Advertisement
Advertisement

ফড়েদের দাপটে বর্ষশেষে সর্বোচ্চ ডিমের দাম

জোগান এত যে বিদেশে রফতানির কথা ভাবা হচ্ছে৷ তাও কেন কমছে না ডিমের দাম?

Egg price is high despite enough supply
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 25, 2016 11:30 am
  • Updated:December 25, 2016 11:30 am

তরুণকান্তি দাস: পার্ক স্ট্রিট টার্কি রোস্টের মেজাজে৷ হরেক কিসিমের কাবাবের ডালি নিয়ে হাজির রেস্তোরাঁগুলি৷ ধোঁয়া ওঠাচ্ছে চিকেন তন্দুরি, সিজলার্স৷ কিন্তু ডিম? বাঙালির নানা পদের বন্ধু? মটরশুঁটির কচুরি দিয়ে ডিমের কষা৷ ওমলেট বা পোচ? বর্ষশেষে এই সামান্য মেনু এখন প্রশ্নচিহ্নের মুখে, কেননা বাঙালির অতিপ্রিয় ডিমের দাম যেন মধ্যবিত্তের গলায় পোঁচ হয়ে বসছে৷ পোলট্রির একটি ডিম পেতে গুনে দিতে হচ্ছে সাড়ে ছয় টাকা! গত কয়েকবছরের মধ্যে এই দাম সর্বোচ্চ৷ ফলে আপাতত ক্রিসমাসের ক্যারলের মুখে বহুচর্চিত ‘ডিম আগে না মুরগি আগে’র মতো প্রশ্নে দাঁড়ি টেনে বলা যায়, মুরগি আগে৷ অন্তত দামের নিরিখে৷ এদিকে পাইকারি বাজারে দাম কম৷ শুধু খোলা বাজারেই রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী৷

কিন্তু কেন? বাজার বলছে, জোগান যথেষ্ট৷ রাজ্যে ঢোকার জন্য অন্তত ১০০টি ট্রাক ডিম নিয়ে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন জাতীয় সড়কের ধাবা অথবা নানা স্থানে৷ আসলে, নগদ জোগানের সামান্য সমস্যাকে হাতিয়ার করে সক্রিয় মজুতদারদের একাংশ৷ তাই চড়চড়িয়ে বাড়ছে দাম৷ শীতেও সবজির দাম চড়া৷ মাছের বাজারও তেমন কমেনি৷ তার উপর বাঙালির ডিম-বিলাসে হিমেল পরশের আবহের মধ্যে দামের গনগনে আঁচ৷ রাজ্য পোল্ট্রি ফেডারেশনের কর্তা মদনমোহন মাইতি বলেছেন, “খোলা বাজারে ছয় থেকে সাড়ে ছয় টাকা দাম কিন্তু মানা যায় না৷ কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত৷ পাইকারি বাজারে তো এখন দাম চার টাকা পঁচিশ পয়সা৷ কত লাভ করতে চান খুচরো ব্যবসায়ীরা?”

Advertisement

শীতে সংরক্ষণের সুবিধা থাকায় বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় এই সময় দাম এমনিতেই একটু বাড়ে৷ তবে এবার সেই বৃদ্ধির হার একটু বেশি এবং অস্বাভাবিক বলেই ব্যবসায়ীদের দাবি৷ ডিম কিনতে গিয়ে মানুষও নাকাল হচ্ছেন৷ ন্যাশনাল এগ কো-অর্ডিনেশন কমিটির (এনইসিসি) নির্ধারিত দামকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে বাজারের খুচরা মূল্য৷ মঙ্গলবার এনইসিসি-র নির্ধারিত সর্বোচ্চ দাম ছিল শতকরা ৪৪২ টাকা৷ জোগান যথেষ্ট তাই ৪২৫ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বাজারে বিকিয়েছে ডিম৷ কিন্তু শিয়ালদহের পাইকারি বাজারের সঙ্গে চরম অসঙ্গতি খোলা বাজারের৷ সেই দাম কোথাও সাড়ে পাঁচ টাকা, কোথাও ছয় থেকে সাড়ে ছয় টাকা৷ অর্থাৎ একটি ডিম বিক্রি করে পাড়ার দোকানদার ঘরে তুলছেন প্রায় দু’টাকা পর্যন্ত৷ বাজার নিয়ন্ত্রণে তাঁদের নির্দেশ উপেক্ষিত হচ্ছে বলে ক্ষোভ জানিয়ে এনইসিসি-র এক কর্তা বলেন, “কয়েকদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যায়৷ জোগানে তো ঘাটতি নেই৷” বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের কিছু করণীয় নেই বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে৷

Advertisement

রাজ্যে ডিমের চাহিদা মেটায় মূলত অন্ধ্রপ্রদেশ৷ তামিলনাড়ু থেকেও ডিম ঢোকে পশ্চিমবঙ্গে৷ দেশের বাজারের দাম নির্ধারণে নিয়ন্ত্রক হল এনইসিসির তামিলনাড়ুর নমক্কাল জোন৷ তাদের এদিনের শতকরা ধার্য মূল্য হল দিল্লিতে ৪১৫, চেন্নাইতে ৪১০, মুম্বইতে ৪৩১, কানপুরে ৪১৯ এবং পশ্চিমবঙ্গে ৪৪২ টাকা৷ রাজ্যে মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বর্ধমান জেলায় অনেকটা ডিম উৎপাদন হলেও তা মূলত স্থানীয় চাহিদা মেটায়৷ সব মিলিয়ে মোট চাহিদার মাত্র এক শতাংশ উৎপাদন হয় রাজ্যে৷ এই অবস্থায় ভরসা সেই দক্ষিণ ভারত৷ আর নোট বাতিলের গপ্পো ফেঁদে এক শ্রেণির ফড়ে ডিম মজুত করে ফায়দা তুলছেন৷ রাজ্যে মোটামুটি প্রতিদিন প্রায় একশো ট্রাক ডিম ঢোকে৷ প্রতিটিতে থাকে দুই লাখ ডিম৷ শুধু শিয়ালদহ বাজারে প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৪টি গাড়ি ঢোকে অন্ধ্র থেকে৷ প্রতি গাড়িতে থাকে দুই লক্ষ ডিম৷ মদনমোহনবাবু বলেন, “এত উৎপাদন যে বিদেশে ডিম রফতানির কথা ভাবতে হচ্ছে৷ এখন কম করে দিন ছয়েকের স্টক রয়েছে৷ তবু দাম না কমা তো উদ্বেগের৷ ক্ষতি ক্রেতার৷ ব্যবস্থা নিক সরকার৷”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ