Advertisement
Advertisement

অর্থাভাবে বিয়ে বন্ধ, চার হাত এক হল বনদপ্তরের উদ্যোগে

বনবস্তিতে যেন এক ফালি আনন্দের চাঁদ।

Forest department took the challenge to marry off a poor girl in Siliguri
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 11, 2017 1:05 pm
  • Updated:September 20, 2019 11:33 am

ব্রতীন দাস, শিলিগুড়ি: ওদের বাস জঙ্গলে। হাতি ও বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে ঘর করতে করতে প্রকৃতির সঙ্গে বনবস্তির বাসিন্দাদের দারুণ সম্পর্ক। মনোরম পরিবেশ তাদের চোখের খিদে মেটালেও পেট যে ভরে না। কোনওরকমে দিন গুজরান হয় বনবস্তির বাসিন্দাদের। তেমনই এক পরিবারের প্রতিনিধি রূপালি রায়। অর্থের জন্য তরুণীর বিয়ে আটকে গিয়েছিল। বিবাহযোগ্যার জন্য আচমকা দেবদূতের মতো হাজির হয়েছিলেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। তাদের উদ্যোগে চার হাত এক হল।

বিয়ে 2

Advertisement

[যৌনপল্লির কচিকাঁচাদের সঙ্গে প্রথম বিবাহবার্ষিকী উদযাপন এই দম্পতির]

Advertisement

বনবস্তির একটি বাস্তুহারা পরিবারের সদস্য রূপালি। অভাবের জন্য ওই তরুণীকে শিলিগুড়ির শালুগাড়া বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল। উঠেছিলেন বৈকুণ্ঠপুর বন বিভাগের মলিঙ্গাঝোড়ায় এক আত্মীয়র বাড়িতে। সেখানেও যে চাল বাড়ন্ত। বিয়ের জন্য রূপালির তিন বছর ধরে কথাবার্তা চলছিল। বেলাকোবার সরকারপাড়ায় প্রশান্ত রায়ের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হলেও আর্থিক কারণে পরিবারকে পিছিয়ে আসতে হয়েছিল। শেষপর্যন্ত প্রতিবেশীরা সিদ্ধান্ত নেন চাঁদা তুলে বিয়ে হবে। বিয়ের আয়োজনের জন্য বস্তির বাসিন্দাদের এমন অহয়তার খবর পৌঁছেছিল বনদপ্তরের কাছে। এগিয়ে আসেনে বেলাকোবার রেঞ্জার সঞ্জয় দত্ত। মূলত তাঁরই বনকন্যা হিসাবে রূপালিকে পাত্রস্থ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। রবিবার বৈকুণ্ঠপুর বন বিভাগের উদ্যোগে মলিঙ্গাঝোড়ায় বসে বিয়ের আসর। আর পাঁচটা বিয়েবাড়ির মতো মণ্ডপ, বাজনা, খাবারের বন্দোবস্ত করা হয়। মাছ, মাংস, মিষ্টি ছিল। পাতে পেড়ে ৬০০ গ্রামবাসী ভোজ খান। বেলাকোবার রেঞ্জার সঞ্জয় দত্ত দাঁড়িয়ে থাকা কন্যা সম্প্রদান করেন। এমনকী ওই আধিকারিকের স্ত্রী নবদম্পতির জন্য রান্না করে দেন। সেই খাবারেই ভোজ সারেন রূপালি ও পাত্র প্রশান্ত।

[নবদম্পতিদের জন্য মোটা অঙ্কের বিমা, গণবিবাহের আসরে অন্য উপহার]

বিয়ে 3

আলো, প্যান্ডেল, বাজনা, খাওয়া-দাওয়া। এভাবে যে তাঁর বিয়ে হতে পারে তা ভাবতেই পারছেন না নববধূ। লাজুক রূপালি বলে ফেললেন, আমার স্বপ্নপূরণ হল। বনদপ্তর যেভাবে পাশে দাঁড়াল তাতে আমি অভিভূত। এসব বলতে বলতে রূপালির চোখে আনন্দাশ্রু। সেই আবেগ নিয়ে নববধূ বলে যায়, আমার বিয়ে এভাবে জাঁকজমক করে হবে তা স্বপ্নাতীত। প্যান্ডেল হবে। মাইক বাজবে, খাওয়া-দাওয়া। আক্ষরিক অর্থে সুখের স্বর্গে আছে রূপালি। তাঁর কাকা কালু রায় বলছেন গ্রামের মানুষ বেজায় খুশি।

[তাড়িয়ে দিয়েছে সন্তানরা, স্থানীয় যুবকদের হাত ধরেই বাঁচার পথ পেলেন বৃদ্ধ]

রূপালি-প্রশান্তর বিয়ে রূপকথার মতো হচ্ছে বনবস্তির বাসিন্দাদের। এমন একটা অনুষ্ঠানের সঙ্গে থাকতে পেরে তৃপ্ত রেঞ্জার সঞ্জয় দত্ত। তাঁর কথায় ,আমরা নানাভাবে বনবস্তির বাসিন্দাদের সাহায্য করি। এটি তারই অঙ্গ। খবর পেয়েছিলাম টাকার অভাবে মেয়েটির বিয়ে হচ্ছে না। ওদের বিপদে না দাঁড়ালে জঙ্গল কীভাবে রক্ষা পাবে বলুন। এই তাগিদ থেকে বনদপ্তরের এই উদ্যোগে ধন্য ধন্য রব বনবস্তিতে। কারণ এখানকার ভূমিপুত্ররা বন দপ্তরকে সবরকম সাহায্য করে। রাতদিন পাহারা দিচ্ছে। চোরাশিকারীদের খবর দেয়। বনকন্যার বিয়ে দিয়ে সেই ঋণ যেন খানিকটা শোধ হল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ