সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: হাঁসের মাংস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মানে তা দিয়ে করোনা (Corona Virus) জয়ও সম্ভব! স্রেফ এই বিশ্বাস থেকে মনসার আরাধনায় হাঁস বলি দিলেন পুরুলিয়ার বিপুল সংখ্যক মানুষ। যার জেরে এই সংকট কালেও দু’দিনে দশ লক্ষ টাকার বেশি কেনাবেচা হয়েছে সেখানে। ফলে দীর্ঘদিন পর লাভের মুখ দেখেছেন বিক্রেতারা।
পুরুলিয়া (Purulia) শহরে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মনসা পুজো সত্ত্বেও বিক্রেতারা সেদিকে যাননি। কিন্তু সকলের বিশ্বাস, হাঁসেই দূরে সরানো যাবে করোনাকে। সেই কারণে মা মনসার চরণে হাঁস বলি দিয়ে সর্পদেবীকে সন্তুষ্ট রাখতে রীতিমতো গ্রামে গিয়ে কেনাকাটা করেন স্থানীয়রা। করোনা ভীতিতে জেলার বহু মানুষ আবার আগে থেকেই হাঁস কিনে রেখেছিলেন। তা সত্ত্বেও দু’দিনে দশ লক্ষ টাকার বেশি হাঁস বিক্রি হওয়ায় খানিকটা অবাকই হয়েছেন এই পুজো আয়োজকরা। কোভিড যে এই আঞ্চলিক উৎসবে থাবা বসাতে পারেনি তা হাঁস কেনাবেচাতেই স্পষ্ট। আর এর মধ্যে দিয়েই করোনা পরিস্থিতিতে পুরুলিয়ার গ্রামাঞ্চলে ভেঙে যাওয়া অর্থনীতি যেন খানিকটা চাঙ্গা হল।
এ প্রসঙ্গে পুরুলিয়ার লোকসংস্কৃতি গবেষক সুভাষ রায় বলেন, “মনসা পুজো পুরুলিয়ার অন্যতম প্রধান উৎসব। চাষ শেষে মানুষ আনন্দে মাতেন। তাই হাঁস বলি দিয়ে মা মনসার আরাধনা করে থাকেন। হাঁসই মা মনসার প্রধান নৈবেদ্য। গত দু’দিনে এই জেলায় দশ লক্ষের বেশি টাকার হাঁস বিক্রি হয়েছে।” জানা গিয়েছে, গত দু’দিনে এক–একটি হাঁস আড়াইশো থেকে সাড়ে তিনশো টাকায় বিক্রি হয়েছে। লোকসংস্কৃতি গবেষকরা বলছেন, মনসা পুজো আগে এই জেলার কয়েকটি জনজাতির মধ্যে হত। কিন্তু এখন এই জেলার প্রায় সকল বাসিন্দাই সর্প দেবীর আরাধনা করে থাকেন। আর এবার কোভিড পরিস্থিতিতে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হাঁস বলি দেওয়ার ধূম। তবে বাজারে ভিড় হলেও মনসা মণ্ডপগুলিতে কিন্তু একেবারে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পুজো পাঠ হয়। কাশীপুরের ধ–বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা হরিপদ মাহাতো বলেন, “হাঁস বলি হবে না তা কী করে হয়? মারণ ছোঁয়াচে রোগ এই উৎসবে থাবা বসাতে পারেনি।”
ছবি: সুনীতা সিং
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.