Advertisement
Advertisement
Maldah

গ্রামে খুল্লমখুল্লা জুয়ার আসর, দেদার খেলছেন মহিলারাও, পাহারায় পুলিশ!

জনশ্রুতি অনুযায়ী, বেহুলা নদীর পাড়ে ঐতিহ্যবাহী ওই জুয়ার আসরের সঙ্গে জড়িয়ে মনসামঙ্গলের বেহুলা-লখিন্দরের কাহিনি।

Gambling in Maldah in day light as tradition, women also take part within police protection
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:December 7, 2024 9:29 pm
  • Updated:December 7, 2024 9:36 pm  

বাবুল হক, মালদহ: উৎসব মানেই যেন বেলাগাম উচ্ছ্বাস। দিনেদুপুরে খুল্লামখুল্লা জুয়ার আসর গ্রামে। পুরুষদের পাশাপাশি মনপ্রাণ খুলে জুয়া খেলছেন মহিলারাও। তাও আবার পুলিশি প্রহরায়! এমনই অভাবনীয় দৃশ্য মালদহের মোকাতিপুর কলোনি এলাকায়। বেহুলা নদীর তীরে জুয়ার টেবিল সাজিয়ে বসেছেন জুয়াড়িরা। সেখানেই দিনের আলোয় চলছে জুয়াখেলা। পুলিশ মহলে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, জুয়ার আসর বন্ধ করা দূর অস্ত। উলটে মহিলাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তাঁদের সর্বক্ষণ পাহারায় থাকতে হচ্ছে। আজব গাঁয়ের আজব খেল!

উপলক্ষ মুলোষষ্ঠী। ওল্ড মালদহের মোকাতিপুর কলোনিতে বেহুলা নদীর ধারে এই সময় মুলোষষ্ঠী পুজোর রেওয়াজ রয়েছে। আর এই পুজো ঘিরেই বসে জুয়ার মেলা। স্থানীয়দের দাবি, প্রায় চারশো বছরের পুরনো এই জুয়া খেলার মেলা আজও ঐতিহ্যবাহী। তাই পুলিশের ধরপাকড় চলে না। জুয়া খেলতে গিয়ে যাতে মহিলাদের কোনও রকম অসুবিধা না হয়, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বরং মোতায়েন থাকে পুলিশ। এটাই রেওয়াজ। পুরুষদের পাশাপাশি জুয়া খেলেন মহিলারাও। তাও আবার কোনও ক্যাসিনো বা ক্লাবে বসে নয়। শয়ে শয়ে মানুষের ভিড়ের মধ্যে প্রকাশ্যেই চলছে তাঁদের জুয়া খেলা। গৃহবধূ হেমলতা চক্রবর্তী বলেন, “আমরা জুয়াড়ি মেলায় এসেছি। জুয়া খেলছি।” আর এক গৃহবধূর আফসোস, “আমি জুয়া খেলেছি। কিন্তু জিততে পারিনি, হেরে গিয়েছি।”

Advertisement
ছোটদের সঙ্গে নিয়েই চলছে জুয়াখেলা।

স্থানীয়দের বিশ্বাস, এখানে পুজো দিয়ে লক্ষ্মীলাভ হলে সারাবছর সুখে কাটে পরিবার। আর এই বিশ্বাস থেকেই অসংখ্য জুয়ার বোর্ড বসে বেহুলা নদীর পাড়ে, আমবাগানে। পুরনো প্রথাকে স্বীকৃতি দিয়ে একটি দিনের জন্য জুয়া খেলায় ‘অঘোষিত ছাড়’ দেয় পুলিশ। মহিলারা জানান, এদিন সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জুয়া খেলার ‘অনুমতি ছিল। স্থানীয়দের অনেকেরই দাবি, মুলোষষ্ঠী পুজো দিয়ে ঘরের টাকাপয়সা জুয়ার বোর্ডে লাগান বাড়ির লক্ষ্মীরা। ঐতিহ্য মেনে ষষ্ঠীতলায় এই মেলা হয়। মালদহ ছাড়াও সংলগ্ন বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকেও জুয়াড়িরা এই মেলায় অংশ নেন। এদিনও মেলায় চলে তাস খেলা, গুটি খেলা ও ঘূর্ণমান লটারি-সহ বিভিন্ন ধরনের জুয়া। মেলা উদ্যোক্তাদের তরফে এক কর্তা জানান, প্রাচীনকাল থেকেই এই মেলা হয়ে আসছে। ঐতিহ্য মেনে মেলায় জুয়ার আসর চলে। বাড়ির সকলেই এখানে জুয়া খেলেন। কেউ আবার এই মেলাকে বলেন ‘লেউরি’ মেলা। এই মেলায় লেউরি নামের বিশেষ মিষ্টি বিক্রি হয়।

জনশ্রুতি রয়েছে, মনসামঙ্গলে চর্চিত বেহুলা সুন্দরী এখানকার এই নদী দিয়ে তাঁর স্বামীর মরদেহের সঙ্গে কলার ভেলায় ভেসে যাচ্ছিলেন। সেই সময় ষষ্ঠীতলার ঘাটে এক জুয়াড়ি জুয়া খেলে সর্বস্ব খুইয়ে কাঁদছিলেন। জুয়াড়িকে কাঁদতে দেখে বেহুলা সতী তাঁর হাতের সোনার বালা খুলে তাঁকে দিয়ে বলেছিলেন, এটা নিয়ে জুয়া খেললে সব ফিরে পাবেন। সেই বালা নিয়ে জুয়া খেলে ওই জুয়াড়ি হারানো সামগ্রী ফিরে পান। তার পর থেকেই এলাকায় জুয়ার মেলা বসছে বলে স্থানীয়দের বিশ্বাস। তাঁদের মতে, এই মেলায় জুয়া খেললে ধনসম্পত্তি বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। লেওরি কিনে বেহুলা নদীর জল স্পর্শ করে ষষ্ঠীতলায় পুজো দিয়ে তাঁরা জুয়ার আসরে বসেন। স্থানীয় মহিলারা সন্তানের মঙ্গলকামনার জন্য ষষ্ঠীতলার একটি গাছে মুলোষষ্ঠী পুজো করেন। পুজোপাঠের পর শুরু হয় জুয়া খেলা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement