বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: ছিল বড় মাছ কিংবা পাঁঠার পিত্ত। কিন্তু, সেটাকেই বেমালুম ভল্লুকের পিত্ত বলে পাচার করে দিচ্ছে নকল বন্যপ্রাণজাত সামগ্রীর চোরকারবারীরা। ম্যাজিক? একেবারেই নয়। রাসায়নিকের কেরামতি। বিষয়টি জানতে পেরেই নড়েচড়ে বসেছে বন দপ্তর। উত্তরবঙ্গ জুড়ে শুরু হয়েছে তল্লাশি। বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের বক্তব্য, ‘নকল ভল্লুকের পিত্ত পাচারের খবর পেয়েছি। রাজ্য জুড়ে বন দফতরের কড়া নজরদারির কারণে এখন বন্যপ্রাণজাত সামগ্রী পাচার সম্ভব হচ্ছে না। তাই কিছু দুষ্কৃতী নকল কারবার শুরু করেছে। সেদিকেও নজর রাখা হয়েছে।‘
[রাজ্যে এবার থাবা বসাল ‘রবার আটা’, আতঙ্কে কালিম্পংয়ের বাসিন্দারা]
পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা উত্তরবঙ্গ। শিলিগুড়ি করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে বন্যপ্রাণী বিভিন্ন দেহাংশ পাচার ঘটনা নতুন নয়। গণ্ডারের খড়গ কিংবা হাতের দাঁতই শুধু নয়, ভল্লুকের পিত্ত-ও দামী মোড়কে বোতলবন্দি হয়ে চোরাপথে পাচার হয়ে যাচ্ছে চিনে ও তিব্বতে। কিন্তু, সেই কারবারেও এখন নকলেরই রমরমা। বন দপ্তর সূত্রে খবর, কুকুর বা মাছের পিত্তকে রাসায়নিক ব্যবহার করে ভল্লুকের পিত্ত বলে যেমন পাচার করে দেওয়া হচ্ছে, তেমনি কুকুরে চামড়ায় একই কায়দায় কালো ছোপ দাগ কেটে নকল চিতাবাঘের চামড়াও তৈরি করা হচ্ছে! বনকর্তাদের দাবি, বন্যপ্রাণজাত সামগ্রী চোরাকারবারে এখন আসল জিনিস আর হাতবদল হয় না। নকলের সেই তালিকায় নয়া সংযোজন ভল্লুকের পিত্ত।
[শারীরিক সম্পর্কে অক্ষম স্বামী, ছেলেকে বিষ খাইয়ে আত্মঘাতী স্ত্রী]
কিন্তু, ঠিক কীভাবে মাছ ও পাঁঠা পিত্ত থেকে ভল্লুকের পিত্ত তৈরি করা হচ্ছে? বন দপ্তরের কর্মীরা জানিয়েছে, মূলত উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির, ওদলাবাড়ি, বানারহাট, ঝালং, আমবাড়ি-ফালাকাটা, আলিপুরদুয়ারের জয়গাঁ ও বীরপাড়া থেকে নকল ভল্লুকের পিত্ত পাচারের কারবার চলে। প্রথমে বিভিন্ন বাজার থেকে পাঁঠা ও বড় মাছের পিত্ত সংগ্রহ করে আনে চোরাকারবারীরা। তারপর সেই পিত্তের সঙ্গে রাসায়নিক মিশিয়ে ভল্লুকের পিত্তের মতো রং ও গন্ধ আনা হয়। বিশেষ মোড়কে বোতলবন্দি হয়ে সেই নকল ভল্লুকের পিত্ত পৌঁছে যায় চিন ও তিব্বতে। বলাই বাহুল্য, খোলা বাজার মাছ ও পাঁঠার পিত্তির দাম সামান্যই। কিন্তু, সেই পিত্ত যখন রাসায়নিক মিশিয়ে ভল্লুকের পিত্ত হিসেবে পাচার করা হয়, তখন তা হয়ে ওঠে মহার্ঘ। বনকর্মীদের দাবি, মাত্র এক গ্রাম নকল ভল্লুকের পিত্তের দাম তিন থেকে চার হাজার টাকা।
[বিয়ের দিনে পাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু, মর্মান্তিক পরিণতিতে হতবাক পরিবার]
উত্তরবঙ্গে ভালুকের পিত্ত পাচারের ঘটনা প্রথম নজরে আসে ১৯৯৫ সালে। নেপালে পাচারের পথে শিলিগুড়ি থেকে ভল্লুকের পিত্ত উদ্ধার করেন বনকর্মীরা। পরবর্তীকালে দিল্লির ‘ওয়াইন্ড লাইফ প্রোটেকশন সোসাইটি’-র অনুসন্ধানে উঠে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, শিলিগুড়ি, দার্জিলিং ও ঝালং এলাকায় ভল্লুকের পিত্ত পাচার চক্র বেশ সক্রিয়।
[মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চে আচমকা উঠে পড়েছিলেন, সেই রাবেরা এখন কোথায়?]