড গ্রাম দাওয়াইপানিতে। যাঁরা স্বপনে, জাগরণে মেঘ নিয়ে মনে মনে নানা কবিতা লেখেন তাঁদের কাছে এ এক অন্যরকম অনুভূতি।
[সবুজ পাহাড় আর চা-বাগানের ঘেরাটোপে যেন বন্দি মায়াময়ী মুন্নার]
দার্জিলিং থেকে এক ঘণ্টা, শিলিগুড়ি থেকে আড়াই ঘণ্টা। আর সবচেয়ে কাছের ঘুম স্টেশন থেকে মাত্র কুড়ি মিনিটের দূরত্ব। দার্জিলিংয়ের শহুরে সংস্কৃতিও যাঁদের কাছে পুরনো হয়ে পড়েছে তাঁদের দু’দণ্ড শান্তি খুঁজতে দাওয়াইপানিই হতে পারে গরমে কুল হওয়ার আদর্শ ঠিকানা। রাজ্য পর্যটন দপ্তরের সহযোগিতায় নয়া দিশা দেখছে দাওয়াইপানি। পর্যটন পরামর্শদাতা রাজ বসু জানান, যাঁরা হইচই এড়াতে এক–দু’দিনের গা এলানো অবসর চান, তাঁদের কাছে দাওয়াইপানি এক নম্বর পছন্দ হতেই পারে। এখানে অবসর যাপনের জন্য কাঠখড় পোড়াতে হবে অনেকটাই। কারণ থাকার ব্যবস্থা খুবই সীমিত। রয়েছে মাত্র চারটি হোম–স্টে। একসঙ্গে সব কটি হোম–স্টেতে পর্যটক ভর্তি থাকলে ২০ জনের বেশি হবে না। ফলে অতি সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। ছুটির দিনটি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে এর জুড়ি পাওয়া ভার।
[অরণ্যের দরজা যেখানে খোলা, প্রকৃতির মাঝে হারানোর ঠিকানা দুয়ারসিনি]
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার একেবারে আদর্শ জায়গা হল দাওয়াইপানি। পাহাড়ের উপরে চেয়ারে বসে দিনের বেলায় হিমেল হাওয়ায় শরীর জুড়িয়ে যাবে মে-জুনের গরমেও। চাদর কিংবা হালকা শীতপোশাক ছাড়া এখানে আসার কথা একেবারেই ভাববেন না। কখনও রোদের দেখা মিললেও সমতলের উষ্ণতা তাতে এতটুকু নেই। সামনে খোলা কাঞ্চনজঙ্ঘা। যার একটা দিক আরাম করে দেখা যায়। রাতে অবশ্যই মোটা পশমের পোশাক প্রয়োজন। সন্ধে নামলে দেখা যাবে পুরো দার্জিলিং শহরটাকে। দিওয়ালির আলোর মাতা যেন সাজানো। সেই আলো গায়ে মেখে কফির কাপে চুমুক দেওয়া কতটা আহ্লাদের তা না বোঝালেও হবে।
[নদীর এপারে হাতি ওপারে আপনি, ডামডিম যেন স্বপ্নের ঠিকানা]
অবশ্য প্রকৃতির সঙ্গে ইতিহাসও পাহাড়ের খাঁজে লুকিয়ে রয়েছে। দাওয়াইপানির খানিকটা নিচে রয়েছে ব্রিটিশদের তৈরি করা ছোট সেতু। পুরনো কিন্তু এখনও স্বমহিমায়। দিনের বেলায় ঘুরে আসতে পারেন তিরতির করে বয়ে চলা ‘দাওয়াইপানি’ নদীর ধার দিয়ে। এমনিতে ঘটি ডোবে না। কিন্তু এই জল নাকি খনিজের খনি। সেই কারণে স্থানীয় ১৩৫ ঘরের বাসিন্দারা এই জলই পান থেকে গৃহকর্ম, সবই করেন। কারও কোনও রোগ নেই। এমনই বলছেন স্থানীয় একটি হোম-স্টের মালিক বীরেন রাই। স্থানীয়দের তৈরি দু’টি ছোট্ট পাহাড়ি রেস্তরাঁয় মিলবে পিৎজাও। তবে টপিং পাহাড়ের নিজস্ব। তাই তাতে কামড় না দিয়ে এখানকার সফর শেষ হবে না। ইতিমধ্যেই রাজ্যের তহবিল থেকে জিটিএ-র তরফে এলাকায় রাস্তা মেরামতি শুরু হয়েছে। সম্প্রতি পৌঁছেছে মোবাইল ফোন পরিষেবাও। ফলে বহির্জগতের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেও দাওয়াইপানি এখনও বিচ্ছিন্ন বিস্ময়। এর স্বাভাবিকত্ব বজায় রেখে ভবিষ্যতে একে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে জানান পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.