চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: মজে যাওয়া নদীর হারানো গতিপথ ফেরাতে উদ্যোগী প্রশাসন। একশো দিনের প্রকল্পের হবে এই কাজ। ‘পাইলট প্রজেক্ট’-এর জন্য পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনি, জামুড়িয়া, অণ্ডাল, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ও পাণ্ডবেশ্বরকে বেছে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রাথমিক রূপরেখাও তৈরি করা হয়ে গিয়েছে বলে খবর। প্রকল্পের নাম ‘ঊষরমুক্তি’।
[সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এর খবরের জের, বাড়ির কাছে বদলি হলেন হুগলির সরকারি কর্মী}
জানা গিয়েছে, একেবারে গ্রামসংসদ স্তর থেকেই পরিকল্পনা শুরু হবে। হারানো গতিপথের খোঁজ পেতে গুগল ম্যাপের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। সেচ ব্যবস্থার উন্নতির স্বার্থেই এই উদ্যোগ। এই প্রকল্পে বিভিন্ন খাল, চেকড্যাম সংস্কারও করা হবে। সেচ ব্যবস্থার উন্নতিই এই প্রকল্পের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। জেলায় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার মিলিমিটার। জেলার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে দামোদর, অজয়। কিন্তু তাও জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচের জল পৌঁছায় না। সেচের হাল ফেরাতে জেলায় আগেই শুরু হয়েছে ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্পের কাজ। জলবিভাজিকা প্রকল্প, যোজনাতেও কাজ শুরু হয়েছে। বারাবনির বিডিও অনিমেষকান্তি মান্না বলেন, “এই ব্লকে জল সঙ্কট রয়েছে। বুজে যাওয়া নুনিয়া জোড়কে কাজে লাগানো হবে সেচ ব্যবস্থায়। বৃষ্টির জলকে রিজার্ভ করে তৈরি হবে ‘মাইক্রোওয়াটার শেড’। আটটি মাইক্রোশেড তৈরি হবে বারাবনিতে।” যার মধ্যে চারটের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানান তিনি। জামুড়িয়াতেও ছিল ১৩টি মাইক্রোওয়াটার শেড।
বিডিও অনুপম চক্রবর্তী বলেন, “আটটি জলবিভাজিকা চলে গিয়েছে পুরনিগম এলাকায়। সাতটি রয়েছে পঞ্চায়েত এলাকায়। চুরুলিয়া ও মদনতোড় এই দু’টি গ্রামপঞ্চায়েতে সব মাইক্রোওয়াটার শেডগুলি তৈরি হবে।” তিনি আরও জানান, জলাধার তৈরির পর এই প্রকল্পগুলি দেখাশোনা করবেন ধারাসেবকরা। যতগুলি গ্রামপঞ্চায়েত ততজন করে ধারাসেবক নিয়োজিত হবে। যেমন জামুড়িয়ায় ধারাসেবক থাকবেন আটজন আবার জামুড়িয়ায় এই সংখ্যাটি দুই থেকে চার জন হবে। দক্ষিণবঙ্গের মোট ছ’টি জেলায় ধারাসেবক নিয়োজিত হবে মোট ১১ হাজার ৩৭৫ জন। ১০০ দিনের এই প্রকল্পে পশ্চিম বর্ধমানে ১০৫টি মাইক্রোওয়াটার শেড তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ৮৪ হাজার ৬১ লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষের জন্য জল পৌঁছানো যাবে। জেলায় মোট ৩৬টি মাইক্রোওয়াটার শেডের কাজ শেষের মুখে। অণ্ডালে পাঁচটি, দু্র্গাপুর-ফরিদপুরে চারটি ও পাণ্ডবেশ্বরে চারটি, জামুড়িয়ায় তিনিটি, বারাবনিতে চারটি ওয়াটার শেড ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, ধারাসেবকদের দিয়েই কাজগুলি করানো হবে। ১০০ দিনের কাজে যেমন সুপারভাইজার থাকে সেরকম হবে ধারাসেবকদের নিয়োগ। এই প্রকল্পের জন্য বেতন নয়, ধারাসেবকরা ভাতা পাবেন। পশ্চিম বর্ধমানের ঊষরমুক্তি যোজনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মানস পাণ্ডা জানিয়েছেন, এই যোজনায় জমিতে জলের অভাব অনেকটাই মিটে যাবে। জানা গিয়েছে, বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘স্পিল চ্যানেল’। এই স্পিল চ্যানেল বা ছোট জলবিভাজিকাগুলি হারিয়ে যাওয়ার কারণে বড় নদী তার বয়ে আনা অতিরিক্ত জল ছড়িয়ে দিতে পারে না। যার ফলে বন্যার জল একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে, পর্যাপ্ত জলের অভাবে চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই জলাধার বাঁচিয়ে রাখতেই এই প্রকল্প।’’
[‘বৃদ্ধ’ যানের চলাচল রুখতে শহরের ৫০টি প্রবেশদ্বারে বসছে বিশেষ নজরদারি]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.