Advertisement
Advertisement

আট বছর পর পংক্তিভোজন পুজোর সিঙ্গুরে

কথা রেখেছেন মা৷ এবার সন্তানদের পালা৷

Goddess Durga is returning to Singur.
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:September 9, 2016 10:13 am
  • Updated:September 9, 2016 10:34 am

তরুণকান্তি দাস: মা কথা রেখেছেন৷ এবার সন্তানদের পালা৷ দুর্গাপুরগামী জাতীয় সড়ক থেকে পিচের রাস্তাটা জয়মোল্লা হয়ে যেখানে গিয়ে বাঁক নিয়েছে তার একটু আগেই তৈরি হচ্ছে বিরাট মণ্ডপ৷ সিঙ্গুরে টাটাদের প্রস্তাবিত কারখানার জমিতে কাশফুলের দোলা৷ সেই কাশের ঢেউ বলছে, মা আসছেন৷ পুজোর গন্ধ মেখে অতি ব্যস্ত বেড়াবেড়ি পূর্বপাড়া৷ কে বলে কাশফুলের গন্ধ নেই!

এক কামরার ক্লাবঘর৷ যেমনটা হয় আর পাঁচটা গ্রামে৷ প্রায় ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া সবুজ রঙের পোঁচ নিয়ে দাঁড়িয়ে৷ তার সামনে এখন ভিড়৷ ছেলে-বুড়ো মিলে জটলা৷ যেবার অনিচ্ছুক চাষিদের জমি দখল নিতে নামল পুলিশ, সঙ্গী হল বাম সরকারের ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী, বাড়িতে ঢুকে উল্টে ফেলল ধানের মরাই, ভাতের থালা, সেবার আর পুজোয় মায়ের মুখ দেখতে পাননি কেউ৷ মা আসবেন কাদের কাঁধে চেপে? সন্তানদের মাজা ভেঙে গিয়েছিল যে! নিয়মরক্ষার পুজোয় ঘটস্থাপন হয়েছিল বটে, কিন্তু কী হয়, কী হয় ধুকপুকানি ছিল সবার বুকজুড়ে৷ নতুন জামা, পাটভাঙা শাড়ি বা খদ্দরের পাঞ্জাবির গন্ধ সেভাবে ছড়িয়ে পড়েনি পদ্মের সঙ্গে৷ বেলুন, হাওয়া মিঠাই, গরম চপ-বেগুনি-পাঁপড় বিকিকিনিও তো বন্ধ ছিল৷ বিজয়ায় সিঁদুরখেলা, মিষ্টিমুখ, একটা জিলিপিতে ‘যদি হয় সুজন, তেঁতুলপাতায় ন’জন’ বলে কামড় অথবা বাপ-ঠাকুর্দার আমলের রীতি মেনে পংক্তিভোজন, তা-ও তো শিকেয় উঠেছিল৷ এই গ্রাম তো তখন লড়াইয়ের ময়দান৷ যেন অসুরের সঙ্গে লড়ছে৷ কখন যেন পেরিয়ে গিয়েছে সাতবছর৷

Advertisement

টানা সাতটি শরত্‍ তো এভাবেই কেটেছে৷ কাশফুল মাথা তুলেছে জুলকিয়া নদীর দু’পারে৷ কিন্তু তখন তা সত্যিই যেন গন্ধহীন শুধু নয়, বর্ণহীন৷ আকাশে পেঁজা তুলা যেন বার্তাহীন মেঘমাত্র৷ তখন বাতাসে বারুদের গন্ধ৷ পথে ভারী বুটের আওয়াজ এবং পাড়ায় পাড়ায় কান্নার রোল৷ জমি হারানোর, পুলিশের লাঠির বাড়ি পিঠে পড়ার এবং বছরে একটিবার জগজ্জননীর মুখটুকুও না দেখার কষ্ট দলা পাকিয়ে উঠেছে প্রতি পদে, প্রতি ক্ষণে৷ বেড়াবেড়ি গ্রামের প্রদ্যোত্‍ দাস বলেন, “তবু চোখের জল চোখে শুকিয়ে, মনের মধ্যে লুকিয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছি সবাই৷ বারবার৷ দুর্গা নয়, মা লক্ষ্মীর কাছে আমরা তখন নিজেদের সঁপে দিয়েছিলাম৷ গ্রাম যেন লক্ষ্মীছাড়া না হয়৷” গেল বছর গ্রামের মানুষ সিদ্ধান্ত নিল, কোজাগরীর পাশাপাশি এবার মহিষাসুরমর্দিনীর মুখ দর্শন করব আমরা৷ তাঁর সামনে করজোড়ে বলব, “মা গো, বিচারের বাণী যেন নিভৃতে নীরবে না কাঁদে৷ জমি কেড়ো না৷ সাতবছর পর তোমার মুখ দেখলাম আমরা৷ জমি ফিরে পেলে তোমার আরাধনা আগামী বছর হবে আরও ধুমধাম করে৷ না হলে নিয়মরক্ষার ঘটস্থাপন৷” “এই মা তো জীবন্ত গো” বলে বৃদ্ধা কাননবালা বাগের হাত স্বতঃস্ফূর্তভাবে কপালে ঠেকে, “দুর্গা, দুর্গা৷ মাকে বলেছিলাম, আমরা তোমার সন্তান৷ জমিও তো আমাদের মা৷ তুমি থাকতে আমাদের আর এক মাকে কেড়ে নেবে ওরা? আমরা মাতৃহারা হব? দেখো মা৷”

Advertisement

কথা রেখেছেন মা৷ এবার সন্তানদের পালা৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সিঙ্গুরের জমি ফিরে পাওয়া এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা৷ কিন্তু মাতৃ-আরাধনার সময় যেন বয়ে না যায়৷ কৃষিজমি রক্ষা কমিটির লোকজন তাই বড় ব্যস্ত৷ কমিটির নেতা মানিক দাস বলেছেন, “মা আমাদের কথা শুনেছেন৷ কৃষ্ণনগরের শিল্পী প্রতিমা গড়ছেন৷ গতবারের চেয়ে বাজেট বেড়েছে৷ সবাই চারদিন একসঙ্গে বসে মণ্ডপে খাওয়া দাওয়া হবে৷ ভারমুক্ত আমরা৷ মায়ের ঋণশোধ করতে হবে তো৷” জমি ফিরে পাওয়ার লড়াই, জয় ফুটিয়ে তুলতে চলছে ভাল আলোকশিল্পীর খোঁজ৷ বেড়াবেড়ি পূর্বপাড়ায় সাড়ম্বরে মা আসছেন৷

সত্যি, আজ কী আনন্দ সিঙ্গুরের আকাশে বাতাসে৷ সাত যুক্ত এক, অর্থাত্‍ আট বছর পর৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ