স্টাফ রিপোর্টার, মালদহ: শীতে কাবু শেয়ালের পাল। নদীর চর ছেড়ে এক ঝাঁক শিয়াল ঢুকে পড়েছে গঙ্গাপাড়ের গ্রামে। আতঙ্কে কাঁপছে গোটা দেওনাপুর। রাত জেগে মশাল জ্বালিয়েও শিয়াল তাড়ানো সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যেই শিয়ালের কামড়ে এক এক করে জখম হয়েছেন অন্তত ১৫ জন গ্রামবাসী। শিয়ালের তাণ্ডব রুখতে অবশেষে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু পুলিশেরও কিছু করার নেই। জেলা বন দপ্তরে একটি বার্তা পাঠিয়েই পুলিশও দায় সেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের।
মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার বাখরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দেওনাপুর গ্রামের পাশ দিয়েই বইছে গঙ্গা। অদূরেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। ওপারে পদ্মার চর। এপারেও শুখা মরশুমে চর জেগে উঠেছে গঙ্গার। জঙ্গল-আগাছায় ভরা গঙ্গার চরেই শয়ে শয়ে শিয়ালের আস্তানা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুমান, শীতের দাপটেই কাবু হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে ‘হুক্কাহুয়া’র দল। গোটা দেওনাপুর গ্রামের কার্যত দখল নিয়ে ফেলেছে শেয়ালেরা। প্রথম দিকে রাতে আক্রমণ চালিয়েছে। এবার দিনের আলোয় চলছে শিয়ালের হামলা। পথেঘাটে কাউকে একা পেলেই শিয়াল তাড়া করছে। এমনকী হামলা চালাচ্ছে বাড়িতেও।
স্থানীয় সূত্রের খবর, দিনকয়েকের মধ্যেই শিয়ালের কামড়ে জখম হয়েছেন ১৫ জন। তাঁদের মধ্যে তিনজন শিশুও রয়েছে। শিয়ালের কামড়ে জখমদের গঙ্গা টপকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান হাসপাতালে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে নরেন্দ্রনাথ সরকার (৬০), বিশ্বজিৎ মণ্ডল (৪০), নুর মহম্মদ (৬৪), ফিনারা বিবি (৩৫), সুশান্ত মণ্ডল (২৫), উজ্জ্বল সরকার (৩২), শিরীশ মণ্ডল (৬২)-সহ মোট ১২ জনের চিকিৎসা চলছে ধুলিয়ান হাসপাতালে। তাঁদের মধ্যে আরেফা খাতুন (৭) ও নুর শেখ (৩)-সহ জখম তিন শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গিয়েছে।
অনুপনগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজনকে এবং দু’জনকে বেদরাবাদ গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কারও হাতে, কারও পায়ে কামড় দিয়েছে শিয়াল। বাড়ির উঠোন বেঁধে রাখা ছাগলের দড়ি খুলতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয়েছে সাত বছরের শিশুকন্যা আরেফাকে। তার কোমরের নিচে কামড় দিয়েছে। এমনকী শিয়ালের দল শিশুটিকে টেনে নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা করে বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই গ্রামে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে শিয়ালের কামড় খেয়েছেন সুশান্ত মণ্ডল। তাঁর বাড়ি কালিয়াচক থানার গোলাপগঞ্জের গোঁসাইপাড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দা অনুপ মণ্ডল, কিশোর মণ্ডল, জমাদার শেখরা জানান, দেওনাপুরের তেলিপাড়া, ধাপিপাড়া, লালভুটিপাড়া, মণ্ডলপাড়া ও প্রহ্লাদ হাজিপাড়া দাপাচ্ছে শিয়ালের দল। উপদ্রব কোনওভাবেই রোখা সম্ভব হয়নি। একটি শিয়ালকে ক্ষুদ্ধ কিছু মানুষ পিটিয়ে মেরেছে। আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা অবশেষে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। তাঁরা বৈষ্ণবনগর থানার পুলিশের কাছে গণস্বাক্ষর সম্বলিত একটি পিটিশন পেশ করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.