সৈকত মাইতি, তমলুক: পুত্রহারার স্মৃতি এখনও দগদগে। তবুও কন্যাস্নেহে, নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নিজের বউমার বিয়ে দিলেন শ্বশুরমশাই স্বয়ং। সোমবার রাতে ইদের মাঝেই এমন ঘটনা চাক্ষুষ করে আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন বিয়েবাড়িতে আসা অতিথিরাও। সকলের মাঝেই মা ভবতারিণীর সামনেই পুত্রবধূকে আশীর্বাদ সারলেন পাঁশকুড়ার মুকুন্দ মাইতি।
এই সেদিনের কথাই। বছর আড়াই আগে সাতপাকে বাঁধা পড়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরা ব্লকের বাড়জিশুয়া গ্রামের অমিত মাইতি। সুখেই কাটছিল নবদম্পতির জীবন। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানেই মর্মান্তিক পরিণতি ঘটে যায় দুই পরিবারেই।
[ আরও পড়ুন: চিকিৎসকের পরিবর্তে ওঝার দ্বারস্থ সর্পাঘাতে আক্রান্ত নাবালিকা, টানাপোড়েনে মৃত্যু ]
গত ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাস। মাইসুরু থেকে হাওড়া মাইসুরু এক্সপ্রেসে চড়ে কাজ সেরে বাড়ি ফেরছিলেন অমিত। পথে ওড়িশার ভুবনেশ্বরে ট্রেনেই অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যু হয় তাঁর। কান্নায় ভেঙে পড়ে দুই পরিবারই। শোকের ছায়া নেমে আসে এলাকাজুড়ে। কিন্তু ছেলের এই শোকের মুহূর্তেও কোনভাবেই ভেঙে পড়েননি মুকুন্দবাবু। পুত্রবধূকে কাছ ছাড়া করেননি তিনি। প্রায় সাত মাস হল নিজের মেয়ের মতোই মুকুন্দ মাইতি বউমাকে সযত্নে বাড়িতে রেখেছিলেন। অবশেষে নিজের উদ্যোগেই পাঁশকুড়া ব্লকের শ্যামসুন্দরপুর পাটনা এলাকার বাসিন্দা স্বপন মাইতির সঙ্গে বউমার বিয়ের সম্বন্ধ করেন তিনি।
সোমবার, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়ার ভবতারিণীর মন্দিরে আয়োজন করা হয় চারহাত এক করার অনুষ্ঠান। সকল দুঃখ দূরে সরিয়ে বউমাকে নিয়ে পাঁশকুড়ার এই জনপ্রিয় মন্দিরে এসে হাজির হন মুকুন্দবাবু ও তাঁর পরিবারের লোকজনেরা। রাতেই সময় মতো উপস্থিত হয় পাত্রপক্ষও। স্বভাবতই পাঁশকুড়ার ভবতারিণী মন্দির প্রাঙ্গণ যেন এদিন এক অন্যমাত্রা পায়। দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূরে সরিয়ে বিয়ের পাশাপাশি ঘটা করে বউভাতেরও আয়োজন করা হয়। মেনুতে ছিল মাছ, মাংস, চিংড়ি, পোস্ত থেকে দই, মিস্টি সবই। আর সেখানেই চারিদিকে আলোর রোশনাই চোখের জলে বউমাকে বিদায় দেন মুকুন্দবাবু। জীবনে চলার পথে নতুন করে সঙ্গী খুঁজে পেল উমা। এমন ঘটনা যা সচরাচর দেখা যায় না বললেই চলে।
[ আরও পড়ুন: ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ না পেয়ে কিশোরীকে খুন, আসানসোলে উদ্ধার অর্ধনগ্ন দেহ ]
উমা এদিন বলেন, “এক সময় যখন সমাজ, সংসারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল তখন নিজের মেয়ের মতোই আমাকে আগলে রেখেছিলেন উনি। সাহস জুগিয়েছিলেন। প্রেরণা জুগিয়েছিলেন। তাই আমার জীবনে উনি শুধু আমার শ্বশুরমশাই নন, বাবাও। সব সময়ই পিতৃস্নেহে আমাকে মেয়ের ভালবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। এই দিনগুলি আমি কখনওই ভুলব না।” এদিন চোখের জলে বউমাকে বিদায় জানিয়ে মুকুন্দবাবু বলেন, “আজকের দিনে ছেলের কথা খুবই মনে পড়ছে। তবুও বউমার ভবিষতের কথা ভেবেই নতুন করে বিয়ে দিয়েছি আমরা।”