Advertisement
Advertisement
Burdwan Medical College

কোভিড পজিটিভ মায়ের হার্ট ব্লক, হাসপাতালে ফেলে উধাও সন্তানরা! দায়িত্ব পালন করলেন ডাক্তাররাই

মায়ের অসুস্থতায় যাঁরা খোঁজ নেয় না, তারা মানুষ? প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসক।

Doctors of Burdwan Medical College saved covid positive old lady | Sangbad Pratidin

ছবি: প্রতীকী

Published by: Sulaya Singha
  • Posted:January 19, 2022 5:21 pm
  • Updated:January 19, 2022 5:21 pm

অভিরূপ দাস: “কু-পুত্র যদি-বা হয়, কু-মাতা কদাচ নয়।” কোভিড পজিটিভ প্রবীণার হার্ট ব্লক। তাঁকে হাসপাতালে ফেলেই উধাও হল পরিবার। অথচ চিকিৎসকদের সহায়তায় সুস্থ হয়ে সেই মায়েরই প্রথম প্রশ্ন, “ছেলে মেয়েরা কোথায়? ওরা ভাল আছে তো?” হৃদয় বিদারক এ ঘটনা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে।

মঙ্গলবার সকালে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের (Burdwan Medical College) কোভিড ফিমেল ওয়ার্ডে ভরতি হন আশুবিবি। নিয়ে এসেছিলেন পরিবারই। তারপর হাওয়া। করোনা আক্রান্ত ষাটোর্ধ্ব আশুবিবি পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দা। হাসপাতালের কোভিড ওয়ার্ডে মঙ্গলবার রাউন্ড দিচ্ছিলেন ডা. কঙ্কন দাস। তিনিই প্রথম হৃদস্পন্দন মাপতে গিয়ে চমকে যান। চিকিৎসক কঙ্কন দাসের কথায়, দুপুরে ওই বৃদ্ধার হৃদস্পন্দন মাপতে গিয়ে দেখা যায় তা অত্যন্ত ক্ষীণ। মিনিটে মাত্র ৩২/৩৩। স্বাভাবিকভাবে যা থাকা উচিত ৬০ থেকে ১০০-র মধ্যে। এত কম হৃদস্পন্দন দেখে চমকে যান চিকিৎসক। মেডিসিনের সিনিয়র ডাক্তার ডা. অর্পণ মাইতিকে জানান বিষয়টি। চিকিৎসকরা সিদ্ধান্ত নেন দ্রুত ইসিজি করার। ইসিজি করে দেখা যায় কমপ্লিট হার্ট ব্লক!

Advertisement

[আরও পড়ুন: বয়স তো সংখ্যামাত্র! ৯০ বছরের আইনজীবী সারলেন বিয়ে, কনের বয়স মোটে ৪০]

ডা. কঙ্কন দাসের কথায়, ওই বৃদ্ধার হার্টের যা পরিস্থিতি, যে কোনও সময় মারা যেতে পারতেন। রোগিনীকে বাঁচাতে গেলে যত দ্রুত সম্ভব টেম্পোরারি পেস মেকার বসাতে হত। অস্থায়ী পেসমেকার হৃদস্পন্দন নিয়মিত রাখার কৃত্রিম বৈদ্যুতিক যন্ত্র। যা ইলেকট্রিক্যাল ইমপা‌ল্‌স তৈরি করে হৃদপেশিকে সরবরাহ করে এবং হৃদপিণ্ডের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ওই বৃদ্ধার হৃদপিণ্ড যথেষ্ট পরিমাণে বা গতিতে ইমপাল্‌স তৈরি করতে পারছিল না। হৃদপিণ্ডের তড়িৎ পরিবহণের রাস্তা আটকে ছিল, এমতাবস্থায় অতি দ্রুত হৃদপিণ্ডের গতি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় নিয়ে যেতে হতো। টেম্পোরারি পেসমেকার বসাতে প্রয়োজন ছোট্ট এক অস্ত্রোপচারের। এ ধরনের অস্ত্রোপচারের আগে বাড়ির লোকের সম্মতি নিতে হয়। রোগিনীর খারাপ অবস্থা দেখে বাড়ির লোককে ফোন করা হয়। কম করে ত্রিশ চল্লিশবার! অবাক বিষয় একবারও ফোন ধরেননি তাঁরা।

Advertisement

হয়তো ওয়ার্ডের বাইরেই মায়ের অপেক্ষায় বসে। এই ভেবে ওয়ার্ডের গেটের বাইরে গিয়ে ডাকাডাকি শুরু করেন চিকিৎসক। তারপর? ডা. কঙ্কন দাস জানান, গলা দিয়ে রক্ত বেরনোর উপক্রম হলেও কেউ সাড়া দেননি। চিকিৎসক জানিয়েছেন, “ওই বৃদ্ধা আমাদের বলেছিলেন তাঁর ছেলে-মেয়েই তাঁকে নিয়ে এসেছে। তারা যে মাকে ফেলে চলে গিয়েছে এমনটা ভাবতে পারিনি।”

অধুনা বাংলায় কোভিড (COVID-19) সংক্রমণ সাংঘাতিক। প্রতিটি হাসপাতালে থিকথিক করছে রোগী। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের কোভিড ওয়ার্ডও রোগীতে ভরতি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বারবার চিৎকারে অন্য রোগীদের অসুবিধা হচ্ছিল। বাধ্য হয়েই আর দেরি না করে খবর দেওয়া হয় ওয়ার্ডের ইনচার্জ ডা. স্মরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং হাসপাতালের সুপার ডা. তাপস ঘোষকে। রোগীকে দেখে তাঁরা বুঝতে পারেন, বেশি দেরি করলে বাঁচানো অসম্ভব। দ্রুত রোগীকে ১০ কিলোমিটার দূরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্পেশ্যালিটি উইং অনাময়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে নিয়ম অনুযায়ী অনাময়ে কোভিড রোগী ভরতি রাখা যায় না। তাই শুধু নিয়ে গেলেই হল না, ওখানে অস্থায়ী পেসমেকার বসিয়ে আবার ফেরতও নিয়ে আসতে হত। এর মাঝেও একাধিকবার বাড়ির লোকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন ডা. কঙ্কন দাস। চিকিৎসকের কথায়, “দুঃখের বিষয় হল ওঁর বাড়ির লোকের কোনও খোঁজ মেলেনি।”

সেখান থেকে এনে বৃদ্ধাকে নিয়ে যাওয়া হয় কোভিড সিসিউতে। মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত একাধিকবার আশুবিবির ছেলে-মেয়েকে ফোন করেছে হাসপাতাল। তাঁরা ফোন ধরেননি। ঘটনায় মর্মাহত চিকিৎসকরা। ডা. কঙ্কন দাস জানিয়েছেন, শুনলাম ওঁর পাঁচ ছেলে। যাঁরা মৃত্যুপথযাত্রী মাকে ফেলে পালিয়েছে। একবার খোঁজও নিচ্ছে না। মায়ের অসুস্থতায় যাঁরা খোঁজ নেয় না, তারা মানুষ? প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসক। সামান্য পান থেকে চুন খসলেই চিকিৎসক হেনস্তা গা সওয়া। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডা. অপর্ণ মাইতির কথায়, আজ একদল ডাক্তারবাবু, নার্স, সিস্টার ওই বৃদ্ধার সন্তানের ভূমিকা পালন করল। মানুষ এগুলো মনে রাখে না।

[আরও পড়ুন: ওমিক্রন থেকে মুক্তির পরেও উপসর্গ, মহামারীর রূপবদলের আশঙ্কায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ