ছবি: সুজিত মণ্ডল।
বিপ্লবচন্দ্র দত্ত,কৃষ্ণনগর: পা নেই বললেই চলে। হাত ছোট। শারীরিক বৃদ্ধি কোমর পর্যন্ত। উচ্চতায় মাত্র তিন ফুট। এত রকম শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে জীবনের এক লড়াই জিতে দেখালেন নদিয়ার শান্তিপুরের (Santipur) পিয়াসা মহলদার। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর তুখোড় মেধার জোরে যে কোনও প্রতিবন্ধকতাকে অনায়াসে জয় করা সম্ভব, তার প্রমাণ দিলেন। এবার NET-এ ৯৯.৩১ শতাংশ নম্বর পেয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পিয়াসা। নেটে (NET) প্রথম এক শতাংশ স্থানাধিকারীর তালিকায় নিজের স্থান করে নিয়েছেন তিনি। এখন অনায়াসেই যে কোনও কলেজে সহ-অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন। এছাড়া পিএইচডি (PhD) করার জন্যও যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই এই ফলাফলে ভীষণ খুশি পিয়াসা এবং তাঁর পরিবার।
দীর্ঘ লড়াইয়ের পর এবার স্বপ্নপূরণ হল বিশেষভাবে সক্ষম (Differently Abled) ২৫ বছরের তরুণী পিয়াসার। নিজের ভরসায় হাঁটাচলা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এমনকি, ইচ্ছামত উঠে বসাও তার পক্ষে কিছুটা কঠিন। এতদিন চেহারার জন্য সকলের দৃষ্টি আটকে যেত তাঁর দিকে। কিন্তু এবার যেন এক অন্য আলো ছড়িয়ে পড়ছে পিয়াসার থেকে। নেটের মতো কঠিন পরীক্ষায় ৯৯ শতাংশের বেশি নম্বর পাওয়া মেয়েটার সঙ্গে এখন দেখা করতে আসছেন অনেকে।
পিয়াসার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পড়াশোনার প্রথম দিকে কিছুটা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু মনের অদম্য ইচ্ছা নিয়ে পড়াশোনা করেই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন পিয়াসা। আর সেই অদম্য ইচ্ছাতেই জীবনে একের পর এক সাফল্য। অথচ ভাবলেও অবাক হতে হয়, মায়ের কোলে করে স্কুলে গিয়ে বেঞ্চির উপর শুয়ে শুয়ে ক্লাস করেছেন পিয়াসা। এমনকি, পরীক্ষার হলেও তার জন্য রাখা হয়েছে তেমনই ব্যবস্থা। এত বড় পরীক্ষায় সাফল্য পেলেও পিয়াসা ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট এলিজিবিটি টেস্টে(সেট)-এ কিন্তু উত্তীর্ণ হতে পারেননি।
এরপর এই বছর দিয়েছিলেন ন্যশনাল এলিজিবিলিটি টেস্ট। পরীক্ষাকেন্দ্রের টেবিলের ওপর শুয়ে শুয়ে তিনি কম্পিউটারে দিয়েছিলেন পরীক্ষা।শনিবার তার ফল প্রকাশ হয়েছে।দেখা গিয়েছে, পিয়াসার প্রাপ্ত নম্বর ৯৯.৩১ শতাংশ। এখন সামনে সুযোগ কলেজ সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে সহ-অধ্যাপক পদে চাকরি পাওয়ার। অথবা কোন ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি করা। পিয়াসা জানিয়েছেন, তিনি কোনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্র সাহিত্যের বিশেষ কোনও বিষয় পিএইচডি করতে চান। সেক্ষেত্রে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেলে ভীষণ উপকৃত হবেন বলে জানান পিয়াসা। বিশ্ববিদ্যালয়টি তাঁর বাড়ির অনেকটা কাছেই।
কলেজ সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে অধ্যাপিকার চাকরি পাওয়ার জন্য প্রায় দু’বছর সময় লেগে যেতে পারে। তিনি চান না, সেই সময়টা নষ্ট করতে।পরবর্তী সময় যদি চাকরি পেয়েও যান, তারপরেও তিনি চাকরির সঙ্গেই পিএইচডি করে যেতে চাইছেন। জীবনের কঠিন সংগ্রামে লিপ্ত পিয়াসার চোখেমুখে দৃঢ় প্রত্যয়ের ছাপ। আর কন্ঠে অগাধ আত্মবিশ্বাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.