রাজা দাস, বালুরঘাট: চির দিন কাহারও সমান নাহি যায়। জগৎ সংসারের এই নীতিবাক্যটি বছর পনেরোর বিলাসীর জীবনে যে এভাবে সত্যি হয়ে উঠবে তা কে জানত? এই তো মাসকয়েক আগের কথা। তখনও আড়াই-তিন কিলোমিটার সাইকেলে চেপে স্কুলে আসত এই কিশোরী। কিন্তু আচমকাই ছন্দপতন। মায়ের মৃত্যুতে বাবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। এরপরই আসে আরেক ধাক্কা। দিদিমার আশ্রয়ে থাকা মেয়েটি জটিল স্নায়ুরোগের শিকার হয়। আর্থিক প্রতিকূলতার কারণে নাতনির চিকিৎসা করাতে পারছেন না দিদিমা। ফলে বালুরঘাট ব্লকের শিবরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দিনমজুর পরিবারটি মেয়েকে বাঁচাতে এখন দোরে দোরে সাহায্যের আরজি জানাচ্ছেন তিনি।
[জলপাইগুড়ির হনুমান মন্দিরে পূজিত হন নেতাজি]
স্নায়ুরোগের সুষ্ঠু চিকিৎসা না হওয়ায় বাড়িতে ধীরে ধীরে পঙ্গুত্বের দিকে ঢলে পড়ছে বিলাসী। বালুরঘাট ব্লকের শিবরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দিনমজুর পরিবারের মেয়ে বিলাসী স্থানীয় খাদিমপুর মহিলা উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ত। কিছুদিন আগে মা সকালী বর্মণের মৃত্যু হয় ক্যানসারে। জীবনের এই প্রান্তে এসে স্ত্রীকে হারিয়ে বাবা বিনয় বর্মন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ঘটনার পরেই তিনি বিবাগী হয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যান। ছোট নাতনি আগে থেকেই দিদিমার কাছে থাকে। এবার বড় নাতনি জটিল অসুখে পড়ায় তাঁকেও গোপীনগরে নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন দিদিমা সান্ত্বনা বর্মণ।
একদিন হঠাৎ জ্বর। বিলাসীর সারা শরীর ক্রমশ ফুলতে শুরু করে। দেহের বিভিন্ন গাঁটে অসহ্য যন্ত্রণা। দিন দিন শুকিয়ে যেতে থাকে সে। প্রথমে বালুরঘাট হাসপাতাল ও পরে একাধিকবার এক চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে দেখিয়েও কোনও লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা বিলাসীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যেতে বলেছিলেন। চিকিৎসকরা বিলাসীকে ওষুধ দিলেও ঠিক কী রোগে সে আক্রান্ত সে ব্যাপারে কেউ কোনও ধারণা দিতে পারেননি। নাতনির চিকিৎসায় দিদিমা সান্ত্বনা বর্মণ শেষ সম্বলটুকুও বিক্রি করেছেন। এখন গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছ থেকে মাসে প্রায় সাতশো টাকার ব্যথা কমানোর ওষুধ কেনেন তিনি। যন্ত্রণার চিকিৎসা বলতে এইটুকুই।
এখন বিলাসী লাঠির সাহায্যে অসুস্থ শরীরটাকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় কোনওমতে টেনে নিয়ে চলে। অথচ মেয়েটি আগের মতোই স্কুলে যেতে, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিতে চায়। কিন্তু চিকিৎসার পথে একমাত্র অন্তরায় আর্থিক প্রতিকুলতা। দিদিমা সান্ত্বনা বর্মণের কথায়, রোজ মুড়ি ভেজে দু-মুঠো খাবার ও ব্যথার ওষুধ জোগাড় করছি। কারও সাহায্য না মিললে বিলাসীর চিকিৎসা হবে না। অসহায়ভাবে সারাটা জীবন পঙ্গু হয়েই কাটিয়ে দিতে হবে।
[হাসপাতালের বকেয়া মিটিয়ে খড়গপুরের যুবককে বাড়ি ফেরালেন পরিবহণমন্ত্রী]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.