Advertisement
Advertisement
তৃণমূলের দুর্নীতি

দুস্থদের অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলছে পঞ্চায়েত প্রধান, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব কৃষ্ণেন্দু

'দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থা হোক, তা না হলে তৃণমূলের বদনাম হবে', মন্তব্য প্রাক্তন মন্ত্রীর।

EX Minister Krishnendu Narayan Chowdhury complaints fraud
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:July 14, 2020 2:55 pm
  • Updated:July 14, 2020 2:55 pm

বাবুল হক, মালদহ: শিবির করে দুস্থ, অসহায় মানুষদের ডেকে তিনটি বেসরকারি ব‍্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিলেন তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান। কিন্তু ব‍্যাংকের পাশবুক ও এটিএম এবং জবকার্ড, সবই ছিল প্রধানের কবজায় বলে অভিযোগ। হঠাৎ লকডাউনের মধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা ঢোকে ওই সব অ্যাকাউন্টে। সেই টাকা আবার তুলে নিচ্ছেন কোটিপতি এক হোটেল ব‍্যবসায়ী। এমন অভিযোগ শুনে কৌতূহল বশতঃ ময়দানে নেমে পড়েন মালদহের তৃণমূল নেতা তথা রাজ‍্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি। তিনি জানতে পারেন, সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির টাকা দেদার ঢুকছে ওই সব অ্যাকাউন্টে। আর সেই টাকা জালিয়াতি করে তুলে নিচ্ছেন পঞ্চায়েত প্রধান এবং নিরঞ্জন আগরওয়াল নামের এক হোটেল ব‍্যবসায়ী।

এরপরই তথ‍্য ও প্রমাণ সমেত সরকারি টাকা লুঠের এমন বড়সড় চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মালদহের ইংলিশবাজার ব্লকের যদুপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা চার উপভোক্তা। এই কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠায় মালদহ জেলাজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দুর্নীতি ঠেকাতে দলের সর্বস্তরে সতর্ক করে দিয়েছেন, ঠিক তখনই নেত্রীর কথা মাথায় রেখে দলের পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের এই ধরণের বড়সড় দুর্নীতি সোমবার রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ফাঁস করেন মালদহের দাপুটে তৃণমূল নেতা কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি। মালদহের যদুপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের জহরাতলা-কৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা জান্নাতুল বিবি, ফাতেমা বিবিরা ধানচাষ করেন না। কখনওই রাজ‍্য সরকারের সহায়ক মূল্যে তাঁরা প্রশাসনের কাছে ধান বিক্রি করেননি। এক ছটাকও নয়। অথচ তাঁদের ব‍্যাংক অ্যাকাউন্টে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভাগ থেকে ধান বিক্রি বাবদ হাজার হাজার টাকা ঢুকে গিয়েছে। কিন্তু সেই টাকা তাঁরা ব‍্যাংক থেকে তুলে নিতে পারেননি। তার আগেই টাকা তুলে নিচ্ছে ভুয়া এক হোটেল ব‍্যবসায়ী গ্রুপ। যার নেপথ্যে সিলভার নামের এক পানশালার নিরঞ্জন আগরওয়াল বলে অভিযোগ।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ফাঁকা বাড়িতে গৃহশিক্ষিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা, অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য]

এনিয়ে চারটি লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। অভিযুক্ত তৃণমূলের প্রধান-সহ এক হোটেল মালিককে পুলিশ খুঁজছে। এদিন দুপুরে কালীতলা এলাকায় নিজের পার্টি অফিসে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি। সেখানেই ধান কেনা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন তিনি। কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “এই আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে তৃণমূল দলের যদুপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান, কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক এবং এক হোটেল ব‍্যবসায়ী, যিনি একজন চালকল মালিক। যুক্ত রয়েছেন বেশ কয়েকজন অফিসার।” প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবুর অভিযোগ, “উপভোক্তারা কেউই জানেন না যে তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার হয়েছে। এর সঠিক তদন্ত চাই। দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থা হোক। তা না হলে তৃণমূলের বদনাম হবে।”

Advertisement

এদিন চারজন অভিযোগকারীকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইংলিশবাজার পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ দাস। প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, যদুপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সাজ্জাদ আলির উদ্যোগে তিনটি ব্যাংকে জিরো ব্যালেন্সে শতাধিক মানুষের অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। কিন্তু কাউকেই পাশবই, চেক বই এবং এটিএম কার্ড দেওয়া হয়নি। এমনকী ওইসব উপভোক্তাদের কয়েকজনের মোবাইল নম্বর ব‍্যাংকে নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রেও কারচুপি করা হয়েছে। অ্যাকাউন্টে মোবাইল নম্বর বদল করা হয়েছে। একজন উপভোক্তা জান্নাতুল বিবি জানতে পারেন, তাঁর অ্যাকাউন্টে দু’দফায় প্রথমে ৫ হাজার টাকা এবং পরে ৮১ হাজার টাকা জমা পড়েছে। ব্যাঙ্কে সেই টাকার খোঁজ করতে গিয়ে ওই উপভোক্তা জানতে পারেন, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে সেই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

[আরও পড়ুন: ‘মানুষ গা ঘেঁষাঘষি করে থাকলে করোনা পালাবে’, তৃণমূল নেতার মন্তব্যে হাসির রোল]

কৃষ্ণেন্দুবাবু বলেন, “এই বিষয়টি আমার নজরে আসে। এরপরই খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন পঞ্চায়েতের প্রধান, শহরের এক হোটেল মালিক-সহ একটি চক্র। প্রায় কোটি টাকার সরকারি অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। গোটা বিষয়টি আমি দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনও ফল হয়নি। আমি চাই, গোটা ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।” তৃণমূলের যদুপুর-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সাজ্জাদ আলি বলেন, “গ্রামবাসীদের জিরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট খোলার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। পাশবুক ডাকঘরের মাধ্যমে ওদের পাওয়ার কথা। আমার কাছে থাকবে কেন? আর ধান কেনাবেচা নিয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হচ্ছে, সেটা একেবারেই ভিত্তিহীন। প্রশাসন তদন্ত করলে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।”

পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, অভিযোগ জমা পড়েছে। গোটা বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ মৌসম নুর বলেন, “এই ঘটনার ব্যাপারে আমাকে কেউ কিছু জানাননি। সংবাদমাধ্যমের মারফত বিষয়টি জানতে পেরেছি। তবে যে কোনও দুর্নীতিকে তৃণমূল দল প্রশ্রয় দেয় না। প্রশাসন ঘটনার তদন্ত করছে। দলগতভাবে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।”

[আরও পড়ুন: আমফানের ত্রাণ নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির সঙ্গে বিডিও’র সংঘাত, মহকুমা শাসককে চিঠি]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ