Advertisement
Advertisement
Himachal Pradesh

প্রথম ভারতীয় হিসেবে অনন্য সাফল্য, শেরপা ছাড়াই দুর্গম শৃঙ্গজয় বাংলার ৪ পর্বতারোহীর

অভিযানে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান এই চারজন, তবে শেষমেশ মিলল সাফল্য।

Four climbers from Bengal conquer Mount Ali Ratni Tibba without Sherpa | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 15, 2022 7:48 pm
  • Updated:September 15, 2022 10:04 pm

অর্ণব দাস, বারাসত: প্রথম ভারতীয় হিসেবে হিমালয়  (Himalaya) পর্বতশ্রেণির দুর্গম শৃঙ্গ ‘মাউন্ট আলি রত্নি টিব্বা’ জয় করে ফিরলেন বাংলার চারজন নিখোঁজ পর্বতারোহী। তাঁদের কীর্তিতে গর্বিত বাংলা। বৃহস্পতিবার বারাসতের (Barasat) হৃদয়পুরের বাড়িতে ফিরে এ কথাই জানালেন চিন্ময় মণ্ডল। পাড়া-প্রতিবেশী থেকে বন্ধুবান্ধব সকলেই এদিন শুভেচ্ছা জানাতে ভিড় করেছিলেন চিন্ময়ের বাড়ি। সকলের একটাই কৌতূহল, কীভাবে তাঁরা দুর্গম শৃঙ্গ জয় করলেন, সেই কাহিনি জানার। এত ক্লান্তির পরও সাফল্যের আনন্দে নিজেদের অভিযানের খুঁটিনাটি গল্প বললেন চিন্ময়।

শৃঙ্গজয়ের পর বাড়ি ফিরে মায়ের সঙ্গে চিন্ময়।

গত ৭ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সূর্য ওঠার পর হিমাচল প্রদেশের (Himachal Pradesh) ৪৭০০মিটার উচ্চতার সামিট ক্যাম্প থেকে টিম লিডার অভিজিৎ বণিক, চিন্ময় মণ্ডল, দিবস দাস এবং বিনয় দাস রওনা দেন মাউন্ট আলি রত্নি টিব্বার দিকে। তাঁরা শেরপা ছাড়াই বেরিয়ে পড়েন, যাকে পর্ব আরোহীদের ভাষায় বলা হয় – অ্যালপাইন স্টাইল। শেষবার চিন্ময়রা এই শৃঙ্গ জয় করতে যে রুট ধরে গিয়েছিলেন, এবার সেই রুট খুঁজে না পেয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রুট ধরে এগোতে শুরু করেন। ভেবেছিলেন বাকি রয়েছে আর প্রায় ৯০০মিটার উচ্চতায় ওঠা। তা দিনের দিন করেই তাঁরা ফিরে আসতে পারবেন। সেইমতো জল, শুকনো খাওয়ার নিয়ে গিয়েছিলেন। রাতের আগেই তাঁরা ফিরে আসতে পারবেন ভেবে নিয়ে যাননি স্লিপিং ব্যাগ, টেন্ট।

Advertisement

[আরও পডুন: এসএসসি দু্র্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়]

কিন্তু সূর্যাস্তের সময় হয়ে এলেও দেখা যায়, প্রায় ২০০ মিটার ওঠা বাকি তাঁদের। এদিকে জল, শুকনো খাবার প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। আবহাওয়া খারাপের জন্য সোলার সিস্টেম দিয়ে ওয়াকিটকিও চার্জ দেওয়া হয়নি। তাই নিচের সামিট ক্যাম্পে (Summit camp) শেরপাকে লাইট সিগন্যালের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তাঁরা সুস্থ আছেন এবং রাতে ফিরছেন না। যদিও শেরপা তা বুঝতে পারেনি। এদিকে থাকার মত কোনও শেল্টার তাঁরা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি থেকে অনেক নিচে নেমে গিয়েছে তা তারা বুঝতে পারছিলেন।

Advertisement

আনুমানিক রাত ৮টা নাগাদ কোনওমতে চারজনে থাকার একটি পাহাড়ের খাঁজ তারা খুঁজে পান। কিন্তু রাতে ঠান্ডা হাওয়ায় দাপটে তাঁরা কাবু হতে থাকেন। চিন্ময়ের কথায়, “পাথরের একটি ফাঁক দিয়ে এমনভাবে হাওয়া আসছিল যে আমাদের শরীর ছিঁড়ে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছিল। তখন একটি জ্যাকেট দিয়ে ওই জায়গাটা ঢেকে কোনওমতে জেগে রাত কাটাই।” খাবার বাঁচিয়ে রাখার জন্য সন্ধ্যার পর থেকেই খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন চিন্ময়রা। শেষে রাতের দিকে আধ লিটার জল মতো অবশিষ্ট ছিল। আর ছিল কিছু চকলেট (Chocolate) এবং শুকনো খাবার।

পাহাড়ের খাঁজে রাত্রিযাপন।

পরের দিন অর্থাৎ ৮ই সেপ্টেম্বর সূর্য ওঠার পর আনুমানিক সকাল ছ’টা নাগাদ তারা ফের পর্বত অভিযান শুরু করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা দুর্গম পথ অতিক্রম করে অবশেষে তারা পৌঁছান মাউন্ট আলি রত্নি টিব্বা শৃঙ্গে। তখন অবশ্য জয়ের আনন্দে তারা ক্লান্তি ভুলে গিয়েছিলেন। ঘন্টাখানেক সেখানে থেকে তারা সামিট ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে ফের রওনা দেন। একপ্রকার প্রায় না খেয়েই তারা দুর্গম পথ নেমে আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় পৌঁছান সেখানে। কিন্তু সেখানে গিয়েই তাঁরা দেখেন, শেরপা নেই অথচ রান্না করা রয়েছে। তখনও বুঝতে পারেননি যে তাঁদের নিখোঁজ হওয়ার খবর নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বিশ্রামের জন্য ৯ তারিখ পর্যন্ত তাঁরা সামিট ক্যাম্পেই থাকেন।

[আরও পডুন: ‘চা ভরতি কেটলি-কাপ, ঝালমুড়ি নিয়ে বেরিয়ে পুজোয় বিক্রি করুন’, পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর

১০ তারিখ সকালে তাঁরা সমস্ত জিনিসপত্র গুছিয়ে ক্যাম্প-১ এর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সেখানে তারা রাত আটটায় পৌঁছান। সেখানেও গিয়ে দেখেন কেউ নেই। সেদিন তাঁরা ক্যাম্প-১ থাকেন। পরের দিন ১১ তারিখ সকালে যখন তাঁরা নিচে নামতে শুরু করেন তখন তাঁরা দেখতে পান, খোঁজে দুটি চপার এসেছে। যদিও তাঁরা উদ্ধারকারী দলের সহযোগিতা নেননি। নিজেরাই নেমে ওইদিন বিকেলেই তাঁরা বেশ ক্যাম্পে পৌঁছন। এরপর মানালি এবং দিল্লি হয়ে বৃহস্পতিবার বারাসতের হৃদয়পুর শান্তিনগরের বাড়িতে ফেরেন যুবক চিন্ময় মণ্ডল। চিন্ময় বলেন, “আগে ২০১২ এবং ২০১৭ সালে মাউন্ট আলি রত্নি টিব্বা সামিট করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু না করেই ফিরে আসতে হয়েছিল। তাই এবার জেদ ছিল ওই দুর্গম শৃঙ্গ জয় করার। অবশেষে শেরপা ছাড়া প্রথম ভারতীয় হিসাবে ওই শৃঙ্গ জয় করে ফিরে সত্যিই খুব ভাল লাগছে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ