ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, বোলপুর: সময়টা আশ্বিনের শারদপ্রাত। কিন্তু আলোকমঞ্জির এখনও বেজে ওঠেনি। তাতে কী? আকাশ মাঝেমধ্যে মুখ ভার করে ধূসর রং ধরলেও, কয়েক পশলা বৃষ্টির পর গগন যেন শরৎ সোহাগী। পেঁজা তুলোর মতে মেঘে ছেয়ে আছে আকাশ। কল্পচোখে দেখলে ঠিক বোঝা যায়, দেবী দুর্গা (Durga Puja) আসছেন ছেলেমেয়েকে নিয়ে, বাপেরবাড়িতে। তাঁর আগমন পথের চিহ্ন দেখতে পান হয়ত কবি। কিন্তু এই করোনা (Coronavirus) কালে আর ঘরের মেয়ে ঘরে আসার তেমন আনন্দ কোথায়?
গত বছরের মতো এ বছরও জাঁকজমকপূর্ণ দুর্গাপুজোর প্রস্তুতিতে ভাঁটা পড়েছে। করোনা আবহে পুজো কমিটিগুলি বাজেটে কাটছাঁট করেছে। তেমন চাহিদা নেই প্রতিমা শিল্পীদের। ডাকের সাজ বানানো শিল্পীদের বরাত জুটেছে যৎসামান্য। তবু এতদিনকার অভ্যেস, পুজো এলেই শোলা-জরি নিয়ে কাজ শুরু করে দেন তাঁরা। বোলপুরের (Bolpur)সুরুল গ্রামে গিয়ে সেই দৃশ্যই দেখা যাচ্ছে।
বোলপুরের সাজানো গ্রাম সুরুলে নিজের ঘরে বসে আপন মনে শোলা কেটে চলেছেন বছর ষাটেকের কমল মালাকার। একটা সময় ছিল, যখন দম ফেলার ফুরসত মিলত না। এতদিন পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি ২০-৩০ জন যুবক, যুবতী কাজ করতেন। এঁদের বেশ কয়েকজন বিশ্বভারতীর কলাভবনের ছাত্রছাত্রী। বাইরে থেকে শিল্পীরা আসতেন সুরুলে শোলার কাজ করতে। তাঁদের সঙ্গে কমল মালাকার মনের আনন্দে তৈরি করতেন একের পর এক শোলার ডাকের সাজ।
এখন সেই জায়গা দখল করেছে থার্মোকল। তাতে খরচ, শ্রম – দুটোই কম। তার উপর গত দু’বছর ধরে করোনার প্রভাব। যেটুকু বেঁচে ছিল সেই শোলাশিল্প এখন তাই বিলুপ্তির মুখে। কিন্তু তাতে কী? একা ‘জলসাঘর’ আগলে আজও নিজের মনে শোলা কেটে চলেছেন তিনি। তৈরি করছে দুর্গার মুখ।
তাঁর কয়েক পুরুষের পৈতৃক পেশা। ছাড়তে চাইলেই কি ছাড়া যায়? চশমার মোটা ফ্রেম মুছতে মুছতে কমলবাবু বলেন, ”সব ছাড়তে পারব। কিন্তু শোলার কাজ ছেড়ে দিতে পারব না। আমার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে শোলার কাজ।” তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি বিশ্বভারতীর কলাভবন থেকে পড়াশোনা করেছেন। তারপরে শোলার কাজে নেমে পড়ছেন। ছেলেও পড়াশোনা করে গুজরাটে কাজ করতেন। কিন্তু করোনা সব শেষ করে দিয়েছে। ছেলে ফিরে এসেছেন সুরুল গ্রামে। বাবার সঙ্গে শোলার কাজ করছেন। করোনার আগেও রমরমা কারবার ছিল তাঁদের। পুজোর মরশুমে কাজের চাপ এতটাই বেড়ে যেত যে অনেক সময় বরাত ফিরিয়ে দিতে হত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.