Advertisement
Advertisement
জখম হাতি

কুয়োয় পড়ে গুরুতর আহত হাতি, মাটি কেটে বেরনোর পথ করে দিলেন বনকর্মীরা

সাড়ে ৫ ঘণ্টার চেষ্টায় হাতিটি উদ্ধার হয়।

Elephant fell into a abandoned well in Bagrakot, Jalpaiguri
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:October 26, 2019 10:27 am
  • Updated:October 26, 2019 3:47 pm

অরূপ বসাক, মালবাজার: দলছুট হয়ে গোবর গ্যাস ভরতি পরিত্যক্ত কুয়োয় পড়ে গিয়েছিল একটি হাতি। জলপাইগুড়ির বাগরাকোটের তারঘেরা রেঞ্জের ওই গভীর কুয়ো থেকে কীভাবে তাকে উদ্ধার করবেন, তা নিয়ে বেজায় চিন্তা ছিল বনকর্মীদের। সাতসকালে এমন ঘটনায় প্রশাসনের সর্বস্তরের আধিকারিকরাই হাজির হন ঘটনাস্থলে। পৌঁছে যান পশু চিকিৎসকও। এদিকে, দীর্ঘক্ষণ খাবার না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে হাতি। শারীরিক অবস্থারও অবনতি হতে থাকে। শেষমেশ দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় তাকে উদ্ধার করে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার পর হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন সকলে।

শুক্রবার গভীর রাতে তারঘেরা রেঞ্জের জঙ্গল থেকে প্রায় ৩০টি হাতির একটি দল চলে আসে বাগরাকোট এলাকায়। বনকর্মীদের অনুমান, রাতে বাগরাকোট চা বাগানের বাসা লাইন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল হাতির দলটি। রাতেই ওই দলের মধ্যে থেকে একটি হাতি এলাকার পরিতক্ত কুয়োয় পড়ে যায় একটি স্ত্রী হাতি। হাতিটির বয়স আনুমানিক ৭ বছর। বাকি হাতিগুলি নিরাপদেই চলে যায় লিসরিভার চা বাগান এলাকায়। বনদপ্তর সূত্রে খবর, একসময়ে চা বাগানটি চালু থাকার সময়ে এখানে গোবর সার তৈরি হত এবং এই কুয়োটিতে তা মজুত থাকত। পরে চা বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জমানো গোবর সার থেকে ধীরে ধীরে গ্যাসে পরিণত হয়, কুয়োটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: চারদিন নিখোঁজ থাকার পর উদ্ধার যুবকের হাত-পা বাঁধা দেহ, ঘনীভূত রহস্য]

শনিবার সকালে হাতিটিকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা খবর দেন বনদপ্তরে। ভিড় জমাতে থাকেন উৎসাহী মানুষজন। ঘটনাস্থলে পৌঁছান তারঘেরা, মালবাজার এবং চেল রেঞ্জের রেঞ্জার এবং বনকর্মী। যায় মালবাজার থানার পুলিশও। লোকালয়ে কুয়োর মধ্যে থেকে হাতিটিকে উদ্ধার করতে বেশ বেগ পেতে হয় তাঁদের। তার আঘাত গুরুতর থাকায় বাড়তি সাবধানতা নিতে হচ্ছে। এছাড়া হাতিটিকে কুয়ো থেকে উদ্ধারের পর সে কোনওভাবে এত মানুষজন দেখে তাড়া করতে পারে, সেই আশঙ্কাও রয়েছে। তাই হাতিটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি দিয়ে বেহুঁশ করার পর উদ্ধারের পরিকল্পনা করেন বনকর্মীরা।  

Advertisement

এদিকে ভিড়ও জমতে থাকে। হাতিটি উদ্ধারের পর যাতে হামলা না চালায়, সেজন্য মাইকিং করে সকলকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘক্ষণ ভুখা পেটে থেকে হাতিও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাকে খাওয়ার জন্য একটি জলের বালতি নিজে নামিয়ে দিলে, তা দুমড়েমুচড়ে ফেলে সে। ঘটনাস্থলে ডাকা হয় পশু চিকিৎসক শ্বেতা মণ্ডলকে। তিনি হাতির অবস্থা দেখে চিন্তায় পড়েন। খাদ্য এবং অক্সিজেনের অভাবে সে নিস্তেজ হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত জেসিবি দিয়ে মাটি কেটে, দেওয়াল ভেঙে হাতির বেরনোর জন্য প্রশস্ত রাস্তা করে দেওয়া হয়।  হাতিটিও বেরিয়ে জঙ্গলের দিকে চলে যায়।

তারঘেরার রেঞ্জার শুভজিৎ মিত্র বলেন, ‘হাতিটি পরে দলের সঙ্গে মিশে যাবে। আমরা স্বস্তি পেলাম।’ পরিবেশপ্রেমী নফসার আলির কথায়, ‘হাতি জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে ঘোরা ফেরা করে।লোকজনের হাতি দেখার কৌতুহল থাকতে পারে।কিন্তু মানুষকে ভাবতে হবে যে হাতিদেরও নিরাপত্তা আছে।হাতিটি বিরক্ত হয়ে পাগলের মত ছোটাছুটি করলে কী হত ভেবে শিউরিয়ে উঠতে হয়।বনদপ্তরকে আরও বেশী সতর্ক হতে হবে।’  

[আরও পড়ুন: সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ ২ যুবক, মৃত্যু বলে আশঙ্কা পরিবারের]

সম্প্রতি রাজ্যের বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে লোকালয়ে হাতির দল ঢুকে পড়া ঘিরে সমস্যা বাড়ছে। একদিকে জঙ্গল ক্রমশ কমতে থাকায় খাবারের সন্ধানে নিজেদের এলাকা ছেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে বন্যপ্রাণীরা খেতের পর খেত ফসল নষ্ট করছে, কখনও বা সাধারণ মানুষজনের উপর হামলা চালাচ্ছে। আরেকদিকে, এদের ভয়ে জঙ্গল এলাকার বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে, ঘটছে দুর্ঘটনাও। তাতে যে শুধুই সাধারণ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে, তাও নয়। কখনও বিপন্ন হয়ে পড়ছে এই বন্যপ্রাণীরাও। মালবাজারের তারঘেরা বনাঞ্চলে হাতির এমন দুর্ঘটনাও তারই একটি উদাহরণ। মানুষ বনাম বন্যপ্রাণের মধ্যে অলিখিত একটা দ্বন্দ্ব চলছেই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ